স্বাস্থ্য

জ্বর হলে কি ভাত খাওয়া যায়?

By daily satkhira

February 26, 2017

স্বাস্থ্য ডেস্ক: দুইদিন ধরে সোমার জ্বর। অন্য সবার মতো সোমারও মাঝেমধ্যে জ্বর হয়। জ্বর হলে কিছুটা কষ্ট তো হয়ই। কিন্তু সে কষ্ট মেনে নেওয়া খুব একটা কঠিন নয় সোমার কাছে। জ্বরের কারণে সৃষ্ট শারীরিক কষ্টের চেয়ে বেশি কষ্ট হয় জ্বরের সময়কার খাবারের মেনু নিয়ে। এ অবস্থায় সোমাকে সাগু, বার্লি, দুধ, পাউরুটি ছাড়া কোনো কিছুই খেতে দেওয়া হয় না। সাধারণ খাবার যেমন, ভাত- মাছ থাকে নিষিদ্ধ খাবারের তালিকায়। মূলত ভাত খাওয়ার ব্যাপারে থাকে বিশেষ আপত্তি। সোমার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। ভাত খেতে দেওয়ার বিষয়টি যে শুধু জ্বরের সময় বন্ধ থাকে তা কিন্তু নয়। জ্বর সেরে ওঠার দুই তিন দিন পর হয়তো ভাত খেতে দেওয়া হয়। জ্বরে ভাত খাওয়া নিয়ে এ ধরনের ঘটনা অনেক পুরোনো। জ্বর হলে ভাত খাওয়া যাবে না, ভাত খেলে জ্বর বেড়ে যাবে- এমন একটি  ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে অনেক দিন থেকে। আর এই ভুল বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে জ্বরের রোগীকে খেতে দেওয়া হয় রুটি কিংবা কিছু স্বাদহীন খাবার।  দেখা যায়, সুস্থ অবস্থাতেই যে খাবারগুলো মানুষের মুখে রোচে না, অসুখের সময় বিস্বাদ মুখে সেই খাবারগুলো কষ্ট করে অযথা পেট পুরতে হয়। অথচ যেকোনো সাধারণ খাবার এবং ভাত চাইলেই কিন্তু রোগী খেতে পারে। কিন্তু ভুলের বশবর্তী হয়ে রোগীকে ভাত খাওয়া থেকে বিরত রাখা হয় অথবা রোগী নিজেই ভাত খাওয়া থেকে বিরত থাকে। জ্বরের সময় রোগীর পথ্য বলে বিবেচিত সাগু, বার্লি, রুটি ইত্যাদি খেলে যে জ্বর উপশমে বিশেষ কোনো সম্পর্কই নেই। ভাত খেলে জ্বর বাড়ে এ ধারণাও ভুল। রোগজীবাণু আক্রমণে  কিংবা শারীরিক কোনো অসুবিধায় অস্থিমজ্জা থেকে পাইরোজেন নামক এক ধরনের পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই পাইরোজেন রক্তের মাধ্যমে বাহিত হয়ে তাপ নিয়ন্ত্রক হাইপোথ্যালামাসে পৌঁছে। সাধারণভাবে হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে। অসুস্থ অবস্থায় পাইরোজেন হাইপোথেলামাস এর তাপ নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে বেড়ে যায়। এটাই হচ্ছে জ্বর। অনেক রোগের উপসর্গ হিসেবে দেখা দেয় এই জ্বর। জ্বরে শরীরের বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যায়। প্রতি ডিগ্রি তাপমাত্রার জন্য বিপাকক্রিয়া শতকরা সাত ভাগ বেড়ে যায়। বিপাক ক্রিয়া বেড়ে গেলে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদাও বেড়ে যায়। শক্তির এই চাহিদা পূরণের জন্য চাই পুষ্টিকর খাবার। জ্বর হলে শুধু ভাত কেন, অন্য সব পুষ্টিকর খাবারও রোগীকে দেওয়া উচিত। তবে কয়েকটি রোগে বিশেষ করে লিভার, কিডনি, হার্টের অসুখ ও ডায়াবেটিসে কিছু কিছু খাবার গ্রহণের ব্যাপারে খানিকটা বিধিনিষেধ রয়েছে। এ ছাড়া টাইফয়েড জ্বরে কম করে আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণের ব্যাপারে খানিকটা বিধিনিষেধ রয়েছে। এ ছাড়া টাইফয়েড জ্বরে কম করে আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণের কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণ জ্বরে ভাত খেতে কোনো সমস্যা নেই। এভাবে জ্বর হলেই ভাত খেতে না দেওয়ার বিষয়টি কোনোভাবেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। জ্বরে ভাত খেলে কোনো ক্ষতিও হয় না।