জাতীয়

বিশ্ব ইজতেমা শুরু; তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল

By Daily Satkhira

February 15, 2019

দেশের খবর: গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে তুরাগ নদের তীরে শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের চার দিনব্যাপী ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে চলে এসেছেন। এসেছেন বিদেশি মুসল্লিরাও। ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজ ইজতেমা মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বৃহত্তম জুমার নামাজ।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাবলিগ জামাতের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ইজতেমা ময়দানে আসা শুরু করেন। কেউ বাসে, কেউ ট্রাকে, কেউবা রিকশায়, লঞ্চে চড়ে ইজতেমাস্থলে আসেন। পরে গাড়ি থেকে নেমে নিজের মালপত্র নিয়ে ময়দানে গিয়ে নিজ নিজ জেলা ভিত্তিক খিত্তায় গিয়ে অবস্থান নেন। আয়োজকরা জানান, পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়েছে। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে চার দিন। দুই দিন করে পৃথক ভাবে ইজতেমা পরিচালনা করবেন তাবলিগের বিবদমান দুই পক্ষ। আগামীকাল শনিবার দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এক পক্ষের (মাওলানা জুবায়ের) পরিচালনায় ইজতেমা। তারা ইজতেমা ময়দান বুঝিয়ে দিবেন দ্বিতীয় পক্ষের (সাদ্পন্থি) কাছে। তাদের পরিচালনায় ইজতেমা শুরু হবে রবিবার ভোরে। সোমবার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে সেই ইজতেমা সমাপ্ত হবে।

জেলাওয়ারী ৫০ খিত্তা: এবারের বিশ্ব ইজতেমায় রাজধানী ঢাকাসহ ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। মুসল্লিদের জন্য ইজতেমা ময়দানকে জেলাওয়ারী ৫০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। মুসল্লিরা খিত্তাওয়ারী যেভাবে অবস্থান নেবেন: ১ নং খিত্তায় গাজীপুর, ২-৪ নং খিত্তায় টঙ্গী, ৫ ও ৬ নং খিত্তায় ঢাকার মিরপুর, ৭ ও ৮ নং খিত্তায় সাভার, ৯ নং খিত্তায় ঢাকার মোহাম্মদপুর, ১০ নং খিত্তায় ঢাকার ডেমরা, ১১ ও ১২ কেরানীগঞ্জ, ১৩-১৯ ঢাকার কাকরাইল, ২০ নাটোর ও নওগাঁ, ২১ ও ২২ রাজবাড়ি, ২৩ সিরাজগঞ্জ, ২৪ দোহার-নবাবগঞ্জ, ২৫ মানিকগঞ্জ, ২৩৬ টাঙ্গাইল, ২৭ রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট, ২৮ বগুড়া ও জয়পুরহাট, ২৯ মুন্সিগঞ্জ, ৩০ মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল, ৩১ যশোর, ৩২ নারায়ণগঞ্জ, ৩৩ বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি, ৩৪ ভোলা, ৩৫ নরসিংদী, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট, ৩৬ কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা, ৩৭ ময়মনসিংহ, ৩৮ শেরপুর ও জামালপুর, ৩৯ নেত্রকোনা, ৪০ কিশোরগঞ্জ, ৪১ গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি, ৪২ মাদারিপুর, ৪৩ সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, ৪৪ কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান, ৪৫ ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর, ৪৬ কুমিল্লা ও চাঁদপুর, ৪৭ পটুয়াখালী, ৪৮ বরগুনা, ৪৯ পাবনা এবং ৫০ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়।

১৩৮ বিশেষ ট্রেন, ৪০০ বাস : ইজতেমায় মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ১৩৮টি বিশেষ ট্রেন, ৪০০টি বিআরটিসি বাস ও পর্যাপ্ত লঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ইজতেমা ময়দান নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য ৯ হাজার পুলিশ, দুই শতাধিক র্যাব, ৩ শতাধিক আনসার, ২৮০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। দেশের সকল গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ইজতেমা মাঠে মোতায়েন রয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পুরো ইজতেমা মাঠ নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছে। ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চলাচলের জন্য ১৭টি প্রবেশ পথে আর্চওয়ে বসানো হয়েছে। রয়েছে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার। এছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য তুরাগে ৭টি ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। তুরাগে নৌ-টহল ছাড়াও ডুবুরীদল মোতায়েন রয়েছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান সংবাদিকদের জানান, ইজতেমায় যে কোনো ধরনের নাশকতা, নৈরাজ্য রোধে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।