সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় এনজিওকর্মী রেজা’র ৩ বছরের সশ্রম কারাদন্ড

By daily satkhira

March 02, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সাতক্ষীরায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের সহকারী ম্যানেজার মহসীন আকরাম রেজা কে ৩বছর সশ্রম কারাদন্ড, অনাদায়ে ৫০হাজার টাকা জরিমানা করেছেন সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল। ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ বিচারক হোসনে আরা আক্তার এ রায় ঘোষনা করেন। মামলার বাদী সাতক্ষীরা সদরের গোপিনাথপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের কন্যা সামিনা খাতুন। এবং আসামী একই উপজেলার বড়দল গ্রামের শওকত আলীর ছেলে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন যশোর কায়েম খোলা শাখার সহকারী ম্যানেজার মহসীন আকরাম রেজা। মামলার এজাহার সূত্রে জানাগেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বড়দল গ্রামের শওকত হোসেনের ছেলে মহসীন আকরাম রেজার সাথে গোপিনাথপুর গ্রামের ইমাদুল হকের মেয়ে সামিনা খাতুনের পারিবারিক ভাবে রেজিষ্ট্রি বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মহসীন রেজা যৌতুক হিসেবে শ্বশুর বাড়ি থেকে নতুন মটরসাইকেল, ৩ভরি গহনা এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র নেন। বিবাহীত জীবনে তাদের সংসারে একটি কন্যা সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। বিয়ের ৩বছর পার না হতেই মহসীন রেজা, স্ত্রী সামিনাকে তার বাপের বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে ১লক্ষ টাকা আনতে বলে। সামিনা যৌতুকের টাকা আনতে অস্বীকার করলে তার উপরে মহসীন রেজা ও তার ছোট ভাই মোশারফ হোসেন সামিনাকে মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নির্যাতন চালায়। স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে সামিনা বাদী হয়ে যৌতুক নিরোধ আইনে ৪ধারায় আদালতে মামলা করে(মামলা সিআর নং৪৫৫/১০) পরে মহসীন রেজা স্ত্রী সামিনার কাছে যৌতুক চায়বেনা বলে ২০১০সালের ২৫ নভেম্বর আপোষ-মিমাংসার মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেয়। ২০১২সালের ২৬ অক্টবর মহসীন রেজা সামিনাকে আবারও তার বাপের বাড়ি থেকে ১লক্ষ টাকা আনতে চাপ দেয়। একই ভাবে সামিনা যৌতুক বাবদ টাকা আনতে অপারকতা প্রকাশ করলে যৌতুকলোভী স্বামী মহসীন রেজা সামিনাকে কিল, চড়, ঘুষি মেরে বাড়ি থেকে বের করে দিলে সামিনা তার শিশুকন্যা ঈষিতা আক্তার ইতিকে নিয়ে বাপের বাড়িতে চলে আসে। পরে সামিনার বাপের বাড়ি থেকে জামাই মহসীন রেজার সাথে যোগাযোগ করলে ২০১২সালের ১১ডিসেম্বর সন্ধায় মহসীন রেজা শ্বশুর ইমাদুল হকের বাড়িতে আসেন। এসময় রেজা সামিনাকে ঘরে একা পেয়ে জাপটিয়ে ধরে সামিনার ডান হাতে থাকা ১ভরি ওজনের স্বর্ণের একটি বালা জোর পূর্বক খুলে নেয়। এতে বাধা দিলে সামিনাকে ব্যাপক মারধর করে। সামিনা ডাকচিতকার দিলে রেজা ঘর থেকে দ্রুত বেরহয়ে মটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়। স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সামিনা খাতুন বাদী হয়ে ২০১২সালের ২৭ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০সংশোধনী/০৩ ধারায় সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি মামলা করে(মামলা নং-৭৪)। এর পর থেকে মহসীন রেজা দীর্ঘদিন যাবত পলাতক থাকেন। পলাতক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদরের বালুইগাছা গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করেন রেজা। পরে মহসীন রেজা যশোরে বেসরকারি সংস্থা জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করে চাকরী নেন। চাকরীরর সুবাদে যশোর এলাকায় রেজা তৃতীয় বিয়ে করেন। এদিকে সামিনা খাতুনের দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বিজ্ঞ বিচারক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি পলাতক আসামী মহসীন রেজা কে ৩বছর সশ্রম কারাদন্ড, অনাদায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে মামলার রায় ঘোষনা করেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. আলমগীর আলম বাপী। সম্প্রতি পলাতক আসামী মহসীন রেজা আদালতে আত্মসর্ম্পন করলে, আদালত আসামীকে সাজামূলে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন। বহু বিবাহের নায়ক মহসীন রেজা বর্তমানে সাতক্ষীরা কারাগারে সাজা প্রাপ্ত (কয়েদী) আসামী হিসেবে রয়েছেন। সূত্রে জানা গেছে, যৌতুক লোভী সাজাপ্রাপ্ত আসামী মহসীন রেজা নিজের চাকরী বাঁচাতে আদাতলে আত্মসর্ম্পন করার পূর্বে জাগরণী চক্র কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন তিনি সড়ক দূর্ঘনায় আহত হয়ে চিকি’সাধীন রয়েছেন। জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের নিয়োগে উল্লেখ রয়েছে প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মচারী বা কর্মকর্তা চিকি’সার জন্য ৯০দিন পর্যন্ত ছুটি কাটাতে পারবেন। ওই ছুটির মেয়াদকালে মহসীন রেজা হাই কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি নিয়ে পুন:রায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনে যোগদান করবেন বলে জানা গেছে। মামলার বাদী সামিনা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রায় ১০বছর যাবত আমার মেয়ে ইতিকে নিয়ে বাপের বাড়িতে আছি। রেজা আমাদের কোন ভরন পোষন করে না। মেয়েটি এখন ক্লাস ফোরে পড়ে তার বাবা এখন পর্যন্ত মেয়েটিকে কিছুই দেয়নি। শুনেছি জাগরণী চক্র থেকে মেয়ের লেখাপড়া বাবদ প্রতিমাসে রেজা ৩/৪হাজার টাকা করে পায় কিন্তু একটি টাকাও সে আমাদের দেয়না। মেয়েটিকে মানুষ করতে আমি নিজে একটি সংস্থায় সামান্ন টাকায় চাকরী করে আয় রোজগার করে মানবেতর জীবন-যাপন করছি।