রাজনীতির খবর: রাজনীতিতে বিএনপি’র নাটকীয় পরিবর্তন ঘটেছে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ না করার বিষয়ে বিএনপি’র নীতি-নির্ধারকরা কঠোর অবস্থানে থাকলেও শেষ মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়েছে।
ইতিমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ছাড়া বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সকল সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন। শপথ গ্রহণের জন্য নিজের অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে স্পিকারের কাছে সময় চেয়েছেন। আর রাজনীতি বিএনপি’র অবস্থান বদলের পেছনে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের মুক্তির বিষয়টি কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বিএনপি’র সংসদ সদস্যদের পক্ষ থেকে বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মো. হারুনুর রশীদের দেওয়া বক্তব্যে তেমনটি ফুটে উঠেছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন। দেশের রাজনীতি এখন কঠিন সংকটের মধ্যে আছে দাবি করে তিনি বলেন, তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিই একমাত্র সংকট উত্তরণে কাজ করতে পারে। সরকার আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার না করলে ৮৩ বছরের এই অসুস্থ বৃদ্ধা, যাকে হুইল চেয়ারে চলতে হয়, তিনি জামিন পাবেন বলে দাবি করেন।
এদিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত ছয় সংসদ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই ইতিমধ্যে শপথ নিয়েছেন। শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকা বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শপথ নিতে সময় চেয়ে আবেদন জানিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেখানে শারীরিক অসুস্থার কারণে শপথ গ্রহণে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এ বিষয়ে স্পিকারের দপ্তরের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না পাওয়া গেলেও সংসদ সচিবালয়ের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র আরো জানায়, মঙ্গলবার যেকোনো সময়ে ওই সংসদ সদস্য এই শপথ নিতে পারে। শপথ অনুষ্ঠানের জন্য সংসদ সচিবালয় প্রস্তুত রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, কোনো নির্বাচিত ব্যক্তি যদি যৌক্তিক কারণে পরে শপথ গ্রহণের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেন, তাহলে সেক্ষেত্রে স্পিকারের সেটি বিবেচনার এখতিয়ার রয়েছে। অবশ্য এক্ষেত্রে ৯০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ করতে না পারার কিংবা না নেওয়ার ‘যথার্থ কারণ’ দেখানোর কথাও সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে। এ ছাড়াও সংবিধানে বলা আছে, স্পিকারের কাছে সময় বৃদ্ধির এই আবেদনও করতে হবে নির্ধারিত ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগে।
সূত্র জানায়, মির্জা ফখরুল অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পরে শপথ নেওয়ার কথা জানালেও এর পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে দলের চেয়ারপার্সনের মুক্তি। যে কারণে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শপথ গ্রহণে সম্মতি জানিয়েছে। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল বিএনপি আরেক সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান শপথ গ্রহণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের দাবি করেন। এর আগে গত ২৪ এপ্রিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীক গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানও সংসদে দেওয়া বক্তৃতায় একই দাবি জানান। তিনি চলতি সংসদ বাতিল করে পুনর্নির্বাচন দাবি করেন।
এ বিষয়ে বিএনপি থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া বলেন, আমাদের প্রধান এজেন্ডা দলীয় চেয়ারপার্সনের মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা শপথ নিয়েছি। সংসদে গিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুরুদ্ধারে কথা বলতে চাই। জনগণের সীমাহীন সংকট নিয়ে আলোচনা করতে চাই। তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন বলে আমরা আশাবাদী।
সংসদে প্রথম বক্তৃতায় যা বললেন বিএনপির এমপিচাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মো. হারুনুর রশীদ খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বলেন, আমি সংসদ নেতাকে (প্রধানমন্ত্রী) বলবো, অবিলম্বে বিষয়টা কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমরা আশা করি আদালত যদি স্বাধীনভাবে চলতে পারে, ওখানে যারা আছেন, তারা যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন, তাহলে আমাদের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আগামীকালই জামিন পাবেন। আপনি (প্রধানমন্ত্রী) দ্রুত ব্যবস্থা করেন।
তিনি আরো বলেন, আমাদের নেত্রী (খালেদা জিয়া) দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে কারাগারে বন্দি। উনি হুইল চেয়ারে চলাফেরা করছেন। উনার আসলে জেলে থাকার কথা নয়। অন্ততঃ পক্ষে উনার জামিন হওয়া উচিত। উচ্চ আদালতকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেন, ওখানে নিয়োজিত এ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্মকর্তারা যদি সত্যিকার অর্থে বাধা প্রদান না করে আমি বিশ্বাস করি উনি কালকেই জামিন পাবেন। কালই উনি জামিন পাবেন তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
এ সময় সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, দেশের নিম্ন আদালত থেকে জঘন্যতম মামলায় জামিন পাচ্ছে। অথচ আমাদের নেত্রীর জামিন হচ্ছে না। সংসদ নেতা আপনি পারেন, আপনি যে পারবেন সেটি প্রমাণ করেছেন। এই জন্য বলবো, এখন পদক্ষেপ নেন। আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দেবেন, এটিও বলবেন, যে হ্যাঁ তাদের সংসদ সদস্যরা সংসদে প্রবেশ করেছেন, আমিও মুক্তি দিয়েছি। তাহলে দেশের মানুষের কাছে বলতে পারবো আমরা সংসদে গেছি তার ফলশ্রুতিতে প্রধানমন্ত্রী আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করেছেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে নিয়ে আনার জন্যে এখানে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বিএনপি এভাবে দেশে সত্যিকার অর্থে শান্তি ফিরে আসবে না। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিতে হবে। দেশে অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। কিন্তু দেশে ভয়াবহ লুটপাট হচ্ছে। যেভাবে লুটপাট হচ্ছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন সদস্য। আমরা সংসদে এসেছি সত্যিকারের কথাগুলো বলার জন্য। দেশের সংগঠিত ঘটনাগুলো বলবো। সঠিক তথ্য বলার চেষ্টা করবো। সুযোগ দিলে আপনারাই উপকৃত হবেন। সংসদকে কার্যকর করতে চাইলে আমাদের সুযোগ দেবেন। এখানে তোষামতি করার জন্য নয়, আমরা সত্যিকার কথাগুলো বলতে এসেছি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন নিয়ে নি:সন্দেহে সারাদেশে বিতর্ক রয়েছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করা হয়েছে। যেভাবেই বলি না কেন ৩০ তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। আমরা ৫ জন সংসদ সদস্য শপথ গ্রহণ করে এখানে এসেছি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে আরো দুইজন। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় ৯০ দিন শেষ হওয়ার শেষ দিনে আজকে সংসদে প্রবেশ করার জন্য দলকে সম্মত করাতে আমাদের অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেশকে অবশ্যই মাদকমুক্ত করতে হবে। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করতে হবে। নুসরাত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করায় সংসদ নেতাকে ধন্যবাদ জানান তিনি।