রাজনীতির খবর: প্রথম ধাপের ৮৭ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গত শুক্রবার দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ওই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তালিকাটি প্রকাশ করেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, এটি তালিকা প্রকাশের প্রথম ধাপ।
তালিকায় দেখা গেছে, ৮৭ জন প্রার্থীর মধ্যে ২৩ জন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ৩৬ জন একেবারে নতুন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আগে মন্ত্রী-এমপিদের কোনো স্বজনকে মনোনয়ন না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দুই মন্ত্রীর দুই ভাই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। তাঁদের একজন হলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছোট ভাই মাহবুবুজ্জামান আহমেদ (কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট)। অপরজন হলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া জব্বার (খালিয়াজুরী, নেত্রকোনা)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। ওই দুটি পদ উন্মুক্ত থাকবে। ওবায়দুল কাদের আশা প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির অনেকেই এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
পরে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপির (সংসদ সদস্য) সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনীত প্রার্থীদের নামের তালিকা গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় যাঁদের নাম আছে তাঁরা হলেন :
পঞ্চগড় : মো. আমিরুল ইসলাম (সদর), কাজী মাহামুদুর রহমান (তেঁতুলিয়া), মো. হাসনাৎ জামান চৌধুরী জর্জ (দেবীগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. ফারুক আলম (বোদা) ও মো. তৌহিদুল ইসলাম (আটোয়ারী)।
নীলফামারী : শাহিদ মাহমুদ (সদর), তোফায়েল আহমেদ (ডোমার), মো. তবিবুল ইসলাম (ডিমলা, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. মোখছেদুল মোমিন (সৈয়দপুর, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. জাকির হোসেন বাবুল (কিশোরগঞ্জ) ও মো. আনছার আলী মিন্টু (জলঢাকা)।
লালমনিরহাট : মো. নজরুল হক পাটোয়ারী ভোলা (সদর), মো. রুহুল আমিন বাবুল (পাটগ্রাম, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. লিয়াকত হোসেন (হাতীবান্ধা, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. রফিকুল আলম (আদিতমারী) ও মাহবুবুজ্জামান আহমেদ (কালীগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান)।
কুড়িগ্রাম : মোস্তফা জামান (নাগেশ্বরী, নতুন), মো. গোলাম হোসেন মন্টু (উলিপুর, নতুন), শওকত আলী সরকার (চিলমারী, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. মজিবুর রহমান (রৌমারী, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. নুরুন্নবী চৌধুরী (ভূরুঙ্গামারী, বর্তমান চেয়ারম্যান), আবু নুর মো. আক্তারুজ্জামান (রাজারহাট), মো. আতাউর রহমান (ফুলবাড়ী, নতুন), মো. শফিউল আলম (রাজীবপুর, বর্তমান চেয়ারম্যান) ও আমান উদ্দিন আহমেদ (সদর)। রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার চেয়ারম্যানরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
জয়পুরহাট : এস এম সোলায়মান আলী (সদর), মো. মনিরুল শহিদ মণ্ডল (পাঁচবিবি), মো. আব্দুস সালাম আকন্দ (আক্কেলপুর), মো. মিনফুজুর রহমান (কালাই, বর্তমান চেয়ারম্যান) ও মো. মোস্তাকিম মণ্ডল (ক্ষেতলাল)।
রাজশাহী : মো. মুনসুর রহমান (পবা), মো. লুৎফর হায়দার রশীদ (তানোর), মো. জি এম হিরা বাচ্চু (পুঠিয়া), মো. নজরুল ইসলাম (দুর্গাপুর, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো.লায়েব উদ্দীন (বাঘা), জাহাঙ্গীর আলম (গোদাগাড়ী), মো. ফকরুল ইসলাম (চারঘাট), মো. আব্দুস সালাম (মোহনপুর) ও অনিল কুমার সরকার (বাগমারা)।
নাটোর : মো. শরিফুল ইসলাম রমজান (সদর, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. জাহিদুল ইসলাম (গুরুদাসপুর), মো. সেকেন্দার রহমান (বাগাতিপাড়া), মো. শফিকুল ইসলাম (সিংড়া, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী (বড়াইগ্রাম, বর্তমান চেয়ারম্যান) ও মো. ইসাহাক আলী (লালপুর)।
সিরাজগঞ্জ : মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন (সদর, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. ফারুক হোসেন (চৌহালী), মো. খলিলুর রহমান সিরাজী (কাজীপুর), ইমরুল হোসেন তাং (রায়গঞ্জ), মো. শফিকুল ইসলাম (উল্লাপাড়া), মো. আজাদ রহমান (শাহজাদপুর), মো. আলী আকন্দ (বেলকুচি) ও সঞ্জিত কুমার কর্মকার (তাড়াশ)।
জামালপুর : মোহাম্মদ আবুল হোসেন (সদর), এ কে এম সাইফুল ইসলাম (বকশীগঞ্জ), মো. আবুল কালাম আজাদ (দেওয়ানগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. কামরুজ্জামান (মেলান্দহ), মো. ওবায়দুর রহমান বেলাল (মাদারগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. গিয়াস উদ্দিন পাঠান (সরিষাবাড়ী) ও এস এম জামাল আবদুল নাছের (ইসলামপুর)। গিয়াস উদ্দিন পাঠান ছাড়া বাকি চারজনই নতুন।
নেত্রকোনা : মো. তফসির উদ্দিন খান (সদর), গোলাম কিবরিয়া জব্বার (খালিয়াজুরী), মোহাম্মদ এমদাদুল হক খান (দুর্গাপুর, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. শহীদ ইকবাল (মোহনগঞ্জ), মো. গোলাম রসুল তালুকদার (বারহাট্টা), মো. আবদুল খালেক (কলমাকান্দা), মো. হাবিবুর রহমান (মদন) ও জাহিদুল ইসলাম সুজন (পূর্বধলা, বর্তমান চেয়ারম্যান)। বারহাট্টা ও মদনে নতুন মুখ।
হবিগঞ্জ : মো. মশিউর রহমান (সদর), মো. আলমগীর চৌধুরী (নবীগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. মুশফিকুল আলম আজাদ (লাখাই, বর্তমান চেয়ারম্যান), মো. আবদুল হাই (বাহুবল, বর্তমান চেয়ারম্যান), আলহাজ আতিকুর রহমান (মাধবপুর), মো. আবদুল কাদির লস্কর (চুনারুঘাট), মো. মর্ত্তুজা হাসান (আজমিরীগঞ্জ) ও মো. আবুল কাশেম চৌধুরী (বানিয়াচং)। চুনারুঘাটের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু তাহের মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন। বাকিরা সবাই নতুন মুখ।
সুনামগঞ্জ : মো. খায়রুল হুদা (সদর, নতুন), মো. ইউসুফ আল আজাদ (জামালগঞ্জ), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (শাল্লা), মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার (বিশ্বম্ভরপুর), শামীম আহমেদ মুরাদ (ধর্মপাশা), মো. ফজলুর রহমান (ছাতক, নতুন), আবদুর রহিম (দোয়ারাবাজার), প্রদীপ রায় (দিরাই, নতুন), করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবলু (তাহিরপুর, নতুন) ও মো. আবুল কালাম (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, বর্তমান চেয়ারম্যান)।
এবার ৪৮১টি উপজেলায় পাঁচ ধাপে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১০ মার্চ প্রথম ধাপের নির্বাচন হবে। ওই সব উপজেলায় মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১১ ফেব্রুয়ারি। ইসির ঘোষণা অনুযায়ী ১৮, ২৪, ৩১ মার্চ ও ১৮ জুন বাকি চার ধাপে নির্বাচন হবে। গত বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপের ১২৯টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে ইসি।