সাতক্ষীরা

ছাত্রলীগ নেতা ইমন হত্যা: আলমের পরিকল্পনায় ইমনকে হত্যা করে রনি ও সাইফুল!

By Daily Satkhira

February 15, 2017

এম বেলাল হোসাইন/শেখ শরিফুল ইসলাম: ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাসিবুল হাসান ইমন হত্যা মামলায় রিয়াজুল ইসলাম রনি মোল্ল্যাকে দু’দিনের রিমা- শেষে ও সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের পুলিশ সদস্য আব্দুল ওহাবের ছেলে সাইফুল ইসলামকে শুক্রবার রাতে শহরতলীর মাছখোলা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।  এদিকে পুলিশ ইমন হতাকা-ে ব্যবহৃত লোহার পাইপ উদ্ধার ছাড়াও হত্যার ঘটনায় আলম, রনি ও সাইফুলের যোগসূত্র পেয়েছে। সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবদের জন্য রোববার আদালতে ১০ দিনের রিমা- আবেদন জানানো হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি রাতে সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের কলেজ ছাত্র জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হাসান ইমনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। ১৮ জানুয়ারি রাতে নিহতের চাচা আলমগীর আলম লিটন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ইমনের আত্মীয় বিপ্লব ও মুরাদকে বাদির ইঙ্গিতে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তদন্তে নেমে রনিকে গ্রেফতার করে। প্রথম দফায় বিপ্লব ও মুরাদকে থানা হাজতে ও রনিকে কারাফটেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরবর্তীতে বিপ্লবকে রিমা-ে নেওয়া হয়। সবশেষে গত বৃহষ্পতিবার রনিকে থানা লকআপে, বিপ্লব ও মুরাদকে কারাফটকে দু’দিন করে রিমা-ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিদেশে অবস্থানকালে রনির স্ত্রীর সঙ্গে ইমনের পরকীয়া, বাবার অংশের জমি ও বিক্রি জমির টাকা জন্য চাচা আলমের উপর চাপসৃষ্টি, চাচা আলমের বাড়ি থেকে আড়াই লাখ টাকা চুরি করে নিয়ে খুলনায় পালিয়ে যাওয়া, ইমনের কাছে বিপ্লবের দেড় লাখ পাওনা টাকা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে তদন্তটিমের চার সদস্য ছাড়াও সদর সহকারি পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেরিনা আক্তার এগোতে থাকেন।  বাড়তি সতর্কতা হিসেবে সাংবাদিক ও বিশিষ্ট জনেরা যাতে ইমনের বাবা ও মায়ের সঙ্গে কথা বলতে না পারে সেজন্য আলমগীর হাসান আলম বাড়ির প্রধান ফটকে পাহারা বসান। মোবাইল সিডিআর যাঁচাই করে শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার মাছখোলা বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় শহিদ স.ম আলাউদ্দিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাইফুল ইসলাম (৫০)কে। বাদির বিরুদ্ধে যখন ইমন হত্যাকা-ের অভিযোগ দানা বেঁধে উঠছিল ঠিক তখনই পুলিশের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে ইমনের স্বজনদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইমনের বাবা ইকবাল কবীর লিটনকে দিয়ে ২০০১ সালে আশাশুনি থানার হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি আলমকে কলিজার টুকরো ভাই বলে সম্বোধন করানো হয়। সূত্রটি আরো জানায়, পুলিশ বৃহষ্পতিবার রনিকে রিমা-ে নিয়ে ইমন হত্যার সঙ্গে সাইফুল ও আলম জড়িত বলে নিশ্চিত হয়। একইভাবে ইমন কীভাবে, কেন খুন হলো তা জানতে সাইফুলকে শুক্রবার রাতে আটক করে পুলিশ। যদিও সাইফুলের পরিবারের পক্ষ থেকে বাড়ি থেকে আটকের তারিখ এক সপ্তাহ আগে বলে দাবি করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ও পুলিশকে দেওয়া ১৬১ ধারার জবানবন্দিতে সাইফুলকে ১৬ জানুয়ারি রাতে ডে-নাইট কলেজের পাশে একটি চায়ের দোকানে আলম তাকে চা খেতে বলে দোস্ত একটি কাজ করে দিতে হবে বলে জানায়। পরে মোবাইলে যোগাযোগ করে রনির সহায়তায় সাইফুলকে দিয়ে ইমনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ১৭ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে চাচা আলমের বাড়ি থেকে বের হয়ে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে ইমন বেরিয়ে যায়। পরে রনি ও ইমন ভ্যানযোগে মাছখোলা ব্রীজ এলাকায় যায়। সেখান থেকে পায়ে হেঁেট কামারডাঙা স্লুইজ গেট হয়ে তারা আমতলা বেড়িবাঁধের দিকে হাঁটতে থাকে। এ সময় পিছন দিক থেকে মোটর সাইকেলে সাইফুল এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। পরে ইমনকে লোহার পাইপ দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। লাশ ফেলে দেওযা হয় ইকবাল বিশ্বাসের মাছের ঘেরে। সাতক্ষীরা আদালত সূত্র জানায়, রিমা- শেষে রনিকে শনিবার বিকেল তিনটার দিকে আদালতে আনা হয়। বিকেল ৫টার দিকে পুলিশভ্যান সামনে রেখে পিছনে সাইফুলকে এম্বুলেন্সে করে আদালতে আনা হয়। সাড়ে ৫টার দিকে সাইফুলকে বিচারিক হাকিম মুনিয়া জাহিদ নিশার খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় সে ক্ষুধার্ত বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বোকা বানাতে খাবার চায়। একপর্যায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হচ্ছে সাইফুলের এমন বক্তব্যের পর জবানবন্দি না নিয়েই কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর আগে সাইফুলকে আদালত পরিদর্শকের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে গারদে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হলে সে তদন্তকারী কর্মকর্তা আলমগীর কবীর চলে না যাওয়া পর্যন্ত যাবে না বলে জানায়। তবে সাইফুলের বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে আলম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের মারের ভয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে, যার কোন ভিত্তি নেই। তিনি তার ভাইপো’র বিচার দাবি করে বলেন, একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে। সাতক্ষীরা আদালত পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জানান, সাইফুল ও রনির বক্তব্যে ইমন হত্যার বিষয়টি আলোর মত পরিষ্কার হয়ে গেলেও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি না দেওয়ায় তা প্রতিষ্ঠিত হলো না। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আলমগীর কবীর শুক্রবার রাতে মাছখোলা বাজার এলাকা থেকে সাইফুলকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের কাছে দেওয়া ইমন হত্যা সম্পর্কিত তথ্য যাঁচাই করে শনিবার সন্ধ্যায় মাছখোলা ব্রিজের নীচে নদীর চরে ফেলে দেওয়া ইমন হত্যাকা-ে ব্যবহৃত লোহার পাইপটি উদ্ধার করা হয়েছে। আলমের পরিকল্পনায় রনির স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়াকে ব্যবহার করে পেশাদার হত্যাকারী হিসেবে সাইফুলকে দিয়ে রনির সহায়তায় ইমনকে হত্যা করা হয়েছে এমন কথা অস্বীকার না করেই বলেন, পুলিশের কাছে ১৬১ ধারার জবানবন্দি কোন কাজে আসবে না যদি না আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না পাওয়া যায়। বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার কথা বলে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ায় সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোববার আবারো ১০ দিনের রিমা- চাওয়া হয়েছে।