জাতীয়

সংসদে না আসা ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক ভুল: প্রধানমন্ত্রী

By Daily Satkhira

February 13, 2019

রাজনীতির খবর: বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সংসদ সদস্যদের সংসদে না আসাকে তাদের ‘রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘যারা (জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট) নির্বাচনে অংশ নিয়েও অল্প আসন পেয়েছেন বলে অভিমানে সংসদে আসছেন না, আমার মনে হয়, তারা রাজনৈতিক একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ ভোটের মালিক জনগণ। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই জনগণ ভোট দিয়েছে। কাজেই আমার আহ্বান থাকবে– যারাই নির্বাচিত সংসদ সদস্য তারা সবাই সংসদে আসবেন। সংসদে বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন। এটাই আমি আশা করি।’

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এদিন সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের লিখিত ও সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দেন।

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছি সকলে সম্মিলিতভাবে দেশটাকে গড়ে তুলবো। তাই আমি নির্বাচনের আগে সব দলকে ডেকেছিলাম। সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং সবাইকে আমি আমন্ত্রণ করেছিলাম যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। গত ১০ বছরের দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ পেয়েছে। আর সুফল পেয়েছে বলেই জনগণ বহু আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিল যে, তারা আবারও আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং জনগণ সেই ভোট দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সংসদে এলে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী এমপিদের যদি কোনো কথা থাকে, তাহলে তারা কিন্তু বলার একটা সুযোগ পাবেন। আর এই সুযোগটা শুধু সংসদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। যেহেতু মিডিয়াতে সম্পূর্ণভাবে অধিবেশন সরাসরি দেখানো হয় এবং সংসদ টিভিও আছে, তার মাধ্যমে সারাদেশের মানুষ তাদের কথা জানতে পারবে। এই সুযোগটা তারা কেন হারাচ্ছেন আমি জানি না।’

রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণের পর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটু ভালো হলেই গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা– এটা আমার আসলে কোনোদিনই পছন্দ ছিল না। কেননা আমি গ্রামে জন্ম নিয়েছি, গ্রামেই বড় হয়েছি। কাজেই সবসময় আমার একটা আকাঙ্খা, যখনই আমি অবসর নেব তখন গ্রামের বাড়িতে যেয়েই থাকবো। সেখানে সবুজ শ্যামল সুন্দর পরিবেশ সবসময় আমাকে টানে। কাজেই এটাই আমার একটা ইচ্ছা।’

তিনি বলেন, ‘আসলে গ্রামটা হচ্ছে আমাদের প্রাণ। কেননা আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামেই বড় হয়েছি, ওই কাঁদা মাটি মেখেই বড় হয়েছি। খালে ঝাঁপ দিয়ে, গাছে উঠে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি। হয়তো একটা পর্যায়ে ঢাকায় চলে এসেছি, কিন্তু গ্রামের টান কখনো মুছে যায়নি, মুছে যায় না। এখনো মনটা পড়ে থাকে আমার ওই প্রিয় গ্রামে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামের মানুষকে আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা দিতে চাচ্ছি। আমি মনে করি, গ্রামের নির্মল বাতাস, সুন্দর পরিবেশ– এটা মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সুস্থ রাখে। মন ভালো থাকে, প্রশান্তি জোটে। শহরের ইট কাঁঠের এই বদ্ধ একটা আবহাওয়া এবং পরিবেশ থেকে গ্রামের উন্মুক্ত পরিবশেটা সবসময় আমার আকাঙ্খা।’

জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান ও ওআইসির নেতৃবৃন্দসহ প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৭ জন বিশ্ব নেতা জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসব বার্তা পেয়ে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গর্বিত ও আনন্দিত। এসব অভিনন্দন বার্তায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের জনবান্ধব নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন, জনগণের কঠোর পরিশ্রম এবং সহযোগিতার ফলে। আমি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশকে একটি আত্ম-মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব সম্প্রদায় সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। তাছাড়া আমি মনে করি সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন দেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাবো। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো। স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আগামী দিনেও সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও শান্তিময় দেশ।’

সরকারি দল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরনের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনীতি করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে চেয়েছে। তবে আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে বারবার তা ব্যর্থ হয়েছে। কুচক্রী মহল যাতে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ক্ষেত্র তৈরি না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যারা সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করবে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও সম্প্রীতির বিনষ্টের চেষ্টা করা হলে আমরা তা কঠোরভাবে দমন করবো।’

শেখ হাসিনা বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থা তথা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে অসাম্প্রদায়িক জাতি-রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সারাদেশে ইমামগণকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে জুম্মার খুৎবায় নিয়মিত সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য প্রদান করছে। কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন।

সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে অন্যতম বিষয় ছিল– তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। নির্বাচনী ইশতেহারে এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা দেশের নতুন প্রজন্ম, বিশেষ করে যুব সমাজের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে, উপজেলা পর্যায়ে যুবকদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘গত ১০ বছর ধরে যুবদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ প্রবাহিত করতে আমাদের সরকার সম্ভাব্য সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। প্রশিক্ষণ, ঋণ সুবিধা, অনুদান ও কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে যুব সমাজকে শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মমুখী ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।’

সরকারি দলের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের অধিকার সুরক্ষায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইতোমধ্যে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের চেতনায় দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের সকল বিভাগে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। সাংবাদিকদের জন্য ৯ম ওয়েজবোর্ড ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বস্তরের সাংবাদিকদের জন্য এর বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, সরকার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে প্রতি পাঁচ বছর পর পর ওয়েজ বোর্ড গঠন করছে। ৯ম ওয়েজবোর্ড সকল সংবাদপত্রের গণমাধ্যমকর্মীর শতকরা ৪৫ ভাগ মহার্ঘ ভাতা প্রদানের জন্য সুপারিশ প্রদান করেছে। এছাড়া ওয়েজবোর্ড কর্তৃক দাখিলকৃত রোয়েদাদের সুপারিশমালা পরীক্ষা করে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা হবে।

তিনি বলেন, গণমাধ্যমবান্ধব এ সরকার মিডিয়া সেক্টরে আরও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানে বদ্ধপরিকর। স্বাধীন গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্য প্রবাহ এ সরকারের সাফল্যের অন্যতম মাইলফলক।

সরকারি দলের এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভিলক্ষ্য এসডিজি অর্জন, ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত, সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধি ১০ শতাংশে উন্নীত করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্টের জন্য আমরা বহুবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।