শিক্ষা সংবাদ: ডাকসু নির্বাচনে সু্ষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হয়েছে দাবি করে যে কোনো ধরনের অনিয়ম বা কারচুপির প্রমাণ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (১৬ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। এসময় নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলোরও ব্যাখাও দিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।
‘ডাকসু নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য ও মন্তব্য সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ শিরোনামের ওই প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু বিষয়ে কিছু সম্মানিত ব্যক্তি টকশোতে এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও মন্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এসব বক্তব্য তাদের সেই মন্তব্য গুলোর ব্যাখ্যা। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনে ৪৫০ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলে টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে বিভিন্ন পর্বের কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এখানে এককভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে কারও কোনও কাজের সুযোগ ছিল না।
গত ১১ মার্চ ২০১৯ সোমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত কতিপয় বিষয়ে কিছু সম্মানিত ব্যক্তির টকশোতে এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্য ও মন্তব্যের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদান করা হলো।
দীর্ঘ লাইন সম্পর্কে ব্যাখ্যা
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, কালক্ষেপণ প্রভৃতি বিষয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্তব্যকে হল প্রশাসন বিবেচনায় রেখেছিল। যাতে কোনও কৃত্রিম সংকট তৈরি বা ভোগান্তি না হয় সেজন্য ভোট দেওয়ার সময় ও ভোটার সংখ্যা আমলে নিয়ে পর্যাপ্ত সংখ্যক বুথ তৈরি ও ব্যালট পেপার সরবরাহ-টেবিল স্থাপন করা হয়েছিল। অধিকন্তু, সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ, রিটার্নিং অফিসার, আবাসিক শিক্ষকবৃন্দ ও বিএনসিসি’র সদস্যবৃন্দ মাইক ব্যবহার করে ভোটার-লাইনে যাতে স্থবিরতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য অনুরোধ করেছেন। ফলে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব ভোটকেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনের অবসান ঘটে এবং উপস্থিত সকল শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের কম-বেশি, আগে-পরে স্বাচ্ছন্দে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করতে সক্ষম হয়।
ভোট না দিতে পারার অভিযোগের ব্যাখ্যা
কেউ ভোট দিতে পারেননি, কারো ভোট অন্য কেউ দিয়েছেন, কেউ হেনস্তার শিকার হয়েছেন-এমন কোনও অভিযোগ কোনও রিটার্নিং অফিসার পাননি।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলের ঘটনার ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। অবশ্য ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্বেই এটি চিহ্নিত হওয়ায় বড় ধরনের কর্মবিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়। ভোটকেন্দ্রের বুথ সংলগ্ন একটি কক্ষ থেকে ব্যবহৃত (সিল মারা !) ব্যালট ভর্তি একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি উপাচার্য মহোদয় অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওই হলের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশ দেন। চিফ রিটার্নিং অফিসার নতুন করে সংশ্লিষ্ট হলের ব্যালট পেপার ছাপিয়ে নতুন ঘোষিত সময়ানুসারে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনও অস্বচ্ছতা বা শৈথিল্যের প্রশ্ন অবান্তর।
রোকেয়া হলের ঘটনার ব্যাখ্যা
অত্যন্ত বিভ্রান্তিকরভাবে রোকেয়া হলে ব্যালট পেপার উদ্ধারের কথা বলা হয়। মূলত ওই ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ছিল না; চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক প্রেরিত ট্রাংকের মধ্যে সংরক্ষিত ছিল। সেসব ব্যালট পেপারে কোনও সিল মারা ছিল না; ছিল অক্ষত, অর্থাৎ প্যাকেটভর্তি, অব্যবহৃত। নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপারগুলো নির্ধারিত টেবিল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ভোটারদের সরবরাহ করা হয়। কোনও টেবিলের ব্যালট পেপার শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকরা নির্ধারিত ট্রাংক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপার সংশ্লিষ্ট টেবিলে প্রদান করেন। ব্যালট পেপারের নিরাপত্তার জন্য এটিই সর্বোত্তম পন্থা।
কারচুপির প্রমাণ আহ্বান
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যদি ভোটের কোন অনিয়ম, অসততা, কারচুপি, জালিয়াতি প্রভৃতির বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ কারও কাছে থাকে, তাহলে সেসব সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী/প্যানেল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যারা ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও বড় ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে তথা দেশে অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের সুযোগ খুঁজছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যবোধ ধারণকারী শিক্ষার্থীরা পূরণ হতে দেয়নি।
উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ক্যাম্পাসে কেউ কেউ লাশের রাজনীতিরও পরিকল্পনা করেছিলেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে অপরাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনও কোনও মহল/ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই ছাড়াই ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে মনগড়া মন্তব্য ও ব্যাখ্যা প্রদান করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন, সর্বোপরি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন, যা কোনোক্রমেই কাম্য হতে পারে না।
এতে আরও বলা হয়, সুশৃঙ্খলভাবে, আনন্দঘন পরিবেশে, লাইনে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভোটদান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা এবং নির্বাচনের পূর্বে ও নির্বাচনকালে, বিচ্ছিন্ন দুএকটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা ব্যতীত, ক্যাম্পাসের সার্বিক শান্তিপূর্ণ ও সহাবস্থানের অসাধারণ দৃষ্টান্তকে প্রশংসা করার উদার মানবিক মূল্যবোধ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে বিরাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতি গভীরভাবে উপকৃত হবে বলে মনে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।