রাজনীতির খবর: কেন্দ্রীয় সম্মেলনের একবছর পর ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার (১৩ মে) সংগঠনের সভাপতি রেজোয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত কমিটির তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কমিটি ঘোষণার পরপরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পদবঞ্চিতরা। এসময় নতুন কমিটির বিরুদ্ধে মিছিল করে মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে তাতে হামলা চালায় পদপ্রাপ্তরা।
এই ঘটনার দুইদিন পর শোভন-রাব্বানীকে গণভবনে তলব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া বিতর্কিতদেরকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে গণভবনের একটি সূত্র।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত বিবাহিত, অছাত্র, হত্যা ও মাদক মামলার আসামিদেরকে চিহ্নিত করে তাদের পদ বিলুপ্তির আওতায় এনে ত্যাগীদেরকে পদায়নের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।
এবিষয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি বলেন, নেত্রীর নির্দেশই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত। ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত করতে কাজ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এজন্যে রিপোর্ট আসা অব্দি সবাইকে একুট ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন শোভন।
এদিকে নিজের বিরুদ্ধে আগেই বিবাহিতের অভিযোগ ওঠার বিষয়ে কিছু বলেন নি তিনি।
এদিকে সোমবার (১৩ মে) কমিটি ঘোষণার পরে মঙ্গলবার দুপুরে বিতর্কিত এই কমিটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে না ভাঙলে গণপদত্যাগ করার হুমকি দেন পদবঞ্চিত নেতারা।
এসময় ছাত্রলীগের শামসুন্নাহার হলের সভাপতি নিপু ইসলাম তন্বী বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘বিতর্কিত’ ওই কমিটি ভেঙে না দিলে বিক্ষোভ, অনশনসহ আমরা গণপদত্যাগ করবো।
রোকেয়া হলের সভাপতি লিপি আক্তার বলেন, তদন্ত কমিটি মানি না। যারা হামলা করেছে তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শোভন-রাব্বানীর প্রত্যক্ষ নির্দেশে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। আবার তারা হামলাকারীদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছে। আমরা বিশ্বাস করি যদি বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে সঠিক তথ্য যায়, তাহলে তিনি বিতর্কিত এ কমিটি ভেঙে দেবেন।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে পদবঞ্চিতদের সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা হলেন নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, আইন বিষয়ক সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পল্লব কুমার বর্মণ।
হামলার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির লক্ষ্যে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
কমিটির দুই সদস্য আল নাহিয়ান খান জয় ও ফুয়াদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পদবঞ্চিতদের ওপর হামলার ঘটনায় তারাও ক্ষুব্ধ।
আইন সম্পাদক ফুয়াদ হাসান বলেন, কারা হামলা করছে তার খোঁজ নিচ্ছি। আহতদের সঙ্গেও কথা বলব। হামলাকারীদের বিষয়ে আমরা কঠোর। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের নাম তদন্ত প্রতিবেদন আকারে জমা দেয়া হবে।
মঙ্গলবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে আসেন শোভন-রাব্বানী। ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সাংবাদিকদের বলেন, বৃহত্তর এই সংগঠনে পদ প্রত্যাশী রয়েছে এক থেকে দুই হাজার কর্মী। কিন্তু কমিটি দিয়েছি ৩০১ সদস্যের। ত্যাগী কর্মীদের আসলে পদ দ্বারা সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। কমিটিতে যাদের নিয়ে বিকর্ত আসছে তাদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে জানিয়ে শোভন বলেন, প্রমাণ হলে তাদের পদগুলো শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যদের মূল্যায়ন করা হবে। সোমবারে মধুর ক্যান্টিনে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ সকলের প্রাণের সংগঠন। এর রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের।
পদবঞ্চিতদের বিষয়ে তিনি বলেন, যারা পদ পায়নি, তাদের রাজনীতি থেমে গেছে এমনটি ভাবার কিছু নেই। তাদের (পদবঞ্চিতরা) প্রতি আহ্বান জানাব ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেষ্ট থাকবে। কিছুদিন পরে এই কমিটি বর্ধিত করে আরও কিছু-যারা বেশি যোগ্য, যাদের পদ দিতে পারি নাই তাদের কমিটিতে আনব। বিচার বিশ্লেষণ করে যে সকল ত্যাগী এবং যোগ্যরা বাদ পড়েছে, নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে কিছু পদ যদি বাড়ানো যায়, সেই বিষয়ে আমরা কথা বলব।
গোলাম রাব্বানী বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, আমরা আজকেই তদন্ত কমিটি করে দিচ্ছি। অভিযোগকারীরা দালিলিক তথ্য কমিটির কাছে দেবে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে তারাও প্রমাণ করবে যে এই অভিযোগ মিথ্যা। সেই তদন্ত প্রতিবেদন ‘পাবলিকলি’ প্রকাশ করব।
পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ ও তাদের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি বলেন, অনেকে সাবেক কমিটিতে পোস্টেড ছিল। ৩০১ জনের মধ্যে ১৩৩ জন সরাসরি বিগত কমিটিতে কেন্দ্রের পোস্টেড ছিল। আমাদের সাবেক নেতৃবৃন্দ ২০০ জনের তালিকা দিয়েছিল। এর মধ্যে সরাসরি ৯০ জনকে নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১৭৪ জন সাবেক নেতাদের পছন্দের। সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি যোগ্যতার মূল্যায়ন করার জন্য। বিগত কোন কমিটিতে এত জনকে নেয়া হয়নি। তারা মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল। সেখানে জুনিয়ররা ছিল। এক ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রাবণী-দিশা আহত হয়েছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলেছি, দিশা ছাড়া কেউ আহত হয়নি। প্রসঙ্গত, সম্মেলনের এক বছর পর সোমবার ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এর পরপরই পদবঞ্চিত ও কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়ায় বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে নারী নেত্রীদের ওপর হামলা হয়।
পরবর্তীতে সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন চলমান অবস্থায় আবারও হামলা করে নবগঠিত কমিটিতে পদপ্রাপ্ত একাধিক নেতা। এসময় অন্তত ১৫ জন আহত হয়। শ্রাবণী, দিশা ও ডাকসুর ক্রীড়া সম্পাদক গুরুতর আহত হয়।
তবে হামলার সাথে জড়িতদের প্রতি হুশিয়ারি দিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, যারা এই হামলা করেছে, তারা চরম অপরাধ করেছে। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।