জাতীয়

তারেকের সিদ্ধান্তে সংসদে যাচ্ছে বিএনপি

By daily satkhira

April 29, 2019

অনলাইন ডেস্ক : সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই তারা সংসদে যাচ্ছেন। সোমবার রাত পৌনে আটটার দিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল এ কথা জানান। তিনি তারেক রহমানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত চারজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। তারা তখন জানিয়েছিলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই শপথ নিচ্ছেন। বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজন ইতিমধ্যে শপথ নিলেন। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও শপথ নেবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে কখন নেবেন, স্পিকারের কাছে এ ব্যাপারে সময় চেয়েছেন কি না সে সম্পর্কে ফখরুল বলেন, সময় হলে সব জানতে পারবেন। বিএনপির সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ফখরুল বলেন, ‘সবার সঙ্গে কথা বলার পর তারেক রহমানকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষাপটে চারজন আজ শপথ নিয়েছেন।’ তারেকের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখিত বক্তব্যে ফখরুল বলেন, ‘গত ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে দেশের মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। যা ক্ষমতাসীন দলের কারো কারো মুখ থেকে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য বের হয়েছে। নজিরবিহীন সন্ত্রাস, প্রশাসন ও বিশেষ করে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণের কারণে আগের রাতেই ফলাফল সরকারের পক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা স্বাভাবিক কারণেই এ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। জাতীয় সংসদে আমাদের নির্বাচিত সদস্যদের শপথ না নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলাম।’ ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা মনে করি নির্বাচনই ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ। কিন্তু সরকার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে দলীয়করণ করেছে তাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।’ ফখরুল বলেন, ‘গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ভোটারবিহীন এই সরকার সারাবিশ্বে সংসদকে সচল দেখাতে চায়। এখানেই বিরোধী মত ও জনগণের গণতান্ত্রিক ন্যূনতম অধিকার চর্চার সুযোগ অবশিষ্ট রয়েছে।’ ‘আমরা বরাবরের মতোই দাবি করছি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে জনগণের সংসদ নির্বাচন করাই এই সংকট সমাধানের একমাত্র পথ। তাই একদিকে নতুন নির্বাচনের দাবি, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, রাজবন্দিদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহারের দাবি ও অন্যদিকে রাষ্ট্রের দুর্নীতি, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, নারী নির্যাতন, ব্যাংক লুট, গুম-খুনের বিরুদ্ধে কার্যকরী গণআন্দোলন করার জন্য আমাদের নতুনভাবে উদ্দীপ্ত হতে হবে।’ ‘ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সংসদে কথা বলার সীমিত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংসদ ও রাজপথের আন্দোলনকে যুগপৎভাবে চালিয়ে যাওয়াকে আমরা যুক্তিযুক্ত মনে করছি।’ ‘জাতীয় রাজনীতির এই সংকটময় সময়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা সংসদে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আশা করি দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় অবিলম্বে একটি অবাধ জাতীয় নির্বাচন আদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আমরা আমাদের নেত্রী ঘোষিত জাতীয় ঐক্যমতের বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।’

গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মোট আটজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ তাদের মধ্যে ছয়জন বিএনপির এবং দুজন গণফোরামের৷ ৩০ জানুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসলেও ৮ মার্চ শপথ নেন মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ৷ আর ২ এপ্রিল শপথ নেন গণফোরাম থেকে নির্বাচিত আরেকজন সংসদ সদস্য সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির হোসেন৷

নির্বাচনের পরপরই বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অনিয়ম এবং ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট এবং নতুন নির্বাচনের দাবি জানায়৷ দলের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন না বলেও জানানো হয়৷ পরে গণফোরামের দুই এমপি শপথ নিলেও বিএনপি শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড়৷ সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম অধিবেশনের পরবর্তী ৯০ দিন পর্যন্ত নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ নিতে হয়৷ নয়তো আসন শূন্য হয়৷ তবে কোনো সংসদ সদস্য যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে এই সময় বাড়িয়ে নিতে পারেন৷ কোনো আসন শূন্য হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচন করার বিধান রয়েছে৷ দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেই গত বৃহস্পতিবার শপথ নেন জাহিদুর রহমান জাহিদ। পরে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। আর বাকিরা শপথ নেবেন না বলে জানানো হয়। তবে এই সিদ্ধান্তের মধ্যেই সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি থেকে নির্বাচিত চারজন শপথ নেন। এর পরপরই জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকেন মির্জা ফখরুল।