নিজস্ব প্রতিবেদক : অনিময়, দূর্নীতি ও জমির শ্রেণি পরিবর্তনকারী সাতক্ষীরা জেলা ও সদর রেজিষ্ট্রার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে সাতক্ষীরা জেলা ভূমিহীণ ঐক্যপরিষদ। সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেন নেতৃবৃন্দ। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাতক্ষীরা ভূমিহীণ ঐক্য পরিষদের সভাপতি কওছার আলী, সহ-সভাপতি মফিজুর রহমান, হাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম হোসেন, মনিরুজ্জামান টুটুল, দপ্তর সম্পাদক বাবলু হাসান, মহিলা নেত্রী নাজমা, পৌর সভাপতি হোসেন মাহমুদ ক্যাপটেন, সহ-সভাপতি সাহিদা আক্তার ময়না, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন, প্রমুখ। স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঘুষ, দুর্নীতি ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে কালো টাকার পাহাড় গড়ছেন সাতক্ষীরা জেলা রেজিষ্টার, সাব রেজিষ্ট্রার এবং তার সহযোগীরা। এ ছাড়াও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে দলিল রেজিষ্ট্রির অভিযোগ তো আছেই। সম্প্রতি এসব ঘটনায় কয়েকজন দলিল লেখকের লাইসেন্স বাতিল হলেও থেমে নেই তাদের দুর্নীতি। জেলা রেজিষ্টার কে ম্যানেজ করে সাব রেজিষ্ট্রার ও তার সহযোগিতা অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ঘুষের টাকা আদায় করার জন্য দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস সহ কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন। জেলা রেজিস্টারের নির্দেশে সাব রেজিষ্ট্রার রফিকুল আলমের কথামত প্রতিদিন প্রায় ১০লক্ষ টাকা জনসাধারণের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের মিশন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ও্ই চক্র। জেলা ও সাব রেজিষ্ট্রারের নেতৃত্বে বর্তমানে রেজিষ্ট্রি অফিস এখন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অনিয়ম ও দুর্ণীতির শির্ষে থাকা কয়েকজন দলিল লেখক এর মধ্য হতে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে গত ইং ৩জুলাই ১৮ তারিখে দূর্নীতি দমন কমিশনের ৯৫ নং গণশুনানি অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা সদর রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতিসহ প্রভাবশালী ডর্জনর খানিক দলিল লেখক এর নামে অভিযোগ করা হয়। তার মধ্যে শীর্ষে থাকা দলিল লেখক মনিরুজ্জামান মনি (লাইসেন্স নং-০৯/০৬) আবুল কাশেম, রুহুল কুদ্দুস, এম এম. মজনু, শেখ মফিজুর রহমান, শেখ মাহবুুব উল্লাহ, হায়দার আলী, ওমর ফারুক, শেখ ইসতিয়ার, নাছির উদ্দীন, আল মাহমুদ সহ আরো কয়েকজন মিলে সাতক্ষীরা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সরকারি রাজস্ব ফাকির আখড়ায় পরিনত করে। সাতক্ষীরা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাতক্ষীরা সহকারি সেটেলমেন্ট অফিস ও বিভিন্ন তহশিলদারদের সিল ও স্বাক্ষর জাল করে দলিল রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করেন। যার প্রমাণ গত ৮ জুলাই ১৮ তারিখে ৫২৫১ নং দলিলে তহশিলদার মোকলেছুর রহমান ও তৎকালিন সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাতক্ষীরা এর স্বাক্ষর জাল করে মাছখোলা মৌজার ১৩-১৪ সালের ৮৯৫ নং কেসের ২৫৩৫ নং হোল্ডিং এর ৪০৬/১ খতিয়ানে ৬৭৫ দাগের জমি জাল মিউটিশন দ্বারা দূর্নীতিবাজ দলিল লেখক মনিরুজ্জামান মনির সহকারী আনছার আলীর দ্বারা দলিলটি রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করেন। এরকম জাল মিউটিশন দ্বারা হাজার হাজার দলিল সাতক্ষীরা সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি করা হয়। এতে করে দূর্নীতিবাজ দলিল লেখক ও সুবিদাভোগী জেলা রেজিস্টার মুন্সি রুহুল ইসলাম হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে চাকুরিতে বহাল রয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা রেজিষ্ট্রার মুন্সি রুহুল ইসলাম। অথচ গত ১ বছরে পূর্বেই তাকে অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু জন্ম তারিখ জালিয়াতি করে চাকুরিতে বহাল রয়েছেন তিনি। চাকুরির প্রথম জীবনের খেদমত বইএর চাকুরির অনুলিপির কপিতে সিরিয়াল নং ২৩২ এ তিনি তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেছিলেন ৩০ নভেম্বর ১৯৫৮ সাল। সে অনুযায়ী তার অবসরে যাওয়ার কথা গত ২০১৭ সালের ২৯ নভেম্বর। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরির মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধি পাওয়ায় তার অবসরে যাওয়ার কথা ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে। কিন্তু ২০১৮ সালে এসে সাতক্ষীরা জেলা রেজিষ্ট্রার অন্য একটি খেদমত বইতে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৯৫৮ সালের পরিবর্তে ১৯৫৯ সাল করেছেন। আর ওই জাল জন্ম তারিখ দেখিয়ে তিনি চাকুরিতে বহাল থেকে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন। সম্প্রতি গত ২৮ জানুয়ারি’১৯ তারিখে ৭৬৫ নং একটি দলিল রেজিষ্ট্রি করেছেন সদর সাব রেজিষ্ট্রার রফিকুল আলম। যার এস এ – ২৮৬৭ নং খতিয়ান, এস এ দাগ নং- ৩৯৩০, শ্রেণি লেখা ডাঙ্গা, হাল দাগে ৪৫৩৪, শ্রেণি লেখা ডুবা, ৪২৮৫ দাগে শ্রেণি লেখা কবর স্থান, ৪২৮৬ দাগে শ্রেণি লেখা বাড়ি। যার বর্তমান ডিপি ১৬৯৮ নং খতিয়ান। অথচ ওই সম্পত্তি বিলান দেখিয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে রেজিষ্ট্রি করেছেন সদর সাব রেজিষ্ট্রার রফিকুল আলম। রেজিষ্ট্রি করার পর ওই টাকা জেলা এবং সাব রেজিষ্ট্রার মিলে ভাগবাটোয়ারা করেছেন বলেন রেজিষ্ট্রি অফিসসূত্র জানিয়েছে। এদিকে জালিয়াতির মাধ্যমে চাকুরিতে বহাল থেকে অবৈধভাবে লক্ষ টাকা আদায় করছেন তিনি। পাওয়ার হেবা নামা দলিল করে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ লাইসেন্স হারানো খায়রুল ইসলাম খোকন পাওয়ার থেকে হেবা দলিল রেজিষ্ট্রি করেও তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে তার লাইসেন্স ফিরিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে বহিস্কার হওয়া দলিল লেখক মনিরুজ্জামান মনির বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তারপরও ওই মনিরুজ্জামান মনি চলতি সালের ফেব্রুয়ারি মাসের সোনালী ব্যাংকের ২০লক্ষ টাকার মটগেজে ২নং মিউটিশনের কাগজ দিয়ে মটগেজ রেজিষ্ট্রি করেছেন। উক্ত কাজের জন্য তার কাছ থেকেও সাব রেজিষ্ট্রার রফিকুল আলম মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ইতোপূর্বে আমরা ওই দুর্নীতিবাজ সাব ও জেলা রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করলেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নি। নেতৃবৃন্দ ওই দুর্নীতিবাজ সাব রেজিষ্ট্রার ও জেলা রেজিষ্ট্রারের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।