সাতক্ষীরা

অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেই টাকা ফেরত পেল মোমিন !

By daily satkhira

April 24, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ৫ম শ্রেণির স্কুল ছাত্র আব্দুল মোমিন প্রধানমন্ত্রীর হাতে থেকে পাওয়া সেই চেকের টাকা অবশেষে গণমাধ্যমের সহযোগিতায় ফেরত পেয়েছে। ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পাওয়া চেকটি ফিরে পেতে চাই’ শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশিত খবরটি দুদকের নজরে আসে। খুলনা থেকে দুদকের একটি টিম বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল কলারোয়া উপজেলার কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন গিয়ে ঘটনার সত্যতা পান। এ সময় তাদের সাথে ছিলেন কলারোয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাফফর হোসেনসহ দুই জন সহকারী শিক্ষা অফিসার। স্কুল ছাত্র আব্দুল মোমিনের পিতা কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামের আসছার আলী জানান, ‘বুধবার দুপুর একটার দিকে খুলনা থেকে দুদকের ৭ সদস্যের একটি টিম স্কুলে আসেন। তারা আমাকে সেখানে ডেকে পাঠান। আমি সেখানে গিয়ে ঘটনাটি তাদেরকে খুলে বলি।এরই মধ্যে দুদকের টিম আসার খবরে সেখানে এলাকার বহু মানুষ জড়ো হয়। আমি জেলা প্রশাসকের কাছে যে অভিযোগ করেছি তার সত্যতা পাওয়ায় দুদক কর্মকর্তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে ভস্যনা করেন । এক পর্যায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও স্কুলের সভাপতি মুনসুর আলী সেখানে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে এই ঘটনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চেকের মাধ্যমে পাওয়া ১০ হাজার টাকা নগদ মোমিনের পিতার হাতে তুলে দেন। এছাড়া জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় ১ম স্থান অধিকার করায় আব্দুল মোমিন যে টাকা পেয়েছিলো তাও আগামি দুই দিনের মধ্যে দিয়ে দেওয়ার অঙ্গিকার করেন প্রধান শিক্ষক ও স্কুলের সভাপতি’। তিনি আরো বলেন, ‘পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত না হলে আমি বিচার পেতাম না। টাকাও পেতাম না। সাংবাদিকদের কারনেই আজ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পাওয়া টাকা ফেরত পেয়েছি’। এদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কলারোয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোজাফফর হোসেন জানান, ‘ স্কুল ছাত্র মোমিনের পিতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। ওই স্কুল শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’। প্রসঙ্গত, কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামের আনছার আলীর ছেলে আব্দুল মোমিন (১১)। সে কলারোয়া উপজেলার ১২০ নং কোমরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্র। আন্ত:প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতা-২০১৮ এর ১০০ মিটার দৌড়ে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় প্রথম স্থান এবং জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে ছেলেটি। আর এই পুরস্কারের মধ্যদিয়ে শিশু শিক্ষার্থী আব্দুল মোমিন গোটা সাতক্ষীরার জন্য বয়ে এনেছে সুনাম। জাতীয় পর্যায়ে উজ্জল করেছেন সাতক্ষীরার মুখ । গত ১৩ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে আব্দুল মোমিনের হাতে তুলে দেন একটি চেক, পুরস্কার ও সার্টিফিকেট। কিন্তু তার দুরভাগ্য পুরস্কারের সব টাকা গায়েব করে দেয় তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে। শুধু তাই নয়, জেলা পর্যায় পুরস্কার পাওয়া ৫ হাজার টাকা ও বিভাগীয় পর্যায় পুরস্কার পাওয়া আরো ১০ হাজার টাকাও গায়েব করেছে প্রধান শিক্ষক। এ অভিযোগ ৫ম শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল মমিন ও তার পিতা মো: আনছার আলীর। পুরস্কারের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি লিখিত ভাবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসককে মঙ্গলবার জানায় আব্দুল মোমিনের পিতা আনছার আলী। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে করা লিখিত ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আমার ছেলে আব্দুল মমিন ২০১৮ সালের আন্ত:প্রাথমিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি প্রতিযোগিতা-২০১৮ এর ১০০ মিটার দৌড়ে থানা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান এবং জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। গত ১৩ মার্চ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায় শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে বঙ্গবন্ধ আন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আমার ছেলের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০১৮ প্রদান করেন। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী তার হাতে একটি সার্টিফিকেট ও একটি চেক তুলে দেন। পরবর্তীতে আমার ছেলের কাছ থেকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ওই চেকের পিছনে জোর করে দু’টি স্বাক্ষর করে চেকটি নিয়ে নেন। এর আগে একই ভাবে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায় পুরস্কার পাওয়া আরো ১৫ হাজার টাকা নিয়ে নেন তিনি। প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম আমার ছেলেকে বলে, স্কুলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এসব টাকা ও সার্টিফিকেট তোমার হাতে তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু আজও তা দেওয়া হয়নি। গত ১৫ এপ্রিল আমি স্কুলে গিয়ে এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের কাছে চেকের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারতে যায়। এ সময় প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম ও স্কুলের সভাপতি মুনছুর আলী হুমকি দিয়ে আমাকে বলেন, তোমার ছেলেকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। বিষয়টি লোক জানাজানি হলে তোমার ছেলের আরো ক্ষতি হবে। এ ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদটি প্রকাশিত হয়। পরে ফেসবুকের মাধ্যমে খবরটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।