সরকারি সংস্থায় চাকরি পাচ্ছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের গুলিতে নিহত সাংবাদিক আব্দুল হাকিম শিমুলের স্ত্রী নূরুন নাহার খাতুন। সরকারি ওষুধ কোম্পানি এসেনশিয়াল ড্রাগসে তার চাকরির নিশ্চয়তা দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। দুই-তিন দিনের মধ্যে নিয়োগপত্র পৌঁছে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার রাতে শিমুলের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে তার বাড়িতে যান স্বাস্থমন্ত্রী নাসিম। এ সময় শিমুলের স্ত্রীক কর্মসংস্থানের কথা জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার শাহজাদপুরে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে বিরোধের জেরে মেয়র হালিমুল হক মিরুর বাড়িতে হামলার চেষ্টা হয়। এ সময় গুলিতে আহত হন সমকালের শাজহাদপুর প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল। পরদিন মারা যান তিনি।
পুলিশ জানিয়েছে, সাংবাদিক শিমুল যে গুলিতে আহত হয়েছিলেন তা ছুড়েছিলেন মেয়র মিরু। এরই মধ্যে তাকে আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মেয়র মিরুর দুই ভাইসহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও আত্মগোপনে আছেন মিরু।
শিমুলের মৃত্যুর পর তার আর্থিক দুর্দশার কথা জানা যায়। স্থানীয় সংবাদকর্মীরা জানান, খুবই সাধারণ জীবনযাপনকারী সাংবাদিক শিমুলের মৃত্যুতে বিপাকে পড়ে গেছেন তার স্বজনরা। তিনি পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেননি।
শিমুলের ১২ বছর বয়সী ছেলে সাদী মোহাম্মদ শাহজাদপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছাত্র। চার বছরের মেয়ে তামান্না এখনও তেমন কিছু বুঝে উঠার ক্ষমতা অর্জন করেনি।
সাদামাটা শিমুলের সম্বল বলতে নানির দেওয়া দুই শতক জমির উপর তোলা একটি টিন শেড ঘর ছিল। পাশাপাশি পৈত্রিক দুই বিঘা আবাদী জমি থেকে আসা আয়ের পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশায় যা আসতো, তা দিয়েই চলতো সংসার।
এই অবস্থায় শিমুলের মৃত্যু এক অর্থে দিশেহারা করে দেয় পরিবারটিকে। তার স্ত্রী নুরুন্নাহার গণমাধ্যমকর্মীদেরকে এও জানিয়েছেন যে, একদিনের খাবার কিনে খাওয়ার মতো অর্থও ঘরে নেই।
শিমুলের পরিবার এখন কীভাবে বাঁচবে-এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যান তার বাড়িতে। তিনি পরিবারকে এক লাখ টাকা অনুদান দেন। এই আর্থিক অনুদান আর শিমুলের স্ত্রীকে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে এক ধরনের স্বস্তি পায় শিমুলের পরিচিতজনরা।
শিমুল হত্যার বিচার হবেই-এমন নিশ্চয়তাও দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় একজন সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে- এটা খুবই দুঃখজনক। হত্যাকারী যত ক্ষমতাধরই হোক না কেন- তাকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।’
এলাকাবাসী মন্ত্রীর কাছে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। তখন নাসিম বলেন, ‘ইতিমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শিগগির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সাংসদ হাসিবুর রহমান স্বপন, মন্ত্রী পত্নী বেগম লায়লা নাসিম, জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দিকা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) আবুল হাসনাত, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুল রাজীব প্রমুখ।