বিদেশের খবর: রাজনীতিতে অভিষিক্ত হয়েছেন গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর নাতনি ও রাজীব গান্ধীর মেয়ে প্রিয়াংকা গান্ধী। তার রাজনীতিতে আসার গুঞ্জন বহুদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ এসে গেল।
দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পদ পেয়েছেন রাজীব ও সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে প্রিয়াংকা গান্ধী। গত সোমবার তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় দায়িত্ব বুঝে নেন।
দায়িত্ব গ্রহণ উপলক্ষে লক্ষ্মৌতে বিশাল রোডশোয়ে নেতৃত্ব দেন প্রিয়াংকা গান্ধী। সেখানে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব বুঝে নেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর কাছ থেকে। সেই রোডশোয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি হয় কংগ্রেস পার্টিতে।
প্রিয়াংকাকে পেয়ে মোদি-ঝড়ে টালমাটাল কংগ্রেস নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। সবার মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব কাজ করছে। সেটির প্রমাণ হয়েছে সোমবারের রোডশোয়ে।
প্রিয়াংকার শোভাযাত্রায় জনস্রোত নেমে আসে। সবাই তাকে স্বাগত জানিয়ে নানা স্লোগান দেন। রাহুল ও প্রিয়াংকার পোস্টার হাতে কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকেন।
শোভাযাত্রায় শুরু থেকেই দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হাত নাড়তে থাকেন প্রিয়াংকা। তিনি হাজার হাজার মানুষের অভিনন্দনের জবাব দেন।
এ সময় ভিড় ঠেলে সামনের দিকে এগোতে থাকে রাহুল-প্রিয়াংকাদের বাস। রাজনীতিতে অভিষিক্ত প্রিয়াংকাকে দেখতে সড়কের দুপাশে প্রচুর লোকজন এসে জড়ো হন।
কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াংকা গান্ধী দলের হয়ে পূর্ব উত্তরপ্রদেশের সংগঠনের কাজ দেখভাল কববেন। তিনি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর কাজ করবেন।
লক্ষ্ণৌয়ে রোডশো করে এবার প্রিয়াংকার নজর সংগঠনে। এ নিয়ে মঙ্গলবার লক্ষ্ণৌয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেছেন প্রিয়াংকা। চেষ্টা করেছেন দলের বর্তমান অবস্থা, দলীয় নেতাকর্মীদের মনোভাব বুঝতে। সেই সঙ্গে দলকে শক্ত সাংগঠনিক ভিতের ওপর দাঁড় করাতে।
মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হওয়া এ বৈঠক শেষ হয় গভীর রাতে। তার পর সংবাদমাধ্যমকে প্রিয়াংকা বলেন, সংগঠন ও দলের কাঠামো সম্পর্কে শেখার চেষ্টা করছি। সেই অনুযায়ী কী কী পরিবর্তন করা দরকার, সেটি নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। কীভাবে ভোটে সুবিধা করতে হয়, সে সম্পর্কে নেতাকর্মীদের মতামত নিচ্ছি।
প্রিয়াংকা গান্ধীর মধ্যে তার দাদি ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া দেখছেন কংগ্রেস নেতাকর্মীরা। তার হেয়ার স্টাইল, হাসি সব কিছুতেই দাদির ছাপ। তাই প্রিয়াংকায় উজ্জীবিত কংগ্রেস। নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে- প্রিয়াংকার রাজনীতিতে অভিষেকের অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
সোমবারের রোডশোয়ে লক্ষ্ণৌ বিমানবন্দর থেকে কংগ্রেস কার্যালয় পর্যন্ত কংগ্রেস কর্মীদের উদ্দীপনা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সেটি ছিল আনুষ্ঠানিক অভিষেক। এবার বাস্তবের মাটিতে লড়াই। যে ‘কুরুক্ষেত্র’তে বিপরীত শিবিরে রয়েছেন যোগী আদিত্যনাথের জাতপাতের রাজনীতি। রয়েছে অখিলেশ-মায়াবতীর মতো জোটবদ্ধ শক্তি। এগুলো উৎরে প্রিয়াংকাকে সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে।
এ রণক্ষেত্র যে অনেক কঠিন তা ৪৭ বছরের প্রিয়াংকাও বুঝতে পারছেন। তবে প্রিয়াংকা জানেন, লড়াইয়ের মূলমন্ত্র হলো- নিজের দল এবং শত্রুর শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে আগে ভালো করে নিরীক্ষণ করা। মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্ণৌয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে সেই কাজটিই করেছেন তিনি।
বৈঠকে প্রতিটি এলাকা, প্রতিটি কেন্দ্রের প্রতিনিধিদের কথা আলাদা করে শুনেছেন রাজীব গান্ধী ও সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে। কংগ্রেস যেসব এলাকায় দুর্বল, সেসব এলাকার অধিকাংশের কাছেই প্রশ্ন ছিল- কংগ্রেস কেন দুর্বল বা বিরোধী দল কেন শক্তিশালী। আবার কংগ্রেস শক্তিশালী হলে বিরোধীরা কোন কোন দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারে- এসেছে তেমন প্রশ্নও। তবে এসব গুরুগম্ভীর আলোচনার মধ্যেও পরিবেশকে ভারী হতে দেননি প্রিয়াংকা। কথা বলেছেন খোলামেলা পরিবেশে। হেসেছেন হাসিয়েছেন। এমনকি অনেকের সঙ্গে সেলফিও তুলেছেন তিনি।