আজকের সেরা

পুলিশের খাঁচায় সোনা চোরাচালানি মিলন/খেতে দেখতেই কোটিপতি, ইটভাটা, খাটাল, বাগানবাড়ি, বহুতল ভবন মালিক

By Daily Satkhira

September 03, 2016

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিলন পাল। বহুল আলোচিত নাম। মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যাওয়া মিলন পাল। কিছুদিন আগেও যাকে দেখা গেছে শহরের খান মার্কেটের উপরতলায় জুয়েলারি দোকানে কর্মকারের কাজ করতে। সেই মিলন, এখন পুলিশের খাঁচায়। পুলিশ বলছে তাকে সোনা চোরাচালানের মামলায় তুলে আনা হয়েছে। এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ খবর শনিবার  রাত সাড়ে ৮ টার। মিলন মাগুরার কুখ্যাত চোরাচালানি জাহাঙ্গীরের বাড়ি প্রাপ্য টাকা মুলে কিনে নিয়েছে দেড় কোটি টাকায়। সেই বাগান বাড়ির ওপর তলায় এক মহিলা সাংসদপুত্রসহ কয়েক মদ্যপ সাঙ্গপাঙ্গর সাথে শনিবার সন্ধ্যায়  আড্ডা মারছিল। এ সময় পুলিশ বাগানবাড়ির নিচতলায় যেয়ে তাকে ডাক দেয় দেয়। মিলন নিচে নেমে আসে। এরপর তাকে তুলে আনা হয় থানায়। এ অবস্থা দেখে তার সাঙ্গপাঙ্গরা পালিয়ে গেছে বাগানবাড়ি থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি সাংবাদিকদের জানান, তার বাগানবাড়িতে সব সময় বিভিন্ন স্থান থেকে কলগার্ল এনে ফুর্তি করা হয়। হাইফাই লাক্সারি গাড়ি যোগে কলগার্লসহ প্রাায় সময় তাকে ওই বাগান বাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়। সব সময় ওর মধ্যে লিলা খেলা চলছেই। খুব অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ায় মাগুরা এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে ইতোমধ্যে তিনি পরিচিতি লাভ করেছেন। প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। তারা আরো জানান, তার সাথে জেলার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্য বদলি হওয়া একজন উচ্চপদস্থ কর্মতাসহ কিছু অসাধু লোকজনের সখ্যতা থাকার কারণে তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তার কাছ থেকে তারা অবৈধ সুযোগ সুবিধাও নিয়ে থাকেন। পুলিশ বলছে শুক্রবার সাতক্ষীরার তলুইগাছা সীমান্তে ১৬ কেজিরও বেশি সোনা ভারতে পাচারকালে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি। এই সোনার সাথে জড়িত ধুরন্ধর স্মাগলার মিলন পাল নিজেও, এমন অভিযোগ পুলিশের কাছে। সেই সাথে আরও জানা গেছে জব্দ হওয়া সোনার সাথে জুড়ে রয়েছে বাঁশদহার চোরাঘাট মালিক সোনা চোরাচালানি নাজমুল হোসেন, তলুইগাছার গোল্ড  হাসান, বাঁশদহার এক জাতীয় পার্টি নেতা এবং একজন এপিপি। এদের  নেপথ্য  নায়ক মিলন পাল বলেও খবর পাওয়া গেছে। এর আগে শুক্রবার সোনাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হওয়া কেড়াগাছি চারাবটতলার আলিউজ্জামান বিজিবিকে জানিয়েছিল এই সোনার নেপথ্যে আরও তিনজন মহিদুল মেম্বর, রুস্তম ও ফিরোজের নাম। তদন্ত করলে এ বিষয়ে আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে। মিলন পালের বাবার নাম দেবদাস পাল। যশোরের কেশবপুরে তার আদি বাড়ি। কয়েকবছর আগে সে সাধারণ জুয়েলারি কর্মচারী হিসাবে কর্মকারের কাজ করতো। এর মধ্য থেকেই সে হয়ে ওঠে একজন হুন্ডি ব্যবসায়ী। ভারতীয় গরুর খাটাল বাণিজ্যেও নেমে পড়ে মিলন। সাম্প্রতিককালে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যে গরু বাংলাদেশে আসতো তার মূল্য মেটাতো মিলন পাল। গরু ব্যবসায়ীরা তার কাছে টাকা দিতো। আর মিলন সেই টাকায় সোনা কিনে তা পাঠাতো ভারতে গরু বিক্রেতাদের কাছে। এভাবেই সে বড় ধরনের সোনা চোরাচালানি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। বছর খানেক আগে মাগুরা জেলা পুলিশ সাতক্ষীরামুখী একটি নৈশ কোচ থেকে আট কেজি সোনাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। তারা জানিয়েছিল এই সোনার মালিক সাতক্ষীরার  দাদু। সেই দাদুকে খুঁজতে মাগুরা পুলিশ সাতক্ষীরায় এসেছিল। কিন্তু দাদুকে আর ধরতে পারেনি। সে সময় প্রচার লাভ করেছিল এই দাদু আর কেউ নয় মিলনের টেক নাম দাদু। মিলন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচার রয়েছে তৎকালীন জেলার আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তা যিনি সদ্য বদলি হয়ে গেছেন, তার প্রভাবে মিলন ধরাকে সরা জ্ঞান করে এতদিন চুটিয়ে সকল প্রকার চোরাকারবারী কাজ চালিয়ে এসেছে। সাতক্ষীরার পদ্মশাকরা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী সাহেব আলিকে গত রোজার মাসে বাড়ি থেকে তুলে আনে মিলন বাহিনী। তারপর এক এমপিপুত্র তাকে লোহার রড দিয়ে পেটায়। পরে তার কাছ থেকে মিলন পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। মিলন সে সময় জানিয়েছিল সে সাহেব আলির কাছে ব্যবসায়ীক টাকা পাবে। আর সাহেব আলি বলেন তার কাছে ৩৯ হাজার টাকা পেতো মিলন। সে টাকা দিতে বিলম্ব হচ্ছিল গরুর ব্যবসা না থাকায়। তাই তাকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পাঁচ লাখ টাকার চেকে জোর করে সই করিয়ে নেয়। সাহেব আলি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। থানায় মামলাও জমা দেন। কিন্তু ধুরন্ধর স্মাগলার মিলন ও মহিলা এমপি পুত্রের প্রভাব এতো বেশি ছিল পুলিশের ওপর, যে সে মামলাটি আর রেকর্ড পর্যন্ত হয়নি। মিলন এখন ইটভাটা মালিক। বেনেরপোতায় তৈরি করেছে একটি ইটভাটা। শহরের সুলতানপুর সাহাপাড়ায় বহুতল আলিশান বাড়ি তৈরি করেছে মিলন। মিশন প্রাইমারি স্কুলের পশ্চিম পার্শ্বে জমিও কিনেছে সে। এক নারীর সাথে অনৈতিক মেলামেশার কারণে ক্ষুব্ধ মিলনের স্ত্রী কুমিরার শম্পা পাল কিছুদিন আগে কীটনাশক খেয়েছিলেন। তিনি প্রাণে বেঁেচে গেলেও স্বামীর ঘরে এখনও ফিরে আসেননি। শারীরিকভাবে অসুস্থও তিনি। মিলন পালের একটি মাইক্রো ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। তা ব্যবহৃত হয় স্মাগলিংয়ের কাজে। আর তার বাহিনীর মাস্তানি সার্ভিসে।