আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি’র) অনুমোদনহীন বই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাজারজাত করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে অনুমোদনহীন এ সমস্ত বই বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। সমিতির একাধিক নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১৭ সালে সাতক্ষীরা সদর ও আশাশুনি উপজেলার শিক্ষক সমিতি সকল মাধ্যমিক স্কুলে এনসিটিবি’র অনুমোদনহীন একটি কোম্পানি ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত ৮টি ইংরেজি ও বাংলা গ্রামার বই পড়ানোর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। স্কুলগুলো যেহেতু শিক্ষক সমিতির নিয়ন্ত্রণ করেন সে কারণে বই গুলোর গুণগত কোন মান না থাকলেও তারা শিক্ষার্থীদের পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতি ও আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতি মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে এধরনের এনসিটিবি’র অনুমোদনহীন নিম্নমানের বই স্কুলে পড়ানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। উক্ত বইগুলোতে মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী অসংখ্যা রচনাবলি রয়েছে। যা আমাদের শিক্ষার্থীদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে, শৈলী বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা, ভাষা প্রদীপ বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা, সেতু বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা, ফায়াদ বাংলা ব্যাকরণ ও রচনা, বেসিক ইংরেজি গ্রামার, ফায়াদ ইংরেজি গ্রামার, ইজি প্রোটেনিশাল গ্রামার। আর এনসিটিবি’র অনুমোদনহীন ঢাকার বাংলা বাজারের ফায়াদ বুক ডিপো নামের এই বই কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন সাতক্ষীরার পপুলার লাইব্রেরির মালিক জেলা পুস্তক প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ ভুইয়া সাগর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, শিক্ষক সমিতির নির্ধারিত বই যদি স্কুলে পড়ানোর না হয় তাহলে ওই স্কুলকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে শিক্ষক সমিতিকে। সদর উপজেলার ব্রক্ষ্মরাজপুর জি,জি,কে,এইচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শেণির শিক্ষার্থী তাপস সরকার ও রাকেশ মন্ডল শহরের একটি দোকানে বুকলিস্ট নিয়ে বই কিনতে আসলে তাদের কাছে এই বুক লিস্টকে দিয়েছেন জিজ্ঞাসা করা হলে তারা জানায়, তাদের প্রধান শিক্ষক সমিতির দেয়া এই বুক লিস্ট তাদের দিয়েছেন বই কেনার জন্য। সদর উপজেলার লাবসা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম জানান, সমিতির নির্ধারণ করা বই না চালানোর জন্য ২/৩ বছর আগে আমাকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমি আমার স্কুলের শিক্ষার্থীদের সমিতিরি বই চালানোর ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়নি। তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, সমিতির নির্ধারণ করা সব সহায়ক বই নই, কিছু বই তিনি চালান বলে জানান। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি রেজাউল ইসলাম এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সদর উপজেলা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে কোন বই ধরানো হয়নি এবং রেজুলেশন করে কোন জরিমানার ব্যবস্থাও করা হয়নি। আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া জানান, কিছু বাংলা ও ইংরেজি ব্যাকারণ বই আমাদের উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি নীলকন্ঠ সোম যাচাই বাছাই করে শিক্ষকদের চালানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আশাশুনি উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি নীলকণ্ঠ সোম কিছু ইংরেজি ও বাংলা ব্যাকরণ বই শিক্ষকদের চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বীকার করেই জানান, তবে যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী চালাবে। কাউকে কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হবেনা। সাতক্ষীরার পপুলার লাইব্রেরির মালিক ও জেলা পুস্তক প্রকাশক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিউল্লাহ ভুইয়া সাগর জানান, একটি স্বার্থন্বেষী মহল আমার নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ ধরনের কোন কাজে আমার সম্পৃক্ততা নাই। জেলা পুস্তক প্রকাশক সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের জন্য আমাদের পুস্তক প্রকাশক সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তিনি যারাই এ সমস্ত অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান। এ ব্যাপারে জানার জন্য জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদুল ইসলামের ব্যবহৃত ০১৮১৬-৯১৩৫৭৮ নাম্বারে বার বার ফোন করা হলেও তিনি তার মোবাইল ফোনটি রিসিভ করেননি।