জাতীয়

ভূমি ব্যবস্থাপনায় আসছে আমূল পরিবর্তন

By Daily Satkhira

March 27, 2019

দেশের খবর: ভূমি ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছে সরকার। এখন থেকে জমির খতিয়ানে বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নামও যুক্ত হচ্ছে। ভূমির মালিকের সম্পত্তির সুরক্ষায় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা নাগরিকের জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ানে উল্লেখ করতে হবে।

পাশাপাশি ভূমির শ্রেণী এক হাজার ১২৪টি থেকে কমিয়ে ১৬টি করা হয়েছে। হয়রানি বন্ধে ভূমির শ্রেণীর জটিলতা দূর করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বিষয়গুলোর সত্যতা নিশ্চিত করে ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারি সোমবার বলেন, জমির বিদ্যমান খতিয়ান ফরম আরও সহজ ও যুগোপযোগীকরণের লক্ষ্যে ফরমটি সংশোধন করা হয়েছে। আগে বাবার নাম ও ঠিকানা থাকত। এখন থেকে মায়ের নাম যুক্ত করা হয়েছে। এতে জমির মালিকানায় মায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। অনেক সময় মা ও বোনদের ঠকানো হয়।

এটা যাতে না হয় সেজন্য মায়ের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভূমির মালিকের সম্পত্তির সুরক্ষায় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা নাগরিকের জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ানে উল্লেখ করতে হবে। এতে যখন গেজেট হবে তখন যে কেউ অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর বা নাগরিকের জন্ম রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে ক্লিক করলে খতিয়ান দেখতে পারবে।

জমির শ্রেণীর সংখ্যা কমিয়ে ১৬ নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে ভূমি সচিব মাকছুদুর রহমান আরও বলেন, বর্তমানে সব ধরনের ভূমিকে বন, পাহাড়, নদী, জলাভূমি, রাস্তা, টার্মিনাল, বন্দর, আবাদি, আবাসিক, অফিস, বাণিজ্যিক, শিল্প, বিনোদনকেন্দ্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্মৃতিস্তম্ভ ও ধর্মীয় স্থান-শ্রেণীতে বিভক্ত করে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এখন থেকে হাল জরিপের ক্ষেত্রে এসব শ্রেণী প্রযোজ্য হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল কমিটি ফর মনিটরিং ইমপ্লিমেন্টেশন অব ডুইং বিজনেস রিফর্মসের (এনসিএমআইডি) তৃতীয় সভায় বিদ্যমান জরিপ কার্যক্রমে ১৫৩টি শ্রেণীর ভূমিকে ১০-১২টি শ্রেণীতে রূপান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সব জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, বর্তমানে ৩৩৯টি (কম/বেশি) শ্রেণীর অস্তিত্ব রয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ান পরীক্ষা করে দেখা যায়, বর্তমানে প্রায় এক হাজার ১২৪টি জমির শ্রেণীর অস্তিত্ব রয়েছে।

ভূমির বিভিন্ন শ্রেণীসমূহ : বিদ্যমান বন, জঙ্গল, গজারি বন, শালবন, সুন্দরবন এবং সমজাতীয় বন শ্রেণীর নতুন নাম হয়েছে ‘বন’। পাহাড় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে আগের পাহাড়, টিলা ও পর্বত শ্রেণী। নদী, খাল, সিকস্তি ‘নদী’ শ্রেণীতে রূপান্তর করা হয়েছে। হাওর, বাঁওড়, পুকুর, বিল, দিঘি, লেক, মাটিয়াল, নালা, নয়নজুলি, ডোবা, ছড়া, ড্রেন, ঝরনা এবং সমজাতীয় জলাভূমিকে ‘জলাভূমি’ শ্রেণী করা হয়েছে। হালট, গলি, পাকারাস্তা, সড়ক, কাঁচারাস্তা, রাস্তা, গোপাট, রেলপথ, ডহর, ঘাটা, পথ, বাঁধ, বেড়িবাঁধ, কালভার্ট, স্লুইসগেট, সেতু, ব্রিজ, আইল্যান্ড, ফুটপাত এবং সমজাতীয় জমিকে ‘রাস্তা’ শ্রেণী হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।

বিদ্যমান বাস-টার্মিনাল, বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশন, ট্রাক-টার্মিনাল, ফেরিঘাট, খেয়াঘাট, ঘাট, হেলিপ্যাড, নৌঘাট, টেম্পোস্ট্যান্ড, অটোস্ট্যান্ড, ভ্যানস্ট্যান্ড, যাত্রী ছাউনি এবং সমজাতীয় শ্রেণীর নতুন নাম হবে ‘টার্মিনাল’। নৌবন্দর, বিমানবন্দর, বন্দর, সমুদ্রবন্দর, রানওয়ে, পোর্ট, স্থলবন্দর ও সমজাতীয় শ্রেণীকে ‘বন্দর’ শ্রেণীতে রূপান্তর করা হয়েছে। ‘আবাদি’ জমির শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে- ছোনখোলা, ভাগাড়, চরভূমি, ঘাসবন, পানবরজ, বালুচর, বীজতলা, বাঁশঝাড়, বাগান, গোচারণভূমি, পুকুরপাড়, পতিত, লায়েক পতিত, বেড়, নাল, হর্টিকালচার, নার্সারি, ডাঙ্গা, সহরী, বিলান, দলা, ধানীজমি, বেগুন টিলা, মরিচ টিলা, বোরো, টেক, মাঠ, সাটিউরা, আছারউরা, ভিটি, ভিটা, হোগলা বন, নলবন, বাইদ, চালা, গভীর নলকূপ ও সমজাতীয় ভূমি। ছাত্রাবাস, সার্কিট হাউস, উঠান বাড়ি, ভিটাবাড়ি, টিলাবাড়ি, গুচ্ছগ্রাম, ডাকবাংলো, শিশুসদন, আঙ্গিনা, বিশ্রামাগার, আশ্রয়কেন্দ্র, কোয়ার্টার, এতিমখানা, বোর্ডিং, রেস্ট হাউস, পালান বাড়ি, ভিলা, বাহির বাড়ি, গোলাঘর, বৈঠকখানা, বাসভবন, পাতকুয়া, ইন্দারা, কুয়া, খোলান, পালান, গোয়ালঘর, আবাসন, আশ্রয়ণ, বাস্ত, বৃদ্ধাশ্রম, ত্রাণশিবির, পুনর্বাসন কেন্দ্র, পায়খানা, প্রস্রাবখানা, ওয়াশ রুম, ওয়াশ ব্লক, ব্যারাক, কলোনি এবং সমজাতীয় আবাসস্থল ‘আবাসিক’ শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘অফিস’ শ্রেণীর জমির মধ্যে রয়েছে- কালেক্টরেট, ব্যাংক, পশু হাসপাতাল, পোস্ট অফিস, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল, জেলা পরিষদ, ডাকঘর, জাদুঘর, ইউনিয়ন পরিষদ, অফিস, আদালত, লাশকাটা ঘর, কোর্ট-কাছারি, আদালত ভবন, গবেষণাগার, উপজেলা পরিষদ, থানা, পুলিশ স্টেশন, বেতার কেন্দ্র, টিভি কেন্দ্র, সংসদ ভবন, প্রেস ক্লাব, ক্লাব, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, সেনানিবাস, ফাঁড়ি, নগরভবন, পৌরসভা, চক্ষু হাসপাতাল, জেলখানা, পুলিশ লাইন, বিজিবি ক্যাম্প, কাছারি বাড়ি, সামাজিক সেবা কেন্দ্র, পাম্প হাউজ, পাওয়ার হাউজ, শৌচাগার, লাইট হাউজ এবং সমজাতীয় অন্যসব অফিসের জমি। ছাপাখানা, গ্যাসপাম্প, গ্যাসলাইন, পেট্রল পাম্প, গ্যাসফিল্ড, ডিপো, হিমাগার, ফিলিং স্টেশন, খামার, কসাইখানা, মার্কেট, ইটখোলা, হোটেল, রিসোর্ট, বরফ কল, স’মিল, মোটেল, মিলঘর, পাথর কোয়ারি, ওয়ার্কশপ, গ্যাস কেন্দ্র, টাওয়ার, গুদাম, গোডাউন, দোকান, চান্দিনা ভিটি, বাজার, তোহা বাজার, বাজার গলি, গোহাট, হাট, হাটখোলা, পাট মহাল, মাছপট্টি, মাছ বাজার, কয়লা বাজার, কাঁচা বাজার, চাউলপট্টি, চান্দিনা দোকান, কাঠগোলা, ইক্ষু ক্রয় কেন্দ্র, ক্লিনিক, মাতৃসদন, পর্যটন কেন্দ্র, পশুহাট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ফার্নিচার, বেকারি, শপিংমল, শপিং টাওয়ার, প্লাজা, ব্রিজ, টালিখোলা, মৎস্য খামার, কৃষি খামার, পশু খামার, পোল্ট্রি খামার, গো খামার, আবাসিক হোটেল, হিমাগার গোপাট বাজার, নার্সিংহোম, বেসরকারি হাসপাতাল, গণশৌচাগার, মৎস্য খামার এবং সমজাতীয় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভূমি ‘বাণিজ্যিক’ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া ‘শিল্প’ শ্রেণীতে রয়েছে- কারখানা, ইপিজেড, ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, ট্যানারি, রাইস মিল, চাতাল, মিল, চা বাগান ও সমজাতীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমি। ‘বিনোদন কেন্দ্র’ জমির শ্রেণীতে সিনেমা হল, চিড়িয়াখানা, পার্ক, টেনিস ক্লাব, ব্যাডমিন্টন ক্লাব, খেলার মাঠ, স্টেডিয়াম, মিলনায়তন, কমিউনিটি সেন্টার, ব্যায়ামাগার, ক্লাব, সুইমিংপুল এবং সমজাতীয় বিনোদন কেন্দ্র থাকছে। বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ, একাডেমি, ইউনিভার্সিটি, মক্তব, পাঠশালা, হেফজখানা, শিশু একাডেমি, ক্রীড়াপ্রতিষ্ঠান, পাঠাগার, বার লাইব্রেরি, কিন্ডারগার্টেন, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কওমি মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা, হোমিওপ্যাথিক কলেজ, আর্ট কলেজ, কারিগরি কলেজ, কৃষি কলেজ, কৃষি মহাবিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞানাগার এবং সমজাতীয় ভূমি ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান’ ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ জমির শ্রেণীতে থাকবে- শহীদ মিনার, ম্যুরাল, স্মৃতিসৌধ, কেল্লা এবং সমজাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ। আর ‘ধর্মীয় স্থান’ শ্রেণীতে মসজিদ, মন্দির, কালীবাড়ি, সমাধি, দেবালয়, শ্মশান, গির্জা, কবরস্থান, মাজার, প্যাগোডা, ঈদগাহ, খানকাহ, দরগা শরীফ, পীরস্থান, পীঠস্থান, পীরোত্তর, দেবোত্তর, দেবস্থান, মিশন, বৌদ্ধ মন্দির, আশ্রম, দরগা, গুরু দুয়ারা, গণকবর, পূজাখোলা, মঠ, গোরস্তান, ওয়াকফ এবং সমজাতীয় ধর্মীয় স্থান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: যুগান্তর