জাতীয়

৫ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ-মাংস জব্দ : টার্গেট ছিল রমজান

By Daily Satkhira

February 27, 2019

দেশের খবর: রমজানে ঢাকায় বিভিন্ন পার্টি আর অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে। কেনাকাটায় আর খানাপিনা কার্পণ্যও নেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের। এই সুযোগটাই যেন নিতে চাইছিল প্রতারক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। বিদেশ থেকে কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে আমদানি করা মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ-মাংস মজুত করা হয়েছিল হিমাগারে। তবে ধোপে টেকেনি সে পরিকল্পনা। প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অধিদফতর এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ কোটি টাকা সমমূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল মাছ, গরু-মহিষ ও ভেড়ার মাংস জব্দ করেছে র‌্যাব-২ এর একটি দল।

জব্দ তালিকায় আরও রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ সামুদ্রিক কাঁকড়া, শামুক, ঝিনুক, সামুদ্রিক চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ, বিদেশি নুডুলস, চিকেন টিক্কা, প্যারট বিফ, চিকেন ফ্রাইডস, লবস্টার সালাদ, চিকেন ফিশার।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত অবধি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুরাতন এফডিসি রোডের (৭/সি/১ তেজগাঁও শিল্প এলাকা) সেভ অ্যান্ড ফ্রেশ ফুড লিমিটেড নামের হিমাগারে অভিযান চলে। হিমাগারে র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।

অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার এসপি মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার, ডা. ফজলে রাব্বি মন্ড্ল, ডা. রিগ্যান মোল্লা, ফারহানা রিসা, ঢাকা জেলা মৎস্য অফিসার সৈয়দ মো. আলমগীরসহ একাধিক কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত অবধি সরেজমিনে দেখা যায়, মালবাহী পিক-আপ ভ্যান থেকে নামানো হচ্ছিল মাছ-মাংসের প্যাকেট। ভবনের বিভিন্ন কক্ষ থেকে বিভিন্ন আইটেমের প্যাকেট বাইরে বের করে আনেন র‌্যাব সদস্যরা।

মাছ ও মাংসের কার্টনে দেখা যায়, ২০১০ সালে এসব মাংস প্যাকেটজাত করা হয়। এগুলোর মেয়াদ ২০১০ সালের ৪ অক্টোবর শেষ হয়ে গেছে। প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কোরাল মাছ সংরক্ষণের মেয়াদও শেষ হয়েছে দুই বছর আগে। কোনো কোনো কার্টনের মেয়াদ দুই থেকে তিন বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে দেখা যায়, কিছু কার্টনে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ পরিবর্তন করে হিমাগারে প্যাকেটজাত করে মজুত রাখা হয়েছে। এসব ব্যাপারে সদুত্তর দিতে পারেননি হিমাগার কিংবা মজুত রাখা প্রতিষ্ঠানগুলো।

এ ব্যাপারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, হিমাগারের ভেতর প্রচুর পচা মাছ ও মাংস মজুত রাখা ছিল। এখান থেকে কিছু মাংস ও মাছ সরানোর অপচেষ্টাও চলে। তবে আমরা ধরে ফেলেছি। এই হিমাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল মজুত রেখেছিল ফুড চেইন এশিয়া লিমিটেড নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এছাড়া এখানে সেভ অ্যান্ড ফ্রেস ফুড লিমিটেড, সেভি ফুড লিমিটেড ও হার্ভি ফুড লিমিটেডসহ আরও কিছু নামিদামি প্রতিষ্ঠান।

ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এখানে অভিযানে এসে আমরা খুবই হতবাক হয়েছি। ভোক্তারা টাকা দিয়ে কী কিনছেন আর খাচ্ছেনই বা কী? আরও অবাক করার বিষয় হচ্ছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে আমদানি করা হয়েছে গরু, মহিষ, ভেড়া ও খাসির মাংস। আমদানি করা হয়েছে সামুদ্রিক মাছ আর বিদেশি নুডলস।

বিশেষ করে মাংস আমদানি নিষিদ্ধ। আমদানি করলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বাজারে বিক্রির ব্যাপারে কঠোরতা রয়েছে। কিন্তু এর কোনো তোয়াক্কা না করে অনুমোদন না নিয়েই বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা হয়েছে। যার অধিকাংশ খাদ্যপণ্যই মেয়াদোত্তীর্ণ। এরপরও তা মজুত রাখা হয়েছিল কারণ সামনে রমজান। রমজানে বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁ আর সুপারশপগুলোতে চাহিদা বেশি থাকে মাছ-মাংসসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের। আর এই সুযোগটা নিয়ে রমজানে বিক্রির টার্গেটে মজুত রাখা হয়েছিল।

তিনি বলেন, হিমাগারটিতে পাওয়া যায় ১৯০ মণ মহিষের মাংস, ৮০০ মণ ভেড়ার মাংস, পাঁচ হাজার কেজি চিকেন নাগেট, ১০০ মণ ভেড়ার পাঁজরের হাড় ও ২০০ মণ গরুর মাংস। এছাড়াও বিপুল পরিমাণ বিদেশি চকলেট ও নুডুলসও জব্দ করা হয়েছে।

মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যপণ্য মজুত রাখায় সেভ অ্যান্ড ফ্রেস ফুড নামে হিমাগারকে ২০ লাখ, হিমাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য মজুত রাখায় সেভি ফুডকে আট লাখ ও ফুড চেইন এশিয়া লিমিটেডকে ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অসাধু প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমরা ভেজাল খাবার বিক্রি সরবরাহ ও মজুত হতে দিতে পারি না। যে কারণে আজকের এই অভিযান। এই অভিযানের মাধ্যমে আমি অসাধু ব্যবসায়ীদের একটা কঠোর মেসেজ দিতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাদ্যপণ্যে ভেজাল কোনোভাবে বরদাশত না করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেটা মাথায় রেখে বেশি বেশি ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে। আগামী রমজানকে কেন্দ্র করে সবাই যেন খাঁটি ও টাটকা খাবারটাই বিক্রি করেন সেটা নিশ্চিত করাসহ এ ধরনের অসাধু প্রতিষ্ঠানকে নজরদারিতে রাখা হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিনের অভিযোগ এই হিমাগার মেয়াদোত্তীর্ণ মাছ, মাংস, বিফ পেডিস, ভেড়ার হাড়, মহিষের মাংস মজুত, বিক্রি ও সরবরাহ করে আসছিল। এখানে অভিযান শেষ হলে জব্দকৃত পণ্যের পরিমাণ, কোন কোন প্রতিষ্ঠান এখানে মালামাল রাখছে তা স্পষ্ট হবে। জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।