বিদেশের খবর: ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের নির্বাচনী শোডাউনে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কলকাতায় ওই শোডাউনকে ঘিরে বিজেপির ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠনের সংঘর্ষ হয়। শহরে একাধিক মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঘটনা সামলাতে পুলিশকে লাঠিপেটাও করতে হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা ঘটে। আগামী ১৯ মে দেশটির লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে কলকাতায় ওই ঘটনা ঘটল।
জানা যায়, বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কলকাতার ধর্মতলা থেকে শুরু হয় অমিত শাহের শোডাউন। এরপর তা ওয়েলিংটন, বউবাজার ক্রসিং, কলেজ স্ট্রিট, বিডন স্ট্রিট হয়ে সিমলা স্ট্রিট হয়ে বিবেকানন্দের বাসস্থানে পৌঁছনোর কথা ছিল। কিন্তু কলেজ স্ট্রিটের কাছে যেতেই ছন্দপতন ঘটে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে বিজেপির শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) ও তৃণমূল কংগ্রেস ছাত্র সংগঠনের (টিএমসিপি) মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ফলে কার্যত সেখানেই থমকে যায় ওই শোডাউন।
কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ-এই দুই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থনেই মূলত আজ কলকাতায় ‘রোড শো’তে অংশ নেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। হুড খোলা গাড়িতে অমিত শাহ ছাড়াও ছিলেন বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, রূপা গাঙ্গুলী, মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, চন্দ্র কুমার বোস সহ দলের শীর্ষ নেতারা।
অমিত শাহের গাড়িবহরের আগে ও পরে অসংখ্য মানুষ শুধু ‘জয় শ্রীরাম’, ‘মোদি-মোদি’, ‘ভারত মাতা কি জয়’, বলে স্লোগান দিতে থাকেন। ওই সময়ে রাস্তার দুই ধারের বহুতল ভবন থেকে গাঁদা ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে দলের নেতাকে বরণ করা হয়। অমিত সহ অন্য নেতারাও কখনও হাত নাড়িয়ে, হাত জোড় করে মানুষের অভিবাদন গ্রহণ করেন। ওই সময় সাংবাদিকদের অমিত শাহ বলেন, ‘আপনারা যে মানুষের ঢল দেখছেন-তা হল মানুষের সমর্থন ও ভালবাসা। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই রাজ্যের পরিবর্তন চায়।’
কিন্তু সন্ধ্যা গড়িয়ে আসতেই ওই শোভাযাত্রা যখন বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে কলেজ স্ট্রিটে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আসে, ঠিক তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপির সমর্থকরা অমিত শাহকে কালো পতাকা দেখানোর চেষ্টা করতে থাকে এবং বিজেপি, মোদি ও অমিত শাহ বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। কিন্তু সেই বিক্ষোভের আঁচ অমিত শাহের কানে না পৌঁছায় বা কালো পতাকা যাতে অমিত শাহের চোখে না পড়ে তা ঠেকাতে বিজেপির শাখা সংগঠন এবিভিপির সদস্যরা উচ্চস্বরে সাউন্ড সিস্টেম (ডিজে) বাজাতে থাকে। এছাড়া বিজেপির বড় বড় ব্যানার দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা হয়। দুই পক্ষের এই প্রতিবাদ পাল্টা প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে পানির বোতল, মাটির চায়ের ভাঁড় ছোড়া হয় বলে অভিযোগ উঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকেও ইট ছোড়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এক সময় দুই পক্ষের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় সংঘর্ষ। বিক্ষোভকারীদের হঠাতে পুলিশকেও লাঠিপেটা করতে হয়। রণক্ষেত্রে রূপ নেয় কলেজ স্ট্রিট-বিধান সরণী চত্ত্বর।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শুরু হওয়া সেই সংঘর্ষের আঁচ ছড়িয়ে পড়ে পাশ্ববর্তী বিদ্যাসাগর কলেজের সামনেও। কলেজের ভেতর থেকে বিজেপি বিরোধী স্লোগান দেওয়ার সময় বিজেপির সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একসময় দুই পক্ষের সাথেই সংঘর্ষ বাধে। একে অপরকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। বিদ্যাসাগর কলেজের ফটকে থাকা একাধিক মোটর সাইকেলে অগ্নিসংযোগ করা হয় বলেও অভিযোগ উঠে।