ফিচার

সাতক্ষীরার পর এবার যশোরে ‘ছেলেধরা’ ও রোহিঙ্গা গুজব

By Daily Satkhira

May 11, 2019

যশোর প্রতিবেদক: সাতক্ষীরায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ‌’ছেলেধরা’ ও রিহিঙ্গা গুজব এবার যশোরে ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ‘ছেলেধরা’র এই গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। গুজব উঠেছে, যশোরের ঝিকরগাছা ও শার্শায় রোহিঙ্গারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয়রা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলেই ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করছে। কোনো কোনো এলাকায় ছেলে ধরা নিয়ে মসজিদের মাইকেও সতর্ক করা হচ্ছে।

যদিও পুলিশ বলছে, ছেলেধরা নিছক গুজব। মানসিক প্রতিবন্ধী, অপরিচিত লোকজনের এলাকায় এলোমেলো চলাফেরা দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে। যা দুঃখজনক। যদি ছেলেধরা হয়েও থাকে, এভাবে মারপিট করা ঠিক না। তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হোক।

জানা যায়, কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় গুজব ছড়ানো হয়েছে রোহিঙ্গারা শিশু অপহরণ করছে। এটা নিয়ে অভিভাবকরাও আতঙ্কিত। এই আতঙ্কের মধ্যে এলাকায় কোনো অপরিচিতি লোককে এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখলেই গণধোলাই দেয়া হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে বেনাপোল মাছ বাজার এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে মারপিট করে এলাকাবাসী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। একই দিন ঝিকরগাছার জননী সুপার মার্কেট এলাকায় এক যুবককে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পারবাজার এলাকায় অপর এক যুবককে ছেলেধরা সন্দেহে মারপিট করা হয়। বুধবার রাতে শ্রীরামপুর গ্রামে ও নওয়াপাড়া গ্রামে দুই নারীকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এছাড়াও মঙ্গলবার বিকেলে বেজিয়াতলা গ্রামে এক ব্যক্তিকে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা।

ছেলেধরা ও রোহিঙ্গা অপহরণকারী গুজবে এলাকায় এসব অপরিচিত লোকদের এলোমেলো চলাফেরা করতে দেখে গণধোলাই দিয়েছে এলাকাবাসী। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।

তবে গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঝিকরগাছা থানা পুলিশের ওসি আবদুর রাজ্জাক। ঝিকরগাছা থানার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার জনসচেতনতামূলক পোস্ট দিয়েছেন ওসি। তিনি উল্লেখ করেন, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে কতিপয় লোক শিশু পাচারকারী/রোহিঙ্গা বলে অভিহিত করে মানসিক ভারসম্যহীন অজ্ঞাতনামাদের মারপিট করে এলাকায় গুজব সৃষ্টি করছে। এতে সাধারণের জনমনে ভীতি প্রদান করছে। ‘শিশু পাচারকারী দলের সদস্য আটক হয়েছে’ এমন তথ্যের ভিত্তিতে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে হাজির হয়। বিষয়টি সম্পর্কে উপস্থিত স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। শিশু পাচার হয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি লিখিত কিংবা মৌখিক অভিযোগ কেউ করেনি। কতিপয় ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব সৃষ্টি করে অহেতুক জনমনে ভীতি সৃষ্টি করছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সঠিক তথ্য প্রমাণ ব্যতীত গুজব সৃষ্টি না করে ঘটনা-সংক্রান্তে কোনো ব্যক্তির অভিযোগ থাকলে অভিযোগ দায়ের করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো। অভিযোগ প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিক বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনছার উদ্দিন বলেন, কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। এলাকার লোকজন অপরিচিত ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের দেখলেই ‘ছেলেধরা’ গুজবে গণধোলাই দিচ্ছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সত্যতা মেলেনি।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে সচেতনতার জন্য ঝিকরগাছার ওসিকে মাইকিং করতে বলেছি। যশোরে কোথাও রোহিঙ্গা কিংবা ছেলেধরার কোনো ঘটনা ঘটেনি। গুজব না ছড়িয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সন্দেহজনক কাউকে দেখলেই মারপিট নয়, পুলিশে খবর দিন।