দেশের খবর: রাজধানীর বসুন্ধরায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে নর্দ্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়লেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
শেষ পর্যন্ত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতেই বাধ্য হন তারা।
বুধবার (২০ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে বসুন্ধরা গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এর খানিকক্ষণ আগেই ওই এলাকায় একটি ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মেয়র ও ডিএমপি কমিশনারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বসুন্ধরা গেট এলাকার ওই ফুটওভারব্রিজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর মেয়র ও ডিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানাতে যান। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসময় দফায় দফায় দাবিনামা পেশ করা হয়। তারা অবিলম্বে সড়কে সুপ্রভাত পরিবহন ও জাবালে নূর (গত বছরের জুলাইয়ে কুর্মিটোলা এলাকায় এই পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল শহিদ রমিজউদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী) পরিবহনের লাইসেন্স বাতিল ও চলাচল বন্ধের দাবি জানান।
ডিএমপি কমিশনার শিক্ষার্থীদের বলেন, সুপ্রভাত পরিবহনের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। আগামীকাল থেকে আর এ বাস চলবে না। আর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জাবালে নূর পরিবহনের চলাচলও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এসময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ভুয়া, ভুয়া বলে স্লোগান দিতে থাকেন। তাকে বক্তব্য থামাতে বলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আপনারা এর আগেও কথা দিয়েছিলেন, সেই কথা রাখেননি। যার কারণে আবার আমাদের প্রাণ গেল, আবার আমাদের মাঠে নামতে হলো।
এসময় কমিশনার আরও বলেন, আপনারা আমাদের দমাতে পারবেন, মারতেও পারবেন, গালিও দিতে পারবেন কিন্তু আজ যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা শেষ হবে না। আসুন, আমরা সবাই মিলে সমস্যার সমাধান করি। শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে তিনি কথা বন্ধ করতে বাধ্য হন।
এর মধ্যে বিইউপি উপাচার্য মেজর জেনারেল এমদাদুল বারী শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে তখনও শিক্ষার্থীরা ভুয়া, ভুয়া স্লোগান দিতে থাকে। মানি না, মানব না, বিচার চাই, বিচার চাই, ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না, প্রশাসনের প্রহসন মানি না মানব না— এমন স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। এসময় মেয়র আতিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করলে তিনিও শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন।
মেয়র শিক্ষার্থীদের বলেন, আমি তোমাদের ভাই। আমি তোমাদের নগরপিতা। আমি তোমাদেরই একজন প্রতিনিধি। আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।
মেয়র বলেন, আপনারা যে সমস্যায় পড়েছেন, সেই সমস্যার সমাধানে আপনাদের সঙ্গে আমরাও একমত। এ সমস্যা আমাদেরও সমস্যা। কাজেই জনগণের দুর্ভোগ আমরা না করে সড়ক ছেড়ে দেই, আর সমস্যার সমাধানে মন দেই।
এসময় শিক্ষার্থীরা মেয়রকে মাইক ছেড়ে নেমে যাওয়ার আহ্বান জানান। এরপর মেয়র কথা বলতে চাইলেও আর বলতে পারেননি। পরে ডিএমপি কমিশনার ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) আবরার আহমেদ চৌধুরী বাসের চাপায় প্রাণ হারান।