শিক্ষা ডেস্ক: মানুষ গড়ার প্রথম ধাপ প্রাথমিক শিক্ষাকে কার্যকরভাবে সফল করার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। কিন্ডারগার্টেনে ‘কঠিন’ শিক্ষাযন্ত্র থেকে কোমলমতি শিশুদের রক্ষার জন্য সরকারি স্কুলগুলোতেও নার্সারি ও শিশু শ্রেণি চালুর উদ্যোগ হচ্ছে। পাশাপাশি শিক্ষা খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে তৎপর করা হচ্ছে দুদককে ।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির আগেও একটি শ্রেণি রয়েছে—‘প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি’। ভর্তি হওয়ার বয়স পাঁচ বছর। তবে আজকাল অনেক অভিভাবক তিন বা চার বছর বয়সেই বাচ্চাকে স্কুলে ভর্তি করাতে চান। সে ক্ষেত্রে শিশুকে দিতে হয় বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনে। একবার কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হয়ে গেলে শিশু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণত আর ফিরে আসে না। এই ধারায় বদল আনতে চাইছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে প্রাক-প্রাথমিককে ‘কেজি বা শিশু শ্রেণি’ ধরে এর আগে আরেকটি শ্রেণি ‘নার্সারি চালুর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। নার্সারিতে ভর্তির সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে চার বছর। তাহলে শিশু কেজিতে পড়বে পাঁচ বছর বয়সে এবং প্রথম শ্রেণিতে ছয় বছর বয়সে।
চার মাস আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর করার কথা বলা হয়েছে। মূলত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েই প্রাক-প্রাথমিকে নতুন একটি শ্রেণি চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পলিসি তৈরি করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি অনুমোদন দিলেই আমরা কাজ শুরু করব।’ সচিব আরো বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকে দুটি ক্লাস চালু হলে প্রথমটিতে মূলত খেলাধুলাই থাকবে। খেলার ছলে শিশু যা শিখতে পারে সেটাই যথেষ্ট হবে। ফলে পরের শ্রেণিতে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে স্কুলে আসবে। আর মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্যও অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে প্রাক-প্রাথমিকে দুটি শ্রেণি থাকা দরকার। এতে অভিভাবকদের কিন্ডারগার্টেনে যাওয়ার হারও কমবে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের ওপর। নতুন একটি শ্রেণি খুলতে হলে সব স্কুলে আরো একজন করে শিক্ষকও নিয়োগ দিতে হবে।’
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী প্রাক-প্রাথমিকে নতুন শ্রেণি খোলার অনুমোদন দিলে ২০২০ সাল থেকে সীমিত পরিসরে নার্সারি শ্রেণি চালু করা হবে, পরে বাস্তবায়ন হবে সব সরকারি প্রাথমিকে।দেখা গেছে, সরকারি স্কুলে ভালো অবকাঠামো ও কম বেতনের পরও অনেক অভিভাবকই সন্তানদের দিতে চান না। বদ্ধ ঘরের কিন্ডারগার্টেনের দিকেই তাঁদের ঝোঁক। মন্ত্রণালয় কিন্ডারগার্টেনকে বাগে আনতে এর আগে টাস্কফোর্স গঠন করলেও সেটি কোনো কাজই করতে পারেনি। সে জন্যই মূলত নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে মন্ত্রণালয়।এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীতে ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আধুনিকায়নে এক হাজার ২৬৯ কোটি ২১ লাখ সাত হাজার টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আওতায় রাজধানীর পুরাতন বিদ্যালয়গুলোয় স্থাপন করা হবে আধুনিকমানের দৃষ্টিনন্দন বহুতল ভবন। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের দেয়াল সাজ-সজ্জাকরণ, আসবাবপত্র ক্রয়, ড্রেনেজব্যবস্থার উন্নতিকরণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, নিরাপদ পানি সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, সংযোগ সড়ক, চিলড্রেন’স প্লে কর্নার, অগ্নি প্রতিরোধকসহ নানা আধুনিকায়নে বদলে যাবে রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর চেহারা। এ ছাড়া উত্তরা ও পূর্বাচলে নতুন করে আরো ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। সূত্র মতে, গত ২২ অক্টোবর ‘ঢাকা মহানগরী ও পূর্বাচলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ দৃষ্টিনন্দনকরণ’ নামে প্রকল্পের ডিপিপি (ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান) চূড়ান্ত করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এই প্রকল্পটির প্রস্তাব একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব হিসেবে চার মাস আগে দায়িত্ব নিয়ে মো. আকরাম-আল-হোসেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি প্রতিদিন একটি বাচ্চাকে নতুন একটি বাংলা ও ইংরেজি শব্দ শেখানোর সার্কুলার জারি করেছেন এবং নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিটি জেলায় একজনকে দিয়েছেন বিশেষ দায়িত্ব। জানা যায়, প্রাথমিকের শিক্ষকদের সন্তানদের যেন সরকারি প্রাথমিকেই ভর্তি করানো হয়—এ ব্যাপারেও সার্কুলার জারির কাজ করছেন তিনি।