দেশের খবর: ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানির অভিযোগে আটক হয়ে কারাগারে থেকেই তাকে হত্যার নির্দেশ দেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা। আর এ ঘটনায় পুরো পরিকল্পনা ছিল অধ্যক্ষের অনুগত মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীমের।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডির ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছে পিবিআই।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতারের পর কারাগারে পাঠায় পুলিশ। গত ৪ এপ্রিল সিরাজের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে যান মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম ও মাদরাসার সাবেক ছাত্র নূর উদ্দিনসহ চারজন। সেখানে সিরাজ তাদের ‘একটা কিছু করে’ নুসরাতকে শায়েস্তা করার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী শাহাদাত হোসেন শামীম নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
তিনি বলেন, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ আরও একজন মিলে সিদ্ধান্ত নেন, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারা হবে। এই পরিকল্পনার কথা তারা দুই ছাত্রী ও দুই ছাত্রের সঙ্গে শেয়ার করে। এর মধ্যে একটি মেয়ের দায়িত্ব পড়ে ৩টি বোরকা আনা ও পলিথিনের ব্যাগে কেরোসিন আনা। ওই ছাত্রী কথা মতো সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে শাহাদাতের হাতে হস্তান্তর করে।
সকাল ৯টার পর ওদের ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয়। এরই ফাঁকে ভবনের ছাদে চারজন অবস্থান নেয়। পরিকল্পনায় অংশ নেয়া শম্পা ওরফে চম্পা নামে ছাত্রী এক ছাত্রী নুসরাতকে জানায়, ভবনের চারতলায় যান নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। ওই খবর শুনে ছাদে গেলে আটকে দেয়া হয় নুসরাতকে। সেখানে আগে থেকে লুকিয়ে ছিল শাহাদাতসহ চারজন। তারা নুসরাতকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। কিন্তু নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে ওড়না দিয়ে বেঁধে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
বাইরে নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ পাঁচজন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, গেট পাহারা ও স্বাভাবিক রাখার কাজ করে। আগুন দেয়ার পর সরাসরি অংশ নেয়ারা বোরকা পরে বের হয়ে যায়।
ঘটনার পরই পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করে। দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআইয়ের ছয়টি ইউনিট তদন্তে অংশ নেয়।
বনজ কুমার মজুমদার বলেন, নুসরাত হত্যায় মোট ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা মিলেছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আট আসামির মধ্যে পরিকল্পনাকারী শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), নূর উদ্দিন (২০), মাকসুদ আলম কাউন্সিলর (২০), জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন (১৯) ও আফছার উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। একই ঘটনায় আগে শ্লীলতাহানির অভিযোগে গ্রেফতার সিরাজ উদ দৌলাকে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এজাহারভুক্ত অপর আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক।
গ্রেফতারদের মধ্যে নূর উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছে বলে জানান এই পিবিআই কর্মকর্তা। এছাড়া, এ ঘটনায় জড়িতরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন আইনের আওতায় নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পিবিআই’র বিশেষ সুপার (ঢাকা মেট্রো) আবুল কালাম আজাদ, এসপি বশির আহমেদ, মিনা মাহমুদা, পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা ও জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহছান।