ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়: সিইসি

জাতীয়

ভোটার না আসার দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের-সিইসি

By Daily Satkhira

February 28, 2019

দেশর খবর: ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয় বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। বলেছেন, এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের।

বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০ টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর উত্তরার ৫/এ আইএস স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্রে নিজ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন সিইসি।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নুরুল হুদা বলেন, ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত করার দায়িত্ব প্রার্থীদের। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পরিবেশ সৃষ্টি করা।

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আগেই বলেছি- দুইটি কারণে ভোটার উপস্থিতি কম থাকতে পারে। একটি হচ্ছে- স্বল্প সময়ের জন্য এই নির্বাচন, এক বছর পরে আবার নির্বাচন হবে- সেজন্য কম হতে পারে। আর সব রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে না ভাবে ভোটার কম হতে পারে।

সিইসি আরও বলেন, দিন গড়ালে মানুষ বাড়তে পারে। তবে উপস্থিতি ওই রকম সংখ্যক নাও হতে পারে।

নির্বাচন ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, আইনশৃংখলা বাহিনী নিয়োগ করে দিয়েছি। নির্বাচনী ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি আছে বলে আমরা মনে করছি না।

দুই ঘণ্টায় এই কেন্দ্রে এক শতাংশের কম ভোট পড়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনই বলা যাচ্ছে না। ভোটতো ৪টা পর্যন্ত। ৪টার পর বলা যাবে- কেমন ভোট পড়লো।

ভোট দিতে যাওয়ার আগে নির্বাচন কমিশনে যান সিইসি। কমিশনে প্রবেশকালে তিনি বলেন, নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো। কোনও সমস্যার কথা শোনা যায়নি।

এর আগে সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ। কোনো ধরনের বিরতি ছাড়াই বিকাল ৪টা পর্যন্ত উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ডে মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নতুন ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে।

এবারের নির্বাচনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে, জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান আম প্রতীক নিয়ে, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিম টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে এবং পিডিপির শাহীন খান বাঘ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আজ বৃহস্পতিবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা সাধারণ ছুটির বাইরে থাকবে।

নির্বাচন উপলক্ষে রাজধানীতে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে ২৪ ঘণ্টা যন্ত্রচালিত যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাত থেকে ১ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মহাসড়ক ছাড়াও আন্তঃজেলা ও মহানগর থেকে বের হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়ক, প্রধান প্রধান সংযোগ সড়কে নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও ডাক বিভাগের গাড়ি এই নির্দেশনার বাইরে থাকবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে সম্প্রসারিত ১৮টি করে মোট ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচন ও উত্তর সিটির ২টি ওয়ার্ডে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়াও, ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি উভয় সিটিতে ৬টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে, মেয়র ও কাউন্সিলর উভয় পদের মেয়াদ হবে এক বছরের চেয়ে কিছু বেশি সময়।

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচনে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩০৯ জন। দুই সিটিতে ১২টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিল পদে প্রার্থীর সংখ্যা ৭০ জন। এর মধ্যে ডিএনসিসির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬০ জন, সমসংখ্যাক ওয়ার্ডে ডিএসসিসিতে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৪৯ জন। অন্যদিকে ডিএনসিসি‘র ৬ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী ৪৫ জন এবং ডিএসসিসিতে ২৫ জন।

উত্তর সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি সম্প্রসারিত ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬ ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৪৩টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ৪৭২টি। মোট ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৫ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৯২ হাজার ৪২০ জন।

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে সাধারণ ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ৬টি ওয়ার্ডে মোট ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি এবং ভোটকক্ষ ১ হাজার ২৫২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন।

নির্বাচনে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বুধবার সকাল থেকেই দুই সিটিতে টহল শুরু করেছে ভ্রাম্যমাণ ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার, বিজিবি কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব দায়িত্ব পালন করবে। ডিএনসিসিতে ২৫ প্লাটুন বিজিবি এবং ডিএসসিসিতে ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে। এছাড়াও দুই সিটির মধ্যে ডিএনিসিসিতে চার প্লাটুন এবং ডিএসসিসিতে তিন প্লাটুন বিজিবি রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

দুই সিটির প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ১৯ জন এবং গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে প্রতিটি সাধারণ কেন্দ্রে ৭ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আনসার এবং ১২ জন আনসার সদস্য থাকবে লাঠি হাতে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের আড়াই বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দুই সিটিতে ২০১৭ সালে ১৮টি করে ৩৬টি নতুন ওয়ার্ড যুক্ত হয়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নির্ধারিত সময়ের এক বছর পর গত ২২ জানুয়ারি দুই সিটির তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আজ ডিএনসিসি মেয়র ও দুই সিটির ১৮টি করে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।