অন লাইন ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তাঁকে পলাতক দেখিয়েই গত বছরের নভেম্বরে চাঞ্চল্যকর এই মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
মামুনুর রশিদ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সক্রিয়া সদস্য বলেও উল্লেখ করেছে পুলিশের এই এলিট ফোর্স। রিপনকে জেএমবির খুবই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া ব্রিফিংয়ে।
র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকা থেকে ‘দুর্ধর্ষ’ এই জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকাগামী একটি বাস থেকে মামুনুর রশিদকে আটক করা হয়।
আজ রোববার এ ব্যাপারে র্যাবের পক্ষ থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে আসা গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, জেএমবির বর্তমান নেতৃত্বের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিপন। জেএমবির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যাদের ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এমন একাধিক নেতা তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তামিম ও রিপন ২০১৩ সালের দিকে নব্য জেএমবির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ‘দুর্বল’ জেএমবির পুনর্জন্ম হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমমনা তরুণ ও যুবকদের একত্র করে দলকে গুছিয়ে নেয় তামিম ও রিপন। পরে তামিম নিহত হন আর রিপনকে পলাতক বলছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে সেনা কমান্ডোদের অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়।
জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’।
এরপর এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বছরের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ মামলায় অভিযোগপত্রে ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে আটজন আসামি বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিজানে অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া জীবিত আটজনের মধ্যে ছয়জন কারাগারে ও বাকি দুজন পলাতক।
অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গি হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল।
এ ছাড়া বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন—তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।
কারাগারে থাকা ছয় আসামি হলেন—জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান ও হাদিসুর রহমান সাগর।
এ ছাড়া পলাতক দুই আসামি হলেন শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। এর মধ্যে রিপন কাল রাতে ধরা পড়ল।