জাতীয়

বিচারহীনতাই বাংলাদেশে দুর্নীতি বাড়ার কারণ

By Daily Satkhira

January 29, 2019

দেশের খবর: উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি বিচারের আওতায় না আসা, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে জালিয়াতি, অর্থ পাচার ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল হয়ে যাওয়াকে বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ—টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

জার্মানির বার্লিনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ২০১৮ সালের দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রতিবেদন প্রকাশকে কেন্দ্র করে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। টিআইর এবারের প্রতিবেদনে ২০১৭ সালের চেয়ে আরো চার ধাপ অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ বাংলাদেশে দুর্নীতি আগের চেয়ে বেড়েছে।

এই দুর্নীতি বাড়ার পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেসব কারণে আমাদের ফল ভালো হয়নি বলে আমরা মনে করি, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অঙ্গীকার থাকে, রাজনৈতিক ঘোষণা থাকে, কিন্তু সেটার বাস্তব প্রয়োগ হয় না। উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ, খুব কম ক্ষেত্রেই তাদের বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয় বা (তেমন) দৃষ্টান্ত রয়েছে। অবৈধ অর্থ পাচারের যে বিষয়টি, সেটি অবশ্যই এই সূচকে বিবেচিত হয়ে থাকতে পারে।’

দুর্নীতির সূচকে উন্নতির জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার বাস্তবায়ন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকর ভূমিকাসহ বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ জানায় টিআইবি। এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে অত্যন্ত জোরালোভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের ঠাঁই হবে না। এটির কার্যকর ব্যবহার, এটির প্রয়োগ এবং এটিকে কারো প্রতি ভয়, করুণা না করে বাস্তবায়ন করার যে অঙ্গীকার, সেটি থাকতে হবে। সেটির পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে।’

‘এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে, দুর্নীতি করলে যে শাস্তি পেতে হয়, সেটি নিশ্চিত করা। যারা দুর্নীতি করবে, উচ্চ পর্যায়েরই হোক, যেই পর্যায়েরই হোক না কেন, যেন তারা আবার বিচারহীনতার সংস্কৃতি উপভোগ করবেন, সেটি যেন না হয়।’

এবারে টিআইর প্রতিবেদনে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৩তম অবস্থানে উঠেছে বাংলাদেশ, যার স্কোর ২৬। এর আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭তম, স্কোর ছিল ২৮। তার আগের বছর ২০১৬ সালে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৫তম।

বাংলাদেশের সঙ্গে একই রকমভাবে ২৬ স্কোর পেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে ১৩ নম্বর স্থানে রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ আফগানিস্তান, স্কোর ১৬। আর সবচেয়ে কম দুর্নীতি ভুটানে, স্কোর ৬৮। তালিকায় ভারতের অবস্থান ৭৮, স্কোর ৪১। পাকিস্তানের অবস্থান ১১৭ নম্বরে, স্কোর ৩৩।

১৮০টি দেশের ওপর এ জরিপ চালায় টিআই। সবচেয়ে কম নম্বর ১০ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ হয়েছে সোমালিয়া। তার পরেই রয়েছে সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান, স্কোর ১৩। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইয়েমেন ও উত্তর কোরিয়া, স্কোর ১৪।

আর সবচেয়ে বেশি ৮৮ স্কোর পেয়ে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বিবেচিত হয়েছে ডেনমার্ক। এর পরেই রয়েছে নিউজিল্যান্ড, স্কোর ৮৭। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ড, স্কোর ৮৫।

তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে বলতে গিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘র‍্যাঙ্কিংয়ের বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থানটা বিব্রতকর। কারণ, বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপর থেকে যদি হিসাব করা হয়, ১৮০টি দেশের মধ্যে আমরা এবার ১৪৯তম স্থান পেয়েছি। যেটি ২০১৭ সালের তুলনায় ছয় ধাপ নিচে।’

‘দক্ষিণ এশিয়ার যে আটটি দেশ এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত আছে, সে আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবারও দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আমাদের পরেই আফগানিস্তান। এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে যে ৩১টি দেশ এই সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে আমরা চতুর্থ সর্বনিম্ন। আমাদের পরে আছে শুধু কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান ও নর্থ কোরিয়া। যে কারণে আমরা বলছি এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর,’ বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

রাজনীতি ও প্রশাসনে দুর্নীতির ব্যাপকতা সম্পর্কে ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, সংশ্লিষ্ট খাতের গবেষক ও বিশ্লেষকদের ধারণার ওপর ভিত্তি করে ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দেশগুলোর দুর্নীতির সূচক প্রকাশ করে আসছে জার্মানভিত্তিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল।