স্বাস্থ্য

যে কারণে গায়ে ‘রোদ’ লাগানো জরুরি

By Daily Satkhira

February 02, 2019

স্বাস্থ্য ও জীবন: শীত এলে উঠোনে মাদুর পেতে পরিবারের সবাই মিলে রোদ (সূর্যের আলো) পোহাতে পোহাতে সকালের নাস্তা আর পিঠা-পুলি খাওয়ার স্মৃতি গ্রামীন সমাজের প্রত্যেকেরই কম-বেশি আছে। সেই রোদ যে শরীরের জন্য কতটা উপকারে আসতো তা হয়ত তখন অধিকাংশ গ্রামীন মানুষই জানতো না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে সংস্কৃতি। উঠোনের উপর উঠে গেছে ঘর। তাই সকালে রোদ পোহানো এখন আর তেমন একটা হয়ে ওঠে না।

তাও যেটুকু সকালের রোদ গায়ে মাখতে পারে গ্রামের মানুষ, শহরে সেটা আরও কম। শারীরিক পরিশ্রম এখন অধিকাংশেরই কমে গেছে। এ কারণেই দিনে দিনে মানুষের মধ্যে রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নতুন নতুন রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। এত যত্নের পরেও শহুরে বাচ্চারা একটু পান থেকে চুন খসলেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সূর্যের আলো ভিটামিন ডি এর অন্যতম উৎস। এর অভাবে হাড়ে ও ত্বকে সমস্যা হতে পারে। হতে পারে ক্যানসারও ! ভিটামিন ডি-র অভাবে শরীরে কী কী রোগ হতে পারে, সেটা একবার দেখে নেওয়া যাক।

১. অবসাদ বাড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে সূর্যের আলো গায়ে না লাগলে মানুষের অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসসহ কিছু অংশ ভিটামিন ডি-র সাহায্যে মন চনমনে রাখতে সাহায্য করে।

২. ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ের ক্ষমতা কমে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি শরীরে ১০ শতাংশ বাড়লে ক্যান্সার থেকে বাঁচার সম্ভাবনা ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। আর ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে প্রস্টেট ক্যান্সারের বিপদ চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যায়।

৩. স্মৃতিভ্রংশ ও অ্যালজাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। একই সঙ্গে হতে পারে বাতের যন্ত্রণা। গবেষণায় দেখা গেছে, Psoriatic Arthritis-এ যারা ভোগেন, তাদের ৬২ শতাংশের শরীরেই ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি রয়েছে।

৪. হার্টের অসুখ, এমনকী স্নায়ুর সমস্যায়ও ভুগতে পারে মানুষ। এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় এর ফলে। তাই শরীরের যে কোনও গাঁটে ব্যাথা, হাড়ে ব্যাথা ইত্যাদি হলে, সেগুলিকে আর অবহেলা করবেন না । দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

৫. ভিটামিন ডি শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। অনেকেই হাড় শক্ত করার জন্য ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে থাকেন। কিন্তু যথেষ্ট ভিটামিন ডি শরীরে না থাকলে এই ক্যালসিয়াম খুব একটা কাজে আসে না। ফলে হাড় হয়ে ওঠে নরম এবং ভঙ্গুর। একটু পড়ে গেলে বা আঘাত পেলেই হাড়ে চিড় ধরতে পারে।

৬. দাঁতের এনামেল ভঙ্গুর হয়ে যায়। একটু শক্ত হাড় চিবুতে গেলেই দাঁত ভেঙে যেতে পারে।

৭. অতিরিক্ত রক্তচাপও হতে পারে ভিটামিন ডি এর অভাবের একটি কারণ। শরীড়ে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি না থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

৮. ঘুম কমে যায়। দেরিতে ঘুম আসা কিংবা চট করে ঘুম ভেঙে যাওয়ার সমস্যা তৈরি হতে পারে।

৯. মাংসপেশীর দুর্বলতার অন্যতম কারণ হতে পারে শরীরের ভিটামিন ডি এর অভাব। বিশেষ করে মাংসপেশী বেড়ে যাওয়া এবং মাংসপেশী কাঁপার মতো সমস্যাগুলো সাধারণত ভিটামিন ডি এর অভাবেই হয়ে থাকে।

১০. ভিটামিন ডি এর অভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে আশেপাশে কেউ ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হলে আপনিও তার শিকার হয়ে পড়তে পারেন সহজেই। এতে এসব রোগ থেকে সেরে উঠতেও দেরি হয়।

শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব আছে কি না এটা স্ক্রিনিং করলে বোঝা যায়। এগুলো আমাদের দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে করা হয়। পরীক্ষায় ভিটামিন ডি ৩০ ন্যানোগ্রামের ওপর যদি থাকে তাহলে পর্যাপ্ত আর যদি ১০ থেকে ২৯ যদি হয় তাহলে অপার্যাপ্ত বলা হয়। আর ১০ এর নিচে থাকলে সেটাকে ঘাটতি বা অভাব বলা হয়।

এসব কারণে শরীরে সূর্যের আলো লাগানো অত্যন্ত জরুরি। তবে সেই সূর্যের আলোটা অবশ্যই হতে হবে সকালের এবং বেলা ১১টার পরে কোনমতেই নয়। কারণ দিনের অন্য সময়ের রোদে থাকে অতি বেগুনী রশ্মিসহ নানা ক্ষতিকর আলোক তরঙ্গ। এগুলো আবার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের জন্ম দিতে পারে।