দেশের খবর: চলতি বছর বিশ্বের যেসব দেশে ৭ শতাংশ বা এর বেশি প্রবৃদ্ধি হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আবার চীন, ভিয়েতনাম কিংবা কম্বোডিয়ার মতো রফতানি বাজারে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগীদের সবার চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে বেশি। বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা-২০১৯ নামে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস রয়েছে।
প্রতিবেদনটি সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে প্রকাশিত হয়।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ (ইউএন-ডেসা), বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা আঙ্কটাড এবং এসকাপসহ ৫টি আঞ্চলিক কমিশন যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে ২০৩০ সাল নাগাদ বাস্তবায়নের জন্য নতুন বৈশ্বিক এজেন্ডা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নের নিরিখে প্রণীত হয়েছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ কিছু দেশের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের পূর্বাভাস বলতে অর্থবছর ২০১৮-১৯ অর্থবছর বোঝানো হয়েছে। বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি বলতে পঞ্জিকাবর্ষ অর্থাৎ জানুয়ারি-ডিসেম্বর ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনার পাশাপাশি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরোনোর পর কিছু চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, শক্তিশালী বিনিয়োগ, বেসরকারি ভোগ ব্যয় এবং সংকুলানমুখী মুদ্রানীতির কারণে কয়েক বছর ধরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অবশ্য সরকারের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০১৯ সালে অন্তত ১০টি দেশে ৭ শতাংশ বা তার বেশি প্রবৃদ্ধি হবে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশের মধ্যে রয়েছে- ভারত, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ঘানা, ইথিওপিয়া এমনকি সিরিয়াও। রয়েছে দক্ষিণ সুদান। তবে সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদানে বড় ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আগের কয়েকটি বছরে অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তাদের দুর্বল ভিত্তির কারণে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হবে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধারাবহিকভাবে ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছে এমন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে। যেমন- চীনের প্রবৃদ্ধি এ বছর কমে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে। ভিয়েতনামসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেরই প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশের চেয়ে কম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বহুলাংশে ইতিবাচক। এসব দেশে নিকট মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধি তেজি থাকবে। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আগামী কয়েক বছর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর ২০২৭ সালে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে রফতানিতে ‘এভরিথিং বাট আর্মস’-এর আওতায় শুল্ক্কমুক্ত সুবিধা পাবে না। বাংলাদেশ চীন, শ্রীলংকাসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আলোচনা করছে। তবে এলডিসির আওতায় বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় বাংলাদেশ যেভাবে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে, দ্বিপক্ষীয় ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং।
মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির সদস্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। তবে প্রবৃদ্ধির গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কেননা ভোগের ক্ষেত্রে, সম্পদের ক্ষেত্রে ও আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য হচ্ছে। বৈষম্য বাড়লে উচ্চ প্রবৃদ্ধি টেকসই হয় না।
এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এর আগে যারা এলডিসি থেকে বের হয়েছে, তাদের অনেকের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টেকসই রাখতে বিশেষ যত্ন নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রধান মনোযোগের বিষয় হলো, রফতানি টেকসই রাখা। বাজার সুবিধা কমে গেলে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির তুলনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি প্লাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যোগ্যতা অর্জন গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া বৈদেশিক সহায়তা এবং রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে তা কমে ৩ শতাংশ হতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝুঁকি কমাতে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির ভিত্তি তৈরি করতে জরুরি ও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।