সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার জগদীশ হত্যা মামলায় রিভিশন মঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

By daily satkhira

January 17, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর জগদীশ গোস্বামী হত্যা মামলা বিচার বিভাগীয় তদন্তের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত রিভিশন মঞ্জুর করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী এ রিভিশন মঞ্জুর করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের বিষ্ণুপদ গোস্বামীর ছেলে জগদীশ গোস্বামীকে ২৬ সেপ্টেম্বর ছয়ঘরিয়া সীমান্তে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে মৃত ভেবে ফেলে রেখে যায় তারই প্রতিবেশী শুকপদ গাইন, দূঃখীরাম গাইন, ছাতিয়ানতলা গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে জামায়তের সক্রিয় কর্মী রবিউল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও গোবিন্দকাটি গ্রামের চোরাচালানি রানা। পরদিন দুপুর দু’টোর দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জগদীশকে মৃত বলে ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মঞ্জু গোস্বামী বাদি হয়ে ১৩ উপরোক্ত পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পুলিশ ২২ অক্টোবর মামলা (৪২নং) রেকর্ড করে। আদালতের আদেশ সংক্রান্ত মামলা নথি থানায় পাঠানোর আগেই বাদি পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. শেখ আজাহারুল ইসলাম ও মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের এক কর্মচারির সহায়তায় বিচারকের আদেশ ও নথি কাটা ছেঁড়া করে কালীগঞ্জ থানার নলতা গ্রামের এশার আলী ও টাউদাসের নাম মামলায় সম্পৃক্ত করেন বলে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি বরাবর অভিযোগ করেন মঞ্জু গোস্বামী। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে সকল আসামীর বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ৩০ ডিসেম্বর বাদি আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল করলে ২০১৫ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা মামলার পূণঃতদন্তভার সিআইডিতে ন্যস্ত করেন। মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, ২০১৫ সালের ৭ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র সাতক্ষীরা শাখার পরিদর্শক আমীর হোসেন আসামী শুকপদ গাইন ও রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন করেন। আদালত ১৮ মে শুনানী শেষে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তিন দিনের রিমাণ্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। রাষ্ট্রপক্ষের ভারপ্রাপ্ত পিপি অ্যাড. শেখ আজাহারুল ইসলামের দায়িত্বপালনকালে গত বছরেরর ৮ জুন জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন লাভ করেন শুকপদ ও রবিউল। পরদিন জেলা কারাগারে জামিননামা পৌঁছানোর আগেই মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আমির হোসেন ওই দু’ আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি’র উপপুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ তোকাব আলীর মাধ্যমে তার অফিসে নিয়ে আসেন। তিনি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে গ্রেফতারকৃত আসামী রবিউল ইসলাম ও শুকপদ গাইন জগদীশ গোস্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করা ছাড়ায় আরো কয়েকজন জড়িতদের নাম জানায়। তাদের জামিনের বিরোধিতা করে আসামীরা ভারতে পালিয়ে যেতে পরে বলে মন্তব্য করেন। এমনকি আসামীরা বাদি ও সাক্ষীদের হুমকি দিতে পারে বলেও উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন মর্মে মঞ্জু গোস্বামী সিআইডি’র খুলনা বিভাগীয় পুলিশ সুপার নীহার রঞ্জন হাওলাদারের কাছে অভিযোগ করেন। আসামীরা বাদির শ্বাশুড়ীকে বাস চাপা দিয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় বীনা গোস্বামী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। পরবর্তীতে আমির হোসেন আসামীপক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে বাদি ও তার মামলা বর্ণিত সাক্ষীদের কাছ থেকে জবানবন্দি না নিয়ে গত বছরের ২৯ জুন চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যা’ গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশ পায়। ২১ সেপ্টেম্বর বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. বিবেকানন্দ রায় আদালতে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি নাররাজি শুনানী শেষে বিচারক বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হাবিবুল্লাহ মাহমুদ বিচার বিভাগীয় তদন্ত করলেও তার দায়েরকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ি মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। খারিজ আবেদনের বিরুদ্ধে বাদিপক্ষ আপত্তি দাখিল করেন। আপত্তি খারিজ হওয়ায় বাদি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন ৯৩/১৮ দাখিল করেন। বৃহষ্পতিবার শুনানী শেষে বিচারক রিভিশন মঞ্জুর করে পূণঃতদন্ত সম্পর্কিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারককে নির্দেশ দেন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু রিভিশন মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।