আজকের সেরা

সাতক্ষীরায় স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির প্রতিবাদে সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও

By daily satkhira

April 24, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরায় চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ প্রায় ১৮ কোটি টাকা লোপাটকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও এবং স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাও করেন সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ,সাতক্ষীরার আহবায়ক এড. ফাহিমুল হক কিসুল সভাপতিত্বে ঘেরাও কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ সরকার, সুধাংশু শেখর সরকার, এড. ওসমান গনি, শেখ ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, এড. খগেন্দ্র নাথ, নিত্যানন্দ সরকার, রাশেদুজ্জামান রাশি, মশিউর রহমান পলাশ, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন প্রমুখ। নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান মাসুমের পরিচালনায় বক্তারা বলেন, সদর হাসপাতালের এক্সরে মেশিন অকেজো, আলট্রাসোনো মেশিন অকেজো, ইসিজি মেশিন ভাল রেজাল্ট দেয় না। এমন নানা সমস্যার কথা তুলে ধরে তারা বলেন সরকার এই হাসপাতালের অনুকূলে কোটি কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম বরাদ্দ দিয়েছেন। অথচ তা ব্যবহারের অভাবে পড়ে থাকছে। এর জন্য যেসব ডাক্তার ও টেকনিসিয়ান দরকার তা এখানে নেই জানিয়ে তারা বলেন এর ফলে সাতক্ষীরার মানুষ চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন। এই হাসাপাতালের কিচেন ও টয়লেটে বিরাজ করছে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। অনেক সরকারি ডাক্তার ডায়গনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক খুলে বসে আছেন। তারা সেখানে দরিদ্র রোগীদের নিয়ে বিভিন্ন টেস্টের নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন দিনের পর দিন। এসব ক্লিনিকে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা হচ্ছে জানিয়ে তারা বলেন এখানে প্রায়ই রোগীর মৃত্যু ঘটছে। অপরদিকে হাসপাতালে ব্যবহৃত সরঞ্জামের টেস্ট ভুল প্রমান করে তারা আরও বেশি ফায়দা লুটছেন। জেলার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে ২০১৭/২০১৮ অর্থ বছরে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য সরকার তিনটি টেন্ডারে প্রায় ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন। এই টাকার বিনিময়ে ২৪ প্রকারের চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কথা। কিন্তু সাতক্ষীরার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. তৌহিদুর রহমান এইসব মালামাল ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্রয়ের নামে সমুদয় টাকা আগাম পরিশোধ করেছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। অথচ বাস্তবে এসব সরঞ্জাম এখন পর্যন্ত সাতক্ষীরা হাসপাতালে পৌছায়নি। সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বিষয়টি তদন্ত করতে এলে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়ে। মালামাল গ্রহনের জন্য নিযুক্ত সার্ভে কমিটি লিখিতভাবে যে রিপোর্ট দিয়েছেন বলে বলা হয়েছে তাতে তারা কোন স্বাক্ষর দেননি বলে তিন জন চিকিৎসক ডা. আসাদুজ্জামান, ডা. শরিফুল ইসলাম ও ডা. ফরহাদ জামিল তদন্ত কমিটির কাছে উল্লেখ করেছেন। এমনকি স্টোর কীপার জয়ন্ত সরকার এসব মালামাল বুঝে পাননি বলেও উল্লেখ করেছেন। এতবড় ঘাপলার উল্লেখ করে বক্তারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন প্রকৃতপক্ষে মালামাল বুঝে নেওয়ার মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র লিখে তাতে সীল ছাপ্পর মেরে সরকারি কোষাগারের অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এ ধরনের অব্যবস্থাপনা এবং সরকারি অর্থ লোপাটের প্রতিবাদ জানাতে ২৩ এপ্রিল তারা সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিস ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেন। এই কর্মসূচিকে ভন্ডুল করে দুর্নীতিবাজদের রক্ষার লক্ষ্যে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকা লুন্ঠনকারীরা ভূমিহীন ঐক্য পরিষদ নামের একটি ভূয়া সংগঠন তৈরী করে একই স্থানে একই সময়ে পাল্টা কর্মসূচি দেয়। সংঘাত সংঘর্ষ এড়াতে এই কর্মসূচি আজ ২৪ এপ্রিল বুধবার পালন করা হয়েছে। সাতক্ষীরার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ দুর্নীতিবাজদের কারনে এবং অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার ফলে প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেনীর মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। এসব বিষয়ে তারা সাতক্ষীরা জেলায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরন করেছেন এবং দফায় দফায় কর্মসূচির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার হালহকিকত তুলে ধরেছেন। তারা অবিলম্বে এর সঙ্গে জড়িত সব রাঘর বোয়ালকে চিহ্ণিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী, দুদক চেয়ারম্যান এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন। পরে সাতক্ষীরার বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর এবং সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার নেতৃবৃন্দ।