সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন

By daily satkhira

April 29, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার মাঠে মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। দুলছে পাকা ধানের শীষ। তীব্র গরমে সিদ্ধ হচ্ছে প্রকৃতি। আবহাওয়া জানাচ্ছে ঝড়ের আভাস। এমন পরিস্থিতে কৃষকের বুক দুরু দুরু। মাঠের ধান ঘরে তুলতে পারলেই যেন স্বস্তি পেতেন তারা। কিন্তু দেখা দিয়েছে শ্রমিক আকাল। এক বস্তা ধানেও মিলছে দুজন শ্রমিক। পুরুষ শ্রমিক সংকট থাকায় নারী শ্রমিকরা নামছেন মাঠে। পুরুষের সাথে সমান তালে কাজ করছেন নারীরাও। কিন্তু মজুরি বৈষম্য রয়েছে পুরুষ ও নারী শ্রমিকের মধ্যে। ৫০০ থেকে ৬০০টাকায় মিলছে একজন পুরুষ শ্রমিক। সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করছেন শ্রমিকরা। একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০টাকা। মৌসুমে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ি এলাকার মৃনাল কুমার বিশ্বাস বলেন, ধানকাটা মৌসুম শুরু হয়েছে আরও কয়কদিন আগে। কিন্তু এখন ভরা মৌসুম। এই ভরা মৌসুমে মিলছে না শ্রমিক। আগে যারা ক্ষেত খামারে শ্রমিকের কাজ করতেন তারা এখন ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, গ্রামবাংলাসহ বিভিন্ন প্রকার যানবাহন চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ফলে তারা এখন টাকা দিতে চাইলেও ক্ষেতে যেতে চান না। তাছাড়া গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় বৈশাখে তপ্ত রোদে কেউ মাঠে শ্রমিকের কাজ করতে যেতে চান না। তিনি আরও বলেন, জেলার শ্রমিকদের একটি অংশ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইটেরভাটায় কাজের সন্ধানে চলে গেছে। ফলে শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বালিথা এলাকার হাফিজুল ইসলাম বলেন, জেলার মাঠে মাঠে ঝুলছে পাকাধান। এ যেন সোনালী রঙের আলপনা। কিন্তু ধানের ক্ষেত দেখে প্রাণ জুড়ালেও বুক দুরু দুরু করছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে তো সর্বনাশ। তাই বাড়ির সকল সদস্য মিলে নামতে হচ্ছে মাঠে। তিনি বলেন পিতা-মাতা, ভাইসহ পরিবারের অন্যরা এখন ধান কাটার কাজে ব্যস্ত। একই দৃশ্য দেখা যায় জেলার সাত উপজেলার প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটার মুজিবর রহমান বলেন, ধান ও বিচালির দাম মোটামুটি ভাল থাকায় চাষীরা লাভের মুখ দেখলেও উৎপাদনের একটি বড় অংশ চলে যাচ্ছে ধান তোলা ও মাড়াইয়ের পেছনে। খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৮ হাজার পর্যন্ত লাভ হচ্ছে কৃষকদের। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার এ জন্য খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ‘কম্বাইন্ড হারভেস্টর’ নামের একটি যন্ত্র এ বছর কৃষকদের দেখানো হচ্ছে। ৩০ শতাংশ ছাড়ে যন্ত্রটি প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের সরবরাহ করা যাবে। শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া এলাকার আসাদুল ইসলাম বলেন একই কথা। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, এবার সাতক্ষীরাতে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হয়েছে। এখনো ৫০থেকে ৭০ শতাংশ জমিতে ধান রয়েছে। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকেরা চিন্তিত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সাতটি উপজেলায় ৭৩ হাজার ৮৬২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ লাখ ৬২৬ মেট্রিক টন চাল। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৯৭ হাজার ৫১৭ মেট্রিক টন, কলারোয়ায় ৪৮ হাজার ৪৮৫ মেট্রিক টন, তালায় ৭৩ হাজার ৭৮ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ১৮৯ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ২১ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন, অশাশুনিতে ২৭ হাজার ৫৪৪ মেট্রিক টন এবং শ্যামনগরে ৬ হাজার ৭১৭ মেট্রিক টন । আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকরা নিজেদের উদ্যোগে জলাবদ্ধ ও অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ করায় এবার জেলায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ অরবিন্দ মণ্ডল জানান, এবছর জেলায় ৭৬ হাজার ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ হাজার হেক্টর বেশি। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান তুলতে একটু সমস্যা হচ্ছে।