সাতক্ষীরা

গাঁদা ফুলের রঙে স্বপ্ন বুনছেন সাতক্ষীরার ফুলচাষী গোলাম মোস্তফা ও আকরম আলী

By daily satkhira

February 05, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক : গাঁদা ফুলের বর্ণিল রঙে জীবন সাজিয়েছেন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ী গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা ও আকরম আলী। দেশী জাতের গাঁদা ফুলের চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন এ দুই কৃষক। ফুল চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন তারা। ফুল চাষেই দেখছেন আশার আলো। ফুল ছাড়া এখন কোন অনুষ্ঠানই হয়না। বিভিন্ন দিবসে ফুলের ব্যবহার বেড়েছে। তাই ফুল চাষ দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাতক্ষীরায়। জেলার আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আম, কুলের পর এবার ফুল খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নব দিগন্ত। এমনটি দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি মৌসুমে প্রথমবারের দেড় বিঘা জমিতে দেশী জাতের গাঁদা ফুল চাষ করেন কৃষক আকরম আলী ও পাঁচপাড়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা। আর প্রথমবারেই সাফল্যের মুখ দেখেছেন তারা। তাদের এ সাফল্যের পিছনে কাজ করছেন বেসরকারী সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’। উন্নয়ন প্রচেষ্টার কৃষি কর্মকর্তা নয়ন হোসেন বলেন, আমাদের প্রথমে আশঙ্কা ছিলো সাতক্ষীরার মাটিতে ফুল চাষ হবে কি না। কিন্তু এখানে ফুল চাষে তারা সফল হয়েছে। তাদের এই সফলতা দেখে আরো অনেক কৃষকরা ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কৃষক আকরম আলী জানান, দেড় বিঘা জমিতে গাঁদা ফুল চাষাবাদে ফুলের কাটিং, সেচ, চাষাবাদ এবং ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল মাত্র ৫৫-৬০ হাজার টাকা। এক মাসের মধ্যেই চারা গাছগুলো থেকে বেরিয়ে আসে ফুলের কুড়ি। এক-দেড় মাসের মধ্যে ফুলে ফুলে ভরে যায় তার ক্ষেত। তারপর থেকে তারা এখন পর্যন্ত ফুল বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা। গাঁদা ফুল ৫-৬ মাস স্থায়ী হয়। আগামী তিন-চার মাস তার বাগানে ফুল থাকবে এবং এ থেকে আরও ২-৩ লক্ষ টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করেন । কৃষক গোলাম মোস্তফা বলেন, সাতক্ষীরার ফুল ব্যবসায়ীরা ক্ষেত থেকে ১৭০-২০০ টাকা হাজার দরে ফুল কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার ফুল বিক্রি হয়। গাঁদা ফুল চাষের এই সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে কৃষক আকরম আলী বলেন, আমি এই ২৫ বছর ধরে ফুল চাষের সাথে জড়িত। গাঁদা ফুল যে কোন ধরনের মাটিতে চাষ করা যায়। তবে এঁটেল দো-আঁশ মাটি বেশি উপযুক্ত। ফুল চাষের জমিটা হতে হবে মাঝারি উঁচু, যাতে করে বন্যার পানি দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু জমিতে সেচ দেওয়া ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু আমার নিজ গ্রামে ফুল চাষের উপযোগী জমি না থাকায় তখন ফুল চাষ করে সফল হতে পারিনি। তবুও অল্প অল্প করে চাষ করতাম। তারপরে একদিন আমার বেয়ায় গোলাম মোস্তফার পরামর্শে আমি ও আমার বেয়ায় নগরঘাটা মিঠাবাড়ী গ্রামের উত্তরপাড়া মাঠে ৫ বিঘা জমি নিয়ে তার থেকে দেড় বিঘা জমিতে ফুল চাষ করি। এখানে ফুল চাষ করে আমি সফল হয়েছে। আমার সংসার চালাতে এখন আর কষ্ট হয় না। ইতোমধ্যে তাদের এই ফুল চাষ দেখে অন্যান্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। কয়েকজন বেকার যুবককে মাঝে ও দেখা গেছে, গাঁদা ফুল চাষের আগ্রহ। সাড়া পড়েছে জেলাব্যাপী। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তার ফুলের বাগান দেখতে যাচ্ছে ফুল প্রেমী মানুষ। আকরম আলী আরও বলেন, যশোরের গদখালির মত আমরাও ফুল চাষে একদিন সুনাম অর্জন করতে পারব। সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সাহায্য পেলে আগামী বছর পাঁচ বিঘা জমিতে গাঁদা ফুলসহ রজনী গন্ধ্যা, জারবারা এবং গ্লাডিউলাস ফুল চাষের আশা ব্যক্ত করেন তিনি।