ফিচার

হায়রে এমপি!

By Daily Satkhira

February 21, 2019

রাজনীতির খবর: একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারের কাছে থাকবো বলে বাচ্চাসহ আমরা বেরিয়েছিলাম। এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে যাওয়ার পথে গাড়ির চাপ ছিল যথারীতি। কার্পেট-জুতার দোকানের সামনে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়েছিল একটি গাড়ি। রিকশাওয়ালা অতি সন্তর্পণে ও সতর্কতায় থামানো গাড়িটিকে কাটিয়ে সামনে এগোতেই গাড়ির ভেতর থেকে ড্রাইভার নেমে এসে গলা চেপে ধরে তাকে প্রায় শূন্যে তুলে আবার নামিয়ে মারতে লাগলো। দেড় বছরের বাচ্চা কোলে থাকা আমি তাকে চিৎকার করে বললাম, রিকশাওয়ালাকে কেন মারছেন? কিন্তু তার কানে কিছুই ঢুকছে না। হাড় জিরজিরে দুর্বল গড়নের ছেলেটাকে মেরেই যাচ্ছে। আমার স্বামী তাকে বারবার নিবৃত করছে এই বলে যে, গাড়িতে লাগেনি কোনভাবেই। কিন্তু সে কিছুই শুনছে না। লোক জড়ো হয়ে গেল চারদিকে। কিন্তু কেউ তাকে নিবৃত করতে পারছে না।

এমন সময় পাঞ্জাবি পরা বেটে করে এক লোক এসেই আমাদের সামনে হুংকার দিয়ে বলল, ‘৮ কোটি টাকার গাড়িত লাগাইছস, তরে মারি ফেলমু, তুই জানোছ তুই কার গাড়িত লাগাইছত? এইডা এমপির গাড়ি।’ আমি এবং আমার স্বামী দুজনেই তাকে বলার চেষ্টা করলাম যে, তার গাড়িতে রিকশা লাগেনি, কিন্তু তার ড্রাইভারটা রিকশাওয়ালাকে অকারণে মারছে, তাকে যেন থামায়। সে তেড়ে এসে বলল, ‘তোমরা কারা? তুমি জানো, তুমি কার সাথে কথা বইলতেছ? আমি আমি একজন এমপি। থাপ্পর মারি ফাডাই ফালামু।’

আমি তাকে বললাম, আপনি একজন জনপ্রতিনিধি। আপনার ড্রাইভার একজন রিকশওয়ালাকে মারতে পারে না। তখন সে আরো চিৎকার করে বলতে লাগলো, ‘তুমি চুপ করো। তুমি কার সাথে কতা বইলতেছ তুমি জানো। আমার মেয়েরে আমি আমেরিকায় পড়াই। প্রত্যেক মাসে ৫ লাখ টাকা পাডাই তারে আমি। তুমি কার সাথে কতা বইলতেছ।’

এই একই কথা সে বারবার বলে যাচ্ছিল যে, মেয়েকে প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা পাঠায় এবং এটা ৮ কোটি টাকা দামের গাড়ি। তখনো রিকশাওয়ালাকে মারধর চলছে।

আমরা জানতে চাইলাম, তিনি কোন এলাকার এমপি। ততক্ষণেঅনেক লোকজন জড়ো হয়ে যাওয়ায় উত্তর না দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে এবং স্থান ত্যাগ করে।

ওই এমপিকে আমরা চিনতে পারিনি, কিন্তু তার গাড়ির নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ ১৫-৩৯২২।

আমার কখনোই ধারণা ছিল না কোনো এমপির গাড়ি এভাবে রাস্তা দখল করে দাঁড়িয়ে থাকবে। এভাবে কোনো ড্রাইভার খেটে খাওয়া একজন রিকশাচালককে মারবে। কিন্তু সাধারণ যাত্রী হিসেবে তার নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে গেলে গায়ে হাত দিতে উদ্যত হবে।

শিশুসন্তান কোলে একজন নারীর দিকে এমপি নামক এই অশিক্ষিত লোক তেড়ে এসেছে বারবার। আর জানতে চাই এই এমপি প্রতিমাসে তার মেয়ের জন্য আমেরিকায় ৫ লাখ টাকা পাঠায়- কিভাবে প্রকাশ্যে এভাবে এই ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে? আর জনপ্রতিনিধি হয়ে সাধারণ মানুষের গায়ে হাত তোলার ক্ষমতা তাকে কে দিয়েছে?

এমপির নাম পাওয়া গেছে। গত সংসদের ফেনী-৩ এর স্বতন্ত্র এমপি রহিম উল্লাহ। কথা হলো সে কিভাবে এখনো নিজেকে এমপি পরিচয় দেয় এবং ফ্ল্যাগ ও জাতীয় সংসদের স্টিকার লাগিয়ে রাষ্ট্রীয় পরিচয় ব্যবহার করে। আমরা মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) সূত্র: বাংলাদেশপ্রতিদিন