অনলাইন ডেস্ক:
বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের ((ইসি) অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। ফলে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে কোনো প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে না। কেউ প্রার্থী হতে চাইলে তাঁকে দল থেকে পদত্যাগ করতে হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, গত মঙ্গলবার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বৈঠকে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং জাতীয় সংসদের পুনর্নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি প্রণয়ন, ভবিষ্যতে ভোটাভুটির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটি গঠন, আগামী মার্চে মেয়াদ শেষে দলের সপ্তম জাতীয় সম্মেলন আয়োজন এবং নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের লাভ-ক্ষতির মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবাই একমত হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতির পর বর্তমান সরকার ও ইসির অধীন আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়া যায় না। কারণ, সব নির্বাচনের ফলাফলই পূর্বনির্ধারিত এবং ইসির ভূমিকাও একই থাকবে। তাই শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে এই সরকার ও ইসিকে বৈধতা দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। এই মনোভাবের কথা বিএনপি শিগগির ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর স্থায়ী কমিটির সদস্যরা দুবার বৈঠকে বসেছেন। দুবারই নতুন করে দল পুনর্গঠনের বিষয়টি গুরুত্ব পায়। মঙ্গলবারের বৈঠকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অংশ নেন।
ঐক্যফ্রন্ট গঠন নিয়ে আলোচনাজানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দুজন জ্যেষ্ঠ সদস্য নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁরা বলতে চান, যে আশা নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছিল, তা পূরণ করতে শীর্ষ নেতৃত্ব সমর্থ হননি। নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিনের চিত্রও ঐক্যফ্রন্ট ভালোভাবে প্রকাশ করতে পারেনি। এ ছাড়া সাত দফা দাবির ন্যূনতম পূরণ না হওয়ার পর নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন একজন নেতা। ওই নেতা বলেন, বলা হলো আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজ হয়নি। আন্দোলন গড়ে তোলা হয়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো সদস্য নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সামনের দিনগুলোতে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ঐক্যফ্রন্ট কী ভূমিকা রাখে, তা দেখবেন তাঁরা।
অবশ্য বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বর্তমান ভোটবিহীন সরকারকে পরাজিত করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০–দলীয় জোটের সেতুবন্ধ আরও দৃঢ় করার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তিনি গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘একটি কথা আপনাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, যারা যে কথাই মনে করুন না কোনো ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ২০–দলীয় জোট যখন গঠন হয়, তখন একই কথা ছিল। ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠন হয়, তখনো একই প্রশ্ন এসেছে। ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০–দলীয় জোটের মধ্যে যে সেতুবন্ধ, সেটার অবশ্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রয়োজন ছিল এবং প্রয়োজন আছে। এখন আরও বৃহত্তর ঐক্য প্রয়োজন।’
সপ্তম জাতীয় সম্মেলনআগামী মার্চ মাসে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। মেয়াদ শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে দলের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তাব করেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির সম্মেলন হয়।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সব পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে নতুন করে গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ের মতো এবার ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করার প্রস্তাব আসে। নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ বলেছেন, গত কয়েক বছরের আন্দোলন ও নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অনেক যোগ্য নেতা বেরিয়ে এসেছেন। সে অনুযায়ী তাঁদের সাংগঠনিক পদে আনতে হবে।
জানা গেছে, শুরুতে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) নতুন কমিটি গঠন করা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় ড্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ছাত্রদলসহ মেয়াদোত্তীর্ণ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করা হবে। ছাত্রদলের নেতৃত্ব নিয়ে কেউ কেউ হতাশা প্রকাশ করেন। ছাত্রদের হাতে নেতৃত্ব দিয়ে নতুন করে কমিটি করার প্রস্তাব আসে বৈঠকে।
বিষয়ভিত্তিক কমিটির প্রস্তাবজানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরার জন্য বিষয়ভিত্তিক কমিটি করার মতামত দেন একজন সদস্য। কমিটির প্রধান থাকবেন স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য। এই কমিটি সরকারের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তা তুলে ধরবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যখন-তখন যাতে দলের নামে সংবাদ সম্মেলন না হয়।
খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনখালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কোনো কর্মসূচি নেই। নেতারা বলেছেন, তাঁর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি না দিলে নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হবেন। তাঁদের ধরে রাখা কঠিন হবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিরূপ মন্তব্য শুরু হয়েছে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাবন্দী হন। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হবে।