জাতীয়

পুলিশের সব দাবিই মেনে নিলেন প্রধানমন্ত্রী

By Daily Satkhira

February 04, 2019

দেশের খবর: পুলিশের সব চাওয়াই পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পুলিশ সদস্যদের জন্য বিভিন্ন ভাতা, ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপন, আলাদা মেডিক্যাল কোরসহ উত্থাপিত সব দাবিই মেনে নিয়েছেন তিনি। সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কল্যাণসভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন পুলিশ সদস্যরা।

সোমবার থেকে শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহ আগামী বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত চলবে। এদিন সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই উদ্বোধনী শেষে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত কল্যাণসভা দুপুর দেড়টায় শুরু হয়ে আড়াইটায় শেষ হয়। এই সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে পুলিশ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। সভায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।

কল্যাণসভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ সদস্যদের উত্থাপিত সব দাবিই মেনে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু আজীবন রেশন দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রাখবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, কল্যাণসভা শুরুর পর প্রথমেই ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল নাজমুন্নাহার প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার দাবি তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, ক্রীড়াঙ্গনে পুলিশের অনেক সফলতা রয়েছে। কিন্তু পুলিশের কোনও ক্রীড়া কমপ্লেক্স নেই। তিনি একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী এ দাবি মেনে নিয়ে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জন্য জমি দেখতে নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদের। কুড়িগ্রামে কর্মরত এএসআই মো. মাহবুবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুলিশ সদস্যদের জন্য আজীবন রেশন দেওয়ার দাবি করেন, যাতে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরাও এ সুবিধা পেতে পারেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রাখবেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক সার্জেন্ট সিলভিয়া ফেরদৌস বলেন, এখন এক কাপ চায়ের দাম ১০ টাকা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আরও বেশি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগের সেই ২০-২৫ টাকা ভাতা পেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ট্রাফিকরা এখন বর্তমানে ২০১১ সালের বেতন স্কেল অনুযায়ী ৩০ ভাগ ভাতা পেয়ে থাকেন। বর্তমান (২০১৫ সালের) বেতন স্কেল অনুযায়ী সেই ভাতা দেওয়ার দাবি জানান তিনি। এছাড়া গ্রেডভিত্তিক ভাতা বৃদ্ধিরও দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী এই ট্রাফিক সার্জেন্টের দাবিও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। পুলিশ সদস্যরা ব্যক্তিগত যেসব মোটরসাইকেল সরকারি কাজে ব্যবহার করেন, সেগুলোর জ্বালানি ও রক্ষণাবেক্ষণ ভাতা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি করেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) এসআই (নিরস্ত্র) কামরুল আলম। প্রধানমন্ত্রী এ দাবিও পূরণের আশ্বাস দেন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) ইন্সপেক্টর আব্দুল আহাদ খান বলেন, চাকরিরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা মারা গেলে বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন। গুরুতর আহত হলে পান মাত্র এক লাখ টাকা। এটাকে যথাক্রমে আট ও চার লাখ টাকা করার দাবি জানান তিনি। আর দায়িত্বরত অবস্থায় এবং অভিযানে গিয়ে মারা গেলে যথাক্রমে ১৫ লাখ ও আট লাখ টাকা দেওয়ারও দাবি জানান এই ওসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এ দাবিও মেনে নেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এএসপি সুমন কান্তি চৌধুরী পুলিশে আলাদা মেডিকেল কোর করার দাবি করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনি আগেও সম্মতি জানিয়েছিলেন। আবারও আপনার কাছে এটা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ আছে। সেই হিসাবে বিভাগীয় হাসপাতালগুলোতেও যেন পাঁচ শয্যার আইসিইউ করা হয়। পুলিশের জেলা হাসপাতালগুলোতে ন্যূনতম চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করারও দাবি জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী তার এসব দাবিও বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। সংশ্লিষ্টরা জানান, এছাড়াও মেডিক্যাল কলেজ, আরও এক লাখ জনবল, পৃথক পুলিশ বিভাগ, একাধিক আইজিপি পদ ও চিফ অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করে সেটিকে ফোর স্টার জেনারেল পদমর্যাদায় উন্নীত করার দাবিও ছিল পুলিশের। তবে সেগুলো নিয়ে কল্যাণসভায় কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানান সভায় উপস্থিত কর্মকর্তারা। এবারের পুলিশ সপ্তাহ পালিত হচ্ছে ‘পুলিশ-জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’ স্লোগানে। এই পুলিশ সপ্তাহ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন তিনি।