ফিচার

উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে নমনীয় আ’লীগ; তৃণমূলে কাঁদা ছোড়াছুড়ি

By Daily Satkhira

February 23, 2019

রাজনীতির খবর: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে নমনীয় আওয়ামী লীগ। কারণ বিদ্রোহী দমনে কেন্দ্র থেকে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মুখেও এ নিয়ে কোনো সাড়া শব্দ নেই। কড়া কথাও শোনা যায়নি। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত থাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপিহীন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন আওয়ামী লীগ। ফলে নিজেরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। চরিত্র হননেও পিছপা হচ্ছেন না কেউ কেউ। এতে করে তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী এবং দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রাখায় কী ধরনের সমস্যা হতে পারে তা অবশ্যই আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও জমজমাট করতে দুই ভাইস চেয়ারম্যান পদ উন্মুক্ত রেখেছে আওয়ামী লীগ। আর চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী দিলেও অনেকটাই উন্মুক্তই বলা যায়।

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতেই বিদ্রোহীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের ‘উৎসাহ’ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। এতে তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাড়লেও তাতে ছাড় দিয়েই এগুতে চায় ক্ষমতাসীনরা।

দলটির নেতাদের মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফাঁদ তৈরি করতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে তারা দেশ-বিদেশে নেতিবাচক বার্তা দিতে চায়। তাই দলের তৃণমূলে সাময়িক অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা হলেও নিজেদের অবস্থানেই থাকবেন তারা। তাদের ধারণা- এ নিয়ে সাময়িক ‘উত্তেজনাকর’ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়ন শেষে এসব বিরোধ মিটে যাবে।

এ বিষয়ে সম্প্রতি এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে যদি নৌকার প্রার্থী না জিতে বিদ্রোহী প্রার্থী জিতে তাতেও আওয়ামী লীগেরই জয় হবে। কারণ তিনিও তো আওয়ামী লীগেরই। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যদি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিবাদ বাড়ে, তাতে বিএনপির লাভ কি? রেজাল্ট তো আর তাদের পক্ষে যাবে না। উপজেলা নির্বাচনে কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল বলেন, প্রার্থী হওয়ার আগে বা প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগে আমি কাউকে বিদ্রোহী প্রার্থী বলতে পারি না।

আমরা দেখছি কারা নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণার পরও বিদ্রোহ করে। এমন কেউ করলে বিষয়টি আমরা দেখব। এর জন্য প্রার্থিতা প্রত্যাহার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার প্রথম ধাপের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং সোমবার দ্বিতীয় দফার দাখিল শেষ হয়েছে। এতে অধিকাংশ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে নিজ দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’। কোনো কোনো উপজেলায় রয়েছে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে এ পর্যন্ত ১৯৪ জন বিদ্রোহী প্রার্থীর খবর পাওয়া গেছে। মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ ও নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখে বোঝা যাচ্ছে বাকি ধাপগুলোতেও এমন বিদ্রোহী থাকার আশঙ্কা আছে। নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্ট অংশ না নেয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, নির্বাচন জমজমাট করতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ছাড় দেয়ার সুযোগে সারা দেশের তৃণমূলে প্রার্থীরা পরস্পরকে ঘায়েল করতে নানাভাবে চরিত্র হননে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় প্রচারণায় একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদগারের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এর আগে এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জমা পড়ে হাজারও অভিযোগ। এ অভিযোগ আসা এখনও অব্যাহত রয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীদের কাছেও জমা পড়ছে অভিযোগ। গণমাধ্যমের কাছেও প্রার্থীরা একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। আর এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। তৃণমূলে তৈরি হচ্ছে গ্রুপ-সাব গ্রুপ।