নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘বিলাস ভবনে ভাসলো সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব’। গন্তব্যস্থল বিশ^ ঐতিহ্য সুন্দরবন। বিশে^র সর্ববৃহৎ লবনাম্ভু বন সুন্দরবনের অনিন্দ্য সুন্দর শ্যামল চেহারা অবলোকনই তাদের লক্ষ্য। দেশের দক্ষিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিরাপত্তা প্রাচীর খ্যাত সুন্দরবনে তিন দিনের অবগাহনে নিজেদের সঁপে দেবেন তারা। প্রাণ ভরে দেখবেন সূর্যোদয় । আর নির্মল নীলাকাশের নিচে সবুজ ঘন জঙ্গলের ফাঁক দিয়ে তারা চোখের মনিতে বুকে টেনে নেবেন সূর্যাস্তের রক্তিম লাল দৃশ্য। আজ রোববার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের এ অভিযাত্রায় মঙ্গল কামনা করে ফুলেল শুভেচ্ছায় ঘৃতাগ্নি করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন ‘ যাত্রা হোক শুভ। যাত্রা হোক মঙ্গলময়। নিজে অংশ না নিলেও আপনাদের হৃদয় মনের কাছেই থাকবো’। এ সময় তিনি অভিযাত্রীদের হাতে ফুলের গুচ্ছ তুলে দেন। শিশু আর বুড়োদের জন্য দেন এক রাশ চকোলেট। শুধু ‘বিলাস ভবন’ নয় , অভিযাত্রীরা ভাসবেন ‘এভারগ্রীন ট্যুরিসমেও’। তিনদিনের অভিযাত্রা শেষ হবে বুধবার রাতে। তারা সাগর আর সুন্দরবন মন্থন করে তুলে আনবেন অভিজ্ঞতার নানা উপচার। প্রাণভরে ঘুরবেন কটকা, জামতলা সী বীচ। অবলোকন করবেন দুবলার চরের অপরূপ সৌন্দর্য্য। এর পর হিরনপয়েন্ট , হাড়বাড়িয়া ,করমজল। ডোরা কাটা চোখের নয়ন জুড়ানো হরিণের অবাধ দলবদ্ধ বিচরণ, ছুটাছুটি। দেখবেন শৌর্য ও বীর্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও তার পদচিহ্ন। হয়তো বা হাঁফিয়ে উঠবেন ব্যাঘ্রের হুংকারে কিংবা হেতাল জঙ্গলে সাহেব অথবা বড় শিয়ালের গা এলানো আরাম আয়েশের খবরে। নদীর কুমিরের চেহারায় তারা মুগ্ধ হবেন। রকমারি মাছের অবগাহন তাদের প্রাণে নতুন স্পন্দন সৃষ্টি করবে। আর জীবন জীবিকার তাগিদে শত শত জেলে বাওয়ালী মাঝি মাল্লার ঘাম ঝরা শ্রম জীবন থেকে অভিযাত্রীরা নিতে পারবেন জীবন সংগ্রামের নতুন অভিজ্ঞতা। সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাধারন সম্পাদক আবদুল বারী এবং সদ্য নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপীর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে শুরু হয়েছে এই অভিযাত্রা। তিনটি গাড়িতে তারা খুলনার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব ছাড়েন রোববার সন্ধ্যায় । সাথে রয়েছেন সাংবাদিকরা ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাংখীরা। একটি বৃহদাকার পরিবারের আদলেই তারা যাত্রা করেছেন। সাথে রয়েছেন সত্তুর বছরের চুল দাঁড়ি পাকা দাঁত পড়া বৃদ্ধ ছাড়াও মাতৃক্রোড়ে কয়েক ম্সা বয়সের দুগ্ধপোষ্য শিশুরাও। এ এক বিরল অভিজ্ঞতার অভিযাত্রা বলে মন্তব্য করলেন তারা। তারা হয়তো আরও বলবেন ‘ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দু’পা ফেলিয়া, একটি ধানের শীষের ওপর একটি শিশির বিন্দু’। গহিন সুন্দরবনের নদী জলে ভেসে ভেসে তারা অবলোকন করবেন সাগরের শান্ত অথবা উত্তাল ঢেউ। দেখবেন শতবর্ষী সুন্দরী বৃক্ষ, কেওড়া গরান বাইন বন কিংবা গোলপাতার চমৎকার সাজানো গোছানো শ্যামল চেহারা। কাঠ কাটা কাঠুরিয়া, জেলে বাওয়ালি, জোংড়া খুটিয়ে, মৌয়াল কিংবা মাছ কাঁকড়া ধরা জেলেদের সাথে সাক্ষাত হবে তাদের। তারা প্রাণ ভরে নিঃশ^াস টেনে নেবেন প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে। উপরে নীলাকাশ , নিচে অগাধ নীল জলরাশি । মধ্যখানে বিলাস ভবন কিংবা এভারগ্রীন ট্যুরিসম জাহাজ। বিশালাকৃতির এই জাহাজে তারা পানাহার সারবেন। রাতে বনের গহিনে ভাসমান তরীতে তারা নিদ্রা দেবীর কোলে আশ্রয় নেবেন। ক্ষণে ক্ষণে তাদের কানে বাজবে ব্যাঘ্র হুংকার, বানরের কুক । হরিণের গলার সুর। নৌকা কিংবা ট্রলারের চলন শব্দ। বার বার প্রকৃতি এসে ধরা দেবে তাদের কাছে। রোববার রাতেই খুলনা বিআইডব্লিউটিএর ৫ নম্বর ঘাট থেকে তারা চড়বেন ত্রিতল দ্বিতল তরীতে। বিপদ ও শ^াপদসংকুল সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করবেন অভিযাত্রীরা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয় ক্ষতির দৃশ্যও তারা গ্রহন করবেন। সুন্দরবনকে কিভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় তারও উপায় খুঁজবেন অভিযাত্রী সাংবাদিকরা । কচি পাতার নাচন, বাতাসের শো শো শব্দ, গাছে গাছে ঘর্ষন, উদাস প্রকৃতি , পাখ পাখালির ডাক, বন মোরগের ডাক তাদের বিমোহিত করবে। শুভ্র আকাশ, নির্মল বাতাস, প্রাণ ছোঁয়া শ্যামল প্রকৃতি, নদী সাগরে বিশাল জলরাশি ভ্রমণ পিপাসুদের সৌন্দর্য তৃষ্ণা মিটাবে। আর হৃদয় জুড়ে বারবারই অনুরণিত হবে ঝংকার ‘বারে বারে আমি আসি ফিরে যেনো এই বাংলার নীরে’।