নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রপ্তের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় জেলা পরিষদ। এর অধীনে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ দেখিয়ে সাড়ে তিন কোটি টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ ওঠে। কিন্ত্র সম্প্রতি জানা যায় যে চিঠির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেটি ভুয়া। একজন আইনজীবীর সহযোগিতায় বিষয়টি উদঘাটনের পর শুরু হয় তোলপাড়। বিষয়টি তদন্তের দাবি তুলেছে বিভিন্ন মহল। জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৯ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জুবাইদা নাসরিন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন সম্বলিত একটি চিঠি পাঠানো হয় জেলা পরিষদে। চিঠিতে বলা হয় জেলা পরিষদের প্রস্থাবের ভিত্তিতে তিন কোটি এগার লাখ ষাট হাজার টাকায় ১৮৭টি প্রকল্প ও তিন কোটি ছেচল্লিশ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকায় দু’শ চুরাশিটি প্রকল্প ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব তহবিলের সংস্থান সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে বাস্থবায়নের জন্য শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হলো। পাঁচ দফা শর্তের মধ্যে ছিলো, জেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের অর্থে প্রকল্প বাস্থবায়ন হবে, তার একটি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেই সঙ্গে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মধ্যেই প্রকল্প বাস্থবায়ন করতে হবে। কোন প্রকারে সম্ভব না হলে পরবর্তী অর্থবছরে শেষ করতে হবে। এই অনুমোদন দেখিয়ে উপজেলার ঈদগাহ, মসজিদ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের নামে গৃহীত প্রকল্পে রাজস্ব তহবিলের টাকা ব্যয় দেখানো হয়। এ অবস্থায় জেলার কালিগঞ্জের কুমারখালির বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সত্যরঞ্জন মন্ডল চিঠিটি সঠিক কিনা তা জানতে তথ্য অধিকার আইনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। গত পাঁচ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের মনিটরিং শাখার উপসচিব মোঃ সামছুল ইসলাম ওই আইনজীবীকে তথ্য দেওয়ার জন্য আহবান জানান। পরে ১৯ ডিসেম্বর সত্যরঞ্জন মন্ডল জানতে পারেন প্রকল্প অনুমোদনের ওই চিঠিটি ভুয়া। একই স্মারকে থাকা চিঠিটি মুলত ব্রাহ্মণবাাড়িয়া জেলা পরিষদের শূন্যপদে লোক নিয়োগ সংক্রান্ত। মূলত অসদ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য একে অপরের যোগসাজসে ভুয়া চিঠি তৈরি করে প্রকল্পের অনুমোদন দেখানো হয়। সেই সঙ্গে যেসব প্রকল্প দেখিয়ে টাকা ব্যয় করা হয়েছে তাতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ না করে টাকা ভাগাভাগি করে নেওয়া হয়েছে। এদিকে আইনজীবী এড. সত্যরঞ্জন মন্ডল জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে গত ২৩ ডিসেম্বর দুদকে একটি আবেদন করেন । জেলা পরিষদের সদস্য মহিাফুজা সুলতানা রুবি বলেন, ভুয়া অনুমোদন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের সময় জেলা পরিষদের দূর্ণীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছিলেন এসএম মাহাবুবর রহমান। এখন রাজস্ব তহবিলে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে বার্ষিক উন্নয়নের কর্মসুচির (এডিপি) আওতায় যে ছয় কোটি টাকার অনুদান হিসেবে এসেছে তা থেকে সমন্বয়ের বিষয়ে জেলা পরিসদের সাধারণ সভায় আলোচনা হয়েছে। অনেকে দু’ কোটি টাকা সমন্বয়ের পক্ষে মত দিয়েছেন। আবার কয়েকজন দ্বিমতও পোষণ করেছেন। ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তের জন্য খুব শীঘ্রই তিনি মন্ত্রণালয়ের লিখিত আবেদন করবেন। ভুয়া চিঠিতে প্রকল্প গ্রহণের সময় জেলা পরিষদের প্রশাসক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও তৎকালিন সভাপতি মুনসুর আহমেদ। জানতে চাইলে মুনসুর আহমেদ বলেন, ভুয়া প্রকল্প অুনমোদনের ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের বিষটি নির্বাচনের পর শুনেছেন। এরসঙ্গে কারা জড়িত জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে সময় জেলা পরিষদে ও মন্ত্রণালয়ে যারা কর্মকর্তা ছিলেন তারাই জড়িত। তারই এব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন। তিনি শুধু ফাইলে স্বাক্ষর করতেন। জানতে চাইলে জেলা পরিষদ থেকে সম্প্রতি খুলনায় বদলী হওয়া এসএম মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে রোববার বিকেলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মোঃ মহসিন আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, ভুয়া প্রকল্পের বিষয়টি একজন আইনজীবী উদঘাটন করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন দুদকে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত দুদক বা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কোন নির্দেশনা পাননি। কয়েক মাস আগে যোগদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যোগদানের কিছুদিন পরপরই জেলা পরিষদের সাড়ে তিন কোটি রাজস্ব ঘাটতির বিষয়টি তার নজরে আসে। এখন ফান্ড সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে।