কালিগঞ্জ

কালিগঞ্জে অনুষ্ঠান থেকে দু’ ভাইবোনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ

By daily satkhira

April 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ নামযঞ্জ অনুষ্ঠান থেকে দু’ভাই বোনকে তুলে নিয়ে আটক রেখে তাদের মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও সোনার গহনা লুট করেছে মজিদ বাহিনীর সদস্যরা। তাদেরকে মুক্তির জন্য স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। টাকা না দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকে অবহিত করায় মেয়েটির উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার জয়পত্রকাটি গ্রাম থেকে তাদেরকে অপহরণ করা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য হরেন মণ্ডলের ছেলে সুজন মণ্ডল (১৫) জানান, শ্যামনগর উপজেলার হরিনগর গ্রামের বিশ্বনাথ মণ্ডলের মেয়ে শিখা রানী মণ্ডল তার পিসতুতো বোন। বেজুয়া গ্রামের দাদু মেঘনাথ মণ্ডলের বাড়িতে বেড়াতে এসে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় শিখা জয়পত্রকাটি নামযজ্ঞ শুনতে আসে। রাত সাড়ে সাতটার দিকে তার সঙ্গে দেখা হওয়ায় তারা দুজনে নামযঞ্জ স্থানের কিছুটা দূরে লিচুতলায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় চাঁচাই গ্রামের আতিয়ারের ছেলে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মজিদ ও ফতেপুর গ্রামের নেছার আলীর ছেলে জাকির হোসেন কথা আছে বলে তাদেরকে রাস্তা থেকে ডেকে নিয়ে বুকে পিস্তল ঠিকিয়ে জোরপূর্বক দু’টি মোটর সাইকেলে তুলে মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের ময়না মেম্বরের বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তারা কমপক্ষে ১৫ জন লোক দেখতে পান। তাদের দু’জনের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাকে মারপিট করে মজিদ। একপর্যায়ে তার (সুজন) মোবাইল ফোন থেকে বাবা হরেন্দ্রনাথ মণ্ডল ও ভাই সুমনের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে মজিদ ও জাকির। টাকা না দিলে তাদেরকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। বাবা বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলামকে অবহিত করেছে জানতে পেরে তার কাছে থাকা সাড়ে নয় হাজার টাকা, ২২ হাজার টাকা মূল্যের স্যামসন জে-৬ মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। পরে তাকে আটক রেখে বোনকে নিয়ে দূরবর্তী বাগানে নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে জামা কাপড় আংশিক ছিড়ে ফেলে মজিদ বাহিনীর সদস্যরা। বোনের চিৎকারে তিনি উপস্থিত সকলকে তার ইজ্জত নষ্ট না করার জন্য আকুতি জানান। এরপরও বোনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করা হয়েছে। সিরাজুল মেম্বরের মোবাইল ফোন পেয়ে বেগতিক বুঝে তাদেরকে ফতেপুর হাইস্কুলের পাশে একটি বাগানে নিয়ে আটক রাখা হয়। সেখানেও তাদের উপর নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ আসার খবর পেয়ে তাদেরকে ফতেপুর নিরাপদ বিশ্বাসের বাড়ির পাশে নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিঙ্কর দেবনাথ, বাবা হরেন মণ্ডল ও পুলিশ এসে তাদেরকে উদ্ধার করে। নির্যাতিত ওই নারী জানান, কথোপকথনের সময় তিনি জানতে পারেন সন্ত্রাসীদের নাম মজিদ, জাকির, বেল্লাল সবুর। অন্যদের নাম তিনি জানতে পারেননি। নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের পাশ থেকে তাদেরকে যেভাবে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তুলে আনার পর তার উপর পাশবিক নির্যাতন করা হয়েছে তা জামায়াত বিএনপির সময়কার যে কোন ঘটনাকে হার মানিয়েছে। মজিদ বাহিনীর সদস্যরা বুধবার একইভাবে একটি ছেলে ও একটি মেয়েকে নামযজ্ঞের পাশ থেকে তুলে এনে ছয় হাজার টাকা আদায় করেছে বলে কথোপকথনের একপর্যায়ে তিনি জানতে পারেন। বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, মজিদ ও জাকির বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে মানুষকে জিম্মি করে টাকা আদায়, লুটপাট ও তাদের সম্ভ্রম নষ্ট করছে তা মেনে নেওয়া যায় না। মজিদের বিরুদ্ধে কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। জয়পত্রকাটি নামযজ্ঞ আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল বলেন তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে কমিটির সদস্য কিঙ্কর দেবনাথ বলেন, রাত ১১টার দিকে তিনি মোটর সাইকেলে বাড়ি ফেরার সময় হরেন মণ্ডল, ধর্মদাস মণ্ডল, সাগর মণ্ডল, অমল মণ্ডল ও সুমন মণ্ডল তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করে। তিনি স্থানীয় দিদার এর সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করে পুলিশের সহায়তায় দু’জনকে উদ্ধার করেন। শুক্রবার বিকেলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে আব্দুল মজিদের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আসমত আলী নামযজ্ঞ স্থলের পাশ থেকে দু’ ভাই বোনকে তুলে নিয়ে আটক রেখে টাকা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে নির্যাতন চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেই বলেন, মজিদ একজন কুখ্যাত সন্ত্রাসী। সেসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য জাকির, বেলাল, সবুরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে মর্মে তিনি জেনেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে মামলা রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#