আজকের সেরা

সাতক্ষীরায় প্রেসক্রিপশন ছাড়া ড্রাগ বিক্রি; আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

By Daily Satkhira

February 03, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় ভয়াবহ ড্রাগের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে কলেজছাত্রীদের একটি বড় অংশ টেপেন্টাডল (৫০ এমজি), ডরমিকাম (৭.৫ এমজি), ডিসোপ্যান ২, পেন্টাডল (৫০ এমজি), সিনটা (৫০ এমজি), মিলামসহ (৭.৫ এমজি) বিভিন্ন ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়ছে।

এ হার শতকরা ৯০ ভাগে পৌঁছেছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর। বিনা প্রেসক্রিপশনে ওষুধ বিক্রিতে বাধা না থাকায় হরমেশাই এসব ওষুধ হাতে পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর ঘুম না হওয়া, ব্যথা কমানো বা হতাশা দূর করার নামে যথেচ্ছ ব্যবহার করে রীতিমত আসক্ত হয়ে পড়ায় ধ্বংস হচ্ছে তাদের জীবন, তাদের পরিবার।

রোববার (৩ ফেব্রুয়ারি) এমনই এক ভুক্তভোগী দম্পতি উল্লিখিত ওষুধগুলোর হাজার খানেক খালি পাতা নিয়ে প্রতিকার চাইতে দেখা করতে আসেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপারের সঙ্গে। কিন্তু পুলিশ সুপার ঢাকায় থাকায় তারা এসব ওষুধের খালি পাতা নিয়ে হাজির হন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে।

এসময় কালিগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা ওই দম্পতি তাদের মেয়ের ভয়াবহ ড্রাগে আসক্তির বর্ণনা দিয়ে জানান, তাদের মেয়ে শহরে থেকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ছেন। গ্রাম থেকে শহরে আসার পর বান্ধবীদের খপ্পরে পড়ে ওষুধে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। গত দুই বছর ধরে টেপেন্টাডল (৫০ এমজি), ডরমিকাম (৭.৫ এমজি), ডিসোপ্যান ২, পেন্টাডল (৫০ এমজি), সিনটা (৫০ এমজি), মিলামসহ (৭.৫ এমজি) বিভিন্ন ওষুধে আসক্ত হয়ে মেয়ে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। এরই মধ্যে মেয়েটি দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন।

কীভাবে আসক্তিতে জড়ালো জানতে চাইলে ওই দম্পতি জানান, সম্ভবত ঘুম না হওয়া, শরীরে ব্যথা কিংবা কোনো কারণে হতাশায় ভোগা নিয়ে বান্ধবীদের পরামর্শেই এসব ওষুধ খেতে শুরু করেন তাদের মেয়ে। আস্তে আস্তে তা আসক্তিতে পরিণত হয়। এসব ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই বাজারে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। আর তা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এখন অধিকাংশ কলেজছাত্রীই এতে আসক্ত বলে দাবি ওই দম্পতির।

তারা আরও বলেন, এসব ওষুধের দাম গড়ে ১০-১১ টাকা। কিন্তু বাজারে সংকট থাকায় ৫০-৬০ টাকাও নেয় ফার্মেসি।

তারা তাদের মেয়ের ব্যবহৃত খালি ওষুধের পাতা দেখিয়ে বলেন, আমরা হিসাব করেছি, এখানে প্রায় দুই লাখ টাকার ওষুধ রয়েছে।

তাদের দাবি, অধিকাংশ কলেজছাত্রী এখন এসব ড্রাগে আসক্ত। এখনই এর প্রতিকার হওয়া দরকার। তা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বিপর্যয় দেখা দেবে। তারা তাদের মেয়েকে চিকিৎসা করালেও্আসক্তি থেকে ফেরাতে পারছেন না।

এদিকে, এ দম্পতির আর্তনাদ শুনে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজ, সিটি কলেজ, দিবানৈশ কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান চালিয়ে তাদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

অনেক শিক্ষার্থীই জড়িয়ে পড়েছেন মাদকাসক্তিতে। পরিবারের অজান্তে তারা এসব ওষুধ নির্বিচারে ব্যবহার করলেও এ নিয়ে গড়ে ওঠেনি কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা। বরং বিনা প্রেসক্রিপশনে এসব ওষুধ বিক্রি করায় তারা সহজেই জড়িয়ে পড়ছেন ড্রাগে আসক্তিতে। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, এসব ওষুধ ক্ষতিকর। এগুলো যাতে বিনা প্রেসক্রিপশনে বিক্রি না হয়, সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ওষুধগুলো সম্পর্কে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক গাজী নাসির উদ্দীন ডেইলি সাতক্ষীরাকে জানান, “সক্ষুব্ধ পিতা-মাতা যে ওষুধগুলোর নমুনা এনেছেন সেগুলোর দুটি হলো ঘুমের। আর পেন টা ডল হলো ব্যথানাশক, সেই সাথে ঘুম ঘুম একটা ভাব থাকে। এগুলো মাদক বলা যাবে না। এটাকে Drug Addiction বলা হয়। “