বিশেষ সংবাদ: কন্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার মৃত্যুর সংবাদটি নিশ্চিত করেছেন গায়ক শফিক তুহিন।
জানা গেছে, তিনি হার্টএটাকে মারা গেছেন।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ জন্ম ১৯৫২ সালের ২ জানুয়ারি ঢাকায়। শিল্পী পরিচিতি পান ছোটবেলাতেই। মাত্র ১১ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। সেই থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত গান করেছেন। টেলিভিশনে গান গাইতে শুরু করেন ১৯৬৪ সাল থেকে। শাহনাজ রহমতুল্লাহ সত্তরের দশকে অনেক উর্দু গীত ও গজল গেয়েছেন। প্রখ্যাত গজলশিল্পী মেহেদী হাসানের কাছে গজল শিখেছেন তিনি।
১৯৭৩ সালে তিনি আবুল বাশার রহমতুল্লাহ সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক মেয়ে নাহিদ রাহমত উল্লাহ এবং এক ছেলে একে এম সায়েফ রহমত উল্লাহ। সঙ্গীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার’সহ বহু সম্মানায় ভূষিত হয়েছেন।
প্রায় সাত বছরেরও বেশি সময় যাবত সঙ্গীতাঙ্গন থেকে নিজেকে গুটিয়ে ধর্মপরায়ণতা আর ঘর-সংসার নিয়েই সময় কাটে তাঁর। প্রশ্ন রাখি যদি মনের মতো গীতি কবিতা, সুর আপনার জন্য করা হয় আর কী গাইবেন কখনো? এমন প্রশ্নের জবাবে শাহনাজ রাহমত উল্লাহ বলেন, যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনোদিনই গাইবো না। সুতরাং আর কোনোদিনই গান গাইবো না। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে চাই।
শাহনাজ রহমতুল্লাহ কন্ঠে এদেশের মানুষ শুনে এসেছেন কালজয়ী বেশ কিছু গান। একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়, এক নদী রক্ত পেরিয়ে, আমার দেশের মাটির গন্ধে, একতারা তুই দেশের কথা বলরে আমায় বল, সাগরের তীর থেকে, যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়, খোলা জানালা, পারি না ভুলে যেতে, ফুলের কানে ভ্রমর এসে ইত্যাদি তাঁর গাওয়া বিখ্যাত ক’টি গান।
বিয়ের পর তিনটি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেছিলেন শাহনাজ। খান আতাউর রহমানের সুরে ‘আবার তোরা মানুষ হ’, আলাউদ্দীন আলীর সুরে ‘সাক্ষী’ ও আনোয়ার পারভেজের সুরে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করেন। এর মধ্যে ‘ছুটির ফাঁদে’ চলচ্চিত্রে গাওয়া ‘সাগরের সৈকতে কে যেন দূর থেকে’ গানটির জন্য প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
তার ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন এদেশের প্রখ্যাত একজন সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। আরেক ভাই জাফর ইকবাল ছিলেন এদেশের চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক। বিবিসির জরিপে সর্বকালের সেরা ২০টি বাংলা গানের তালিকায় শাহনাজ রহমতুল্লাহ’র গাওয়া চারটি গান স্থান পায়। এর মধ্যে আনোয়ার পারভেজের সুর করা দু’টি গান এবং খান আতাউর রহমান ও আবদুল লতিফের সুরে দু’টি গান রয়েছে।