জাতীয়

ছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মারর চেষ্টাকারী ‘গুণধর’ অধ্যক্ষ

By Daily Satkhira

April 08, 2019

দেশের খবর: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার অপকর্মের তালিকা অনেক দীর্ঘ। সর্বশেষ তার অনুসারীরা আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেছে।

ওই ঘটনার পর আবারও আলোচনায় আসেন অধ্যক্ষ সিরাজ। তবে শুধু রাফিকে নয়, চলতি বছর একই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলেন। ওই ছাত্রীকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে অনৈতিক প্রস্তাব দিতেন সিরাজ। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নাশকতা, মাল্টিপারপাস কোম্পানি খুলে অর্থ আত্মসাতের মামলাও রয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়ে তিনি বেশ কিছুদিন কারাগারেও ছিলেন। স্থানীয়ভাবে তার কুকর্মের কথা আগে থেকেই সবাই জানতেন। তবে বর্তমানে কারাগারে থাকায় এসব অভিযোগের ব্যাপারে অধ্যক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফেনীর পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম সরকার বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজের অতীত ভালো নয়।

২৭ মার্চ রাফিকে শ্নীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি এখন কারাগারে। রাফির ঘটনায় আজকালের মধ্যে মামলা হবে। তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় থাকায় মামলা দায়েরে বিলম্ব হচ্ছে।

ফেনীর সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাল্টিপারপাস কোম্পানির আড়ালে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ফেনী সদর থানায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের নিপীড়নের অভিযোগ অনেকে মৌখিকভাবে জানাচ্ছেন।

সোনাগাজী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা খুরশীদ আহমদ বলেন, এক সময় সিরাজ জামায়াতের শূরা সদস্য ছিলেন। তবে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠার পর তাকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়।অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে এক শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। সোনাগাজীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এর আগে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠার পর ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের সালামতিয়া মাদ্রাসা থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়। এ ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নোয়াখালীর বসুরহাটের রঙ্গমালা ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল তাকে। রোববার সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পি কে এনামুল করিমের সভাপতিত্বে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় রাফিকে শ্নীলতাহানির অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি ও সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের নিপীড়নের অভিযোগ আগেও ছিল। সর্বশেষ ২৭ মার্চ রাফি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার পরপরই তাকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। রাফির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক- এটাই চাওয়া। রুহুল আমিন আরও বলেন, আগে মাদ্রাসাটিতে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ছিল। এখন তা নেই। প্রায় দুই হাজার ছাত্রছাত্রী প্রতিষ্ঠানটিতে পড়াশোনা করছে।

অভিযোগ ওঠার পরপরই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে ব্যস্ততার কারণে গভর্নিং বডির সভা হয়নি। তবে অভিযোগ ওঠার পরপরই অধ্যক্ষকে পুলিশের হাতে দেওয়া হয়েছিল। মাদ্রাসা ঘিরে কোনো ধরনের অপকর্ম করতে দেওয়া হবে না।এলাকাবাসী জানান, ১৮ বছর ধরে এই মাদ্রাসায় আছেন সিরাজ। এর আগেও একাধিকবার তার বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছিল। প্রায় প্রতিবারই প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে তা ধামাচাপা পড়ে যায়। অপকর্ম আড়াল করতে তার নিজস্ব ‘ক্যাডার বাহিনী’ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদ্রাসার অর্থ তছরুপেরও অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসা ঘিরে জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে। এর নেপথ্যে ছিলেন অধ্যক্ষ।

এলাকাবাসী ও পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসাটি ঘিরে অনেক দিন ধরেই গ্রুপিং রয়েছে। একটি পক্ষ অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার পক্ষে অবস্থান করে আসছিল। আরেকটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে কাজ করছে। রাফির বিষয়টি জানাজানির পর দুই গ্রুপ পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ রাফির সঙ্গে যে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছে তার নেপথ্যে মাদ্রাসা ঘিরে স্বার্থের রাজনীতির ‘খেলা’ জড়িত রয়েছে।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাফির বাবা মাওলানা একেএম মুসাও জামায়াতের সমর্থক। তিনি বর্তমানে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে একটি মাদ্রাসায় চাকরি করেন। একটি পক্ষ চায়, মুসা সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যোগদান করুন। আরেকটি পক্ষ এতে বাধা দিয়ে আসছে।

যোগ্যতা না থাকার পরও অধ্যক্ষ সিরাজ জাল কাগজপত্র বানিয়ে এ প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছেন বলেও অভিযোগ আছে। সংশ্নিষ্ট বিভাগেও এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। অধ্যক্ষ থাকা অবস্থাতেই উম্মুল কুরা মাদ্রাসা নামে ফেনী শহরে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি। ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চারজন শেয়ারহোল্ডার চেক জালিয়াতির মামলা করেছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাফির ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত এগিয়ে নিতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মহাপরিদর্শকও (আইজিপি) বিষয়টি দেখভাল করছেন। তিনি তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্তের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।