রাজনীতির খবর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ৬ জন সংসদ সদস্য শপথ নেবেন কিনা সে বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার (১৫ এপ্রিল) বৈঠক করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে রাত আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ফখরুল ঠাকুরগাঁও-২ আসনটিতে পরাজিত হলেও খালেদা জিয়ার আসন হিসেবে পরিচিত বগুড়া-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বৈঠকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সংসদ সদস্যরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচিত উকিল আবদুস সাত্তার বলেন, ‘শপথ নেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলের হাইকমান্ড। এরপর আমাদেরকে তা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত মো. হারুন উর রশীদ বলেন, ‘আমরা শপথ নেওয়ার বিষয়ে পজিটিভ। তবে দল থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানানো হয়নি। বিএনপির হাইকমান্ড আরও এক-দুটি বৈঠক করে এ বিষয়ে আমাদের জানাবেন।’
এদিকে, বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, হুট করে কেউ যেন নিজ উদ্যোগে শপথ না নেন সে ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। বৈঠকে বলা হয়েছে, শপথ নেওয়ার প্রয়োজন হলে দলীয় সিদ্ধান্তে সবাই একসঙ্গে শপথ নেওয়া হবে। যদি শপথ নেওয়া হয় তবে কবে নেওয়া হবে, কখন নেওয়া হবে তা সব সংসদ সদস্যকে জানানো হবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত বগুড়া-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম।
এদিকে, দলীয়ভাবে এখনও শপথ না নেওয়ার পক্ষেই অবস্থান বিএনপির। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের প্রতিটি আসনেই ভোট কারচুপি, আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে ব্যালটবাক্স ভরে রাখা, প্রশাসন, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনে মাত্র ৮টি আসন পায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মধ্যে ৬টিতে বিএনপি ও দুটি আসনে শরিক দল গণফোরাম জয়ী হয়। এরপর জানুয়ারির শুরু থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংসদে যোগ না দেওয়ার কথা বলা হলেও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ (মৌলভীবাজার-২) ও মোকাব্বির খান (সিলেট-২) এরই মধ্যে শপথ নিয়েছেন। এ কারণে সুলতান মোহাম্মদ মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মোকাব্বির খানকেও বহিষ্কার করার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টুকে নির্দেশ দিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। আগামী ২০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এই বাস্তবতার মধ্যেই বিএনপির সংসদ সদস্যদেরও শপথ নেওয়ার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় শেষ হয়ে আসছে। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম বৈঠক থেকে পরবর্তী ৯০ দিন পর্যন্ত সদস্যদের শপথ নেওয়ার সময় নির্ধারিত আছে। সে হিসেবে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত শপথ নেওয়ার জন্য সময় পাবেন বিএনপি থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা। তবে তারা সময় বাড়ানোর আবেদন করলে স্পিকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখেন।