দেশের খবর: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের মাঝে নেতৃত্বের গুণাবলী সৃষ্টির পাশাপাশি তাদের মেধা-মননের যথার্থ বিকাশে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে অভিভাবক-শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা ফুটবলসহ খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করবে এবং তাদের শরীর স্বাস্থ্য এবং মন ভালো থাকবে। তারা শৃঙ্খলা শিখবে এবং আগামী দিনে এই বাংলদেশকে তারা নেতৃত্ব দেবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে দেশব্যাপী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী স্টেডিয়ামে বসে বালিকাদের বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইলালের খেলাও উপভোগ করেন। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেছে যথাক্রমে সিলেটের হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ময়মনসিংহের পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বালক ও বালিকা উভয় বিভাগেই ১-০ গোলের ব্যবধানেই ফাইনালের বিজয়ী নির্ধারিত হয়।
দিনের প্রথম ম্যাচে বালক বিভাগের ফাইনালে হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সালমান আহমেদের দেয়া একমাত্র গোলে রংপুর বিভাগের নীলফামারীর দক্ষিণ কানিয়ালখাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারায়। অপরদিকে জান্নাতুল মাওয়ার একমাত্র গোলে ময়মনসিংহের পাঁচরুখি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় লালমনিরহাটের টেপুরগাড়ি বিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পরাজিত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর থেকেই আমরা এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছি। যার ফলে এখন খেলাধুলায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছে। আমাদের নারী অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৬ অনূর্ধ্ব ১৮ এবং জাতীয় দলের ৫০ জন খেলোযাড়ের মধ্যে ৩৬ জন খেলোয়াড়ই বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে এসেছে।
তিনি বলেন, ধীরে ধীরে তারা জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের অবস্থান করে নিচ্ছে। এজন্য জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ভুটানে অনূর্ধ্ব ১৫ এএফসি কাপে বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দল ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
ফুটবল আমাদের দেশে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, মাঠে-ঘাটে এবং গ্রাম পর্যায়েও এই খেলা চলে। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এই ফুটবল দল গঠিত হয়, বিশেষ করে আমি এমন একটি পরিবার থেকে এসেছি যেখানে আমার দাদা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও ফুটবল খেলতেন, আমার ভাই শেখ কামাল এবং শেখ জামালও ফুটবল খেলতো এখন আমার নাতি-নাতনীরাও ফুটবল খেলছে।
তিনি বলেন, তাঁর ছেলে-মেয়ে জয় এবং পুতুলের ছেলে মেয়েরা এমনকি শেখ রেহানার ছেলে ববি’র সন্তানেরাও ফুটবল খেলার সঙ্গে জড়িত। কাজেই এই খেলাটির প্রতি তাঁর একটি আলাদা টান রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ স্কুল টুর্নামেন্টের ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে বিপুল করতালীর মধ্যে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি লাউঞ্জ বসে খেলা উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতে ছিলেন- যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিশাল সংখ্যায় টুর্নামেন্ট এত খেলোয়াড় নিয়ে পৃথিবীর আর কোন দেশ আর কখনও আয়োজন করতে পেরেছে কিনা সন্দেহ। সেজন্য তিনি যারা এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আজকে যারা খেলাধুলায় অত্যন্ত পারদর্শিতা দেখাচ্ছে আগামীতে তারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আরো সম্মান দেশের জন্য বয়ে আনবে সেটাই আমরা আশাকরি। আর আমাদের দেশে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের যেন আরো উন্নতি হয় আমরা সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি, যে কারণে সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেক উপজেলায় আমরা একটা করে মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করে দিচ্ছি। ছেলে-মেয়েরা যাতে সবসময় খেলাধুলাটা অনুশীলন করতে পারে, সেজন্যএই পদক্ষেপটা আমরা নিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটা তৈরি হয়ে গেছে, আরো হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন এবং রাসার্স আপসহ যারা অংশগ্রহণ করেছেন সকল শিক্ষার্থী-খেলোযাড় এবং অবিভাবক- সকলকে আমি অভিনন্দন জানাই। আজকে একটি দল শিরোপা জিতেছে, আগামীতে হয়তো অন্যকেউ আসবে কিন্তু এই প্রতিযোগিতা সুন্দরভাবে যেন চলতে পারে তার ব্যবস্থাটা নিতে হবে।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক এবং আজকের যারা শিশু তাদের একটা সুন্দর ভবিষ্যত আমরা গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশে তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, সুন্দর জীবন পায় এবং জীবনের সাফল্য অর্জন করে।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন দলকে তিন লাখ, রানার্সআপ দলকে দুই লাখ ও তৃতীয় স্থান অর্জনকারী দলকে এক লাখ টাকা করে প্রাইজমানি ও ট্রফি দেয়া হয়। এসময় টুর্নামেন্টে ব্যক্তিগত সেরাদের হাতেও অর্থ ও ট্রফি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।
এবারের বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬৫ হাজার ৭৯৫টি বিদ্যালয়ের ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫১৫ জন ছাত্র এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে ৬৫ হাজার ৭০০ টি বিদ্যালয়ের ১১ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ জন ছাত্রী অংশ নেয়।