ন্যাশনাল ডেস্ক: বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের জাতীয় জীবনে একটি গৌরবোজ্জল অধ্যায়। বাংলা ভাষার প্রতি নি।স্বার্থ ভালোবাসা থেকে বায়ান্নর ভাষা সংগ্রামীরা পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বুলেটের সামনে নিজেদের বুক পেতে দিয়েছিলেন। তখনকার সময়ের ছাত্র-শিক্ষক-জনতার বুকের সেই রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রাণের বাংলা ভাষার অধিকার। প্রায় দেড় যুগ আগে থেকে ভাষা শহীদদের বিরল এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানিয়ে সারাবিশ্বের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম এই ভাষা সংগ্রামীদের সম্পর্কে কতোটুকু জানতে পারছে? বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ালেখা করা শিক্ষার্থীদের অবস্থা একেবারেই নাজুক। দু:খজনক হলেও সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে একুশে ফেব্রুয়ারি উপলেক্ষ্যে রাজধানীর একটি ‘স্বনামধন্য’ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একটি ব্যানার আমরা লক্ষ্য করেছি। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে ভাষা শহীদদের ছবির বদলে দেওয়া হয়েছে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি! এর মানে হচ্ছে, ইংরেজি মাধ্যমের ওই স্কুলের শিক্ষক ও দায়িত্বশীলরা বায়ান্নর ভাষা শহীদ এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের কাউকেই চেনেন না! আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে তারা শিক্ষার্থীদের কী শেখাচ্ছেন তা এই ঘটনা থেকে সহজেই বুঝা যায়। তবে এমন ঘটনা এবারই প্রথম নয়, বরং এর আগে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ধরণের ঘটনা ঘটেছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্মরণে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলের ব্যানারে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বেগম রোকেয়া হলের’ শিক্ষার্থীরা দিয়েছিল আরেক মহীয়সী নারী নুরজাহান বেগমের ছবি! সেখানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত থাকলেও তারা শিক্ষার্থীদের এই ভুলের বিষয়ে কিছু বলেননি। আমরা মনে করি, বিষয়গুলো ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিছক ভুল নয়, বরং জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব আত্মপরিচয়ের ব্যাপারে সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার সীমাহীন উদাসীনতার বহি:প্রকাশ। পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোর পাঠ্যবইয়ে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাস বাদ দিয়ে তাদের নিজস্ব পাঠ্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতার লাগাম শক্ত হাতে টেনে ধরতে হবে বলেও আমরা মনে করি। তাছাড়া আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাস বাদ দিয়ে শিক্ষার্থীরা যে ইংরেজিটা ভালোভাবে শিখছে সেটাও কিন্তু আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখছি না। এই বিষয়গুলো খুব গুরুত্বের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের ভেবে দেখা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। একইসঙ্গে ভাষার মাসে ওই ভুলের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ওই স্কুলে পড়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের জাতিসত্তার গৌরবোজ্জল ইতিহাস সম্পর্কে তাদেরকে জানতে বাধ্য করতে হবে। তারা কোন প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এই ব্যানার করালেও নিজেরা কোনভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না। এটা কোনভাবেই ব্যানার তৈরির দায়িত্বে থাকা কর্মীর ভুল বলে গণ্য হতে পারে না।