শ্যামনগর

পানি আছে সুপেয় পানি নেই..

By Daily Satkhira

February 27, 2017

গাজী আল ইমরান, শ্যামনগর : পানি ছাড়া প্রাণ বৈচিত্রের অস্বিত্ব কল্পনা করা যায় না। যার অপর নাম বলা হয় জীবন। তাই জীবন ধারণের জন্য মানুষকে সর্বপ্রথম পানির কথা চিন্তা করতে হয়। বাস্তবে দেখা যায় শহরাঞ্চলে সুপেয় পানির ব্যবস্থা অনেকটা নিশ্চিত হলেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্জলের উপজেলা ও গ্রামগুলো রয়েছে সে সুবিধা থেকে বঞ্চিত। সেরকম একটি উপজেলা হল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। চারিদিকে পানি আর পানি। কিন্ত আসলেই পান যোগ্য নই। প্রতিদিনই দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে না হতেই গ্রামের মেঠো পথ ধরে পানি আনতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন গৃহবধুরা। অনেক গ্রামের নারী পুরুষ ৪ থেকে ৫ কিঃমিঃ দূর থেকে পানি সংগ্রহ করে। গাবুরা, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের অনেকেই ট্রলারযোগে এলাকার অন্য ইউনিয়ন থেকে পানি সংগ্রহ করে। হিসাব করলে দেখা যায় একজন মানুষ তার শ্রম দিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যে এক কলস পানি নিয়ে আসে ঐ সময়ে তার  শ্রমের মূল্য আসে প্রায় পঞ্চাশ টাকা অর্থাৎ এক কলস পানির দাম পঞ্চাশ টাকা। উপজেলার জনসংখ্যা ৩১৩৭৮১ (সূত্র-উপজেলা প্রশাসন ওয়েব সাইট) জনের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ দৈনিক সুপেয় পানি পান করতে পারে না। উপজেলার অধিকাংশ নদী-নালা মৃত প্রায়। শুকিয়ে গেছে অধিকাংশ এলাকার আবাদ মহলের বড় বড় খাল। এলাকার  নলকুপের পানিতে লবন ও আয়রনের পরিমান একেবারে কম তা বলা যাবেনা।সুতরাং অধিকাংশ নলকূপের পানি পানযোগ্য হয়না। অধিকাংশ মানুষ পুকুরের পানি পান করে কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে মিঠা পানির পুকুরের সংখ্যাও খুব কম। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলা আঘাত হানার পর সুপেয় পানির অভাব গাবুরা-পদ্মপুকুরে আরও প্রকট হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংগঠন পুকুর ক্ষনন ও পুনঃক্ষননের কাজ করলেও সঠিক পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা এবং মনিটরিং-এর অভাবে কাজগুলি হয়েছে নিতান্ত দায়সারা মাত্র। ফিল্টার কীভাবে ব্যবহার করতে হবে, কত দিন পর পরিবর্তন করতে হবে, এটি ঠিকমতো কাজ করছে কি না, ফিল্টারে জমা হওয়া আর্সেনিক কোথায় ফেলতে হবে এসব পর্যবেক্ষণ করা বা নজরদারির কোনো ব্যবস্থা নেই। সুতরাং অনেক ফিল্টারই বিকল হয়ে আছে। উপজেলার যাবপুর গ্রামের কিছু ছাত্ররা মিলে দুটি পুকুর নেট দিয়ে ঘিরে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে। এর জন্য সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল। এখান থেকে প্রতি নিয়ত প্রায় ২০০ পরিবার তাদের পানির সংকট মিটাতে সক্ষম হয়। এ এলাকার কিছু মানুষের দুঃখ লাঘব করতে সক্ষম হয়েছে এ এলাকার যুবকেরা। উপজেলার সদরের কাশিপুর গ্রামে বসবাসরত আদিবাসি মুন্ডা সম্প্রাদয়ের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায় পানির জন্য হাহাকারের শেষ নেই তাদের।তাদের সাথে কথা বলতেই প্রথমেই তাদের মুখে ফুটে ওঠে সুপেয় পানির কষ্ঠের কথা। তীব্র দাবদাহে গরমের মাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন তারা অসহ্য হয়ে উঠে। গ্রামের মেঠো পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যে পরিমাণ পানি আনা যায়,তার চাইতে শরীরে ঘাম যেন আরো বেশি বের হয় নারীদের। ভোরের সূর্য উকি দেওয়ার আগেই পানি আনতে যায় নারীরা কিন্তু পৌঁছুতে সামান্য দেরি হলেই সব মিলিয়ে তাদের দুই থেকে তিনটি মূল্যবান ঘণ্টা পেরিয়ে যায় পানি আনার কাজে। এ যেনো ছকে বাঁধা এক সংগ্রামী জীবন। সরেজমিনে শ্যামনগর উপজেলার ২১৬ (সুত্র-উপজেলা প্রশাসন ওয়েব সাইট) টি গ্রামের অধিকাংশ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় জনসংখ্যা অনুপাতে মিঠা পানির পুকুর নেই। চৈত্রমাস আসতে না আসতেই ..সুপেয় পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। এখানকার ৮০ শতাংশ মানুষের রোগ এবং মৃত্যুর প্রথম এবং প্রধান কারণ সুপেয় পানির অভাব। দূষিত পানি পান করে প্রতিবছর শত শত মানুষ দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। সচেতন এলাকাবাসী মনে করেন, জনসংখ্যানুপাতে প্রতি ওয়ার্ডে মিঠা পানির পুকুর খনন এবং প্রয়োজনমত বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা হলে উপজেলার মানুষ সুপেয় পানির সংকট থেকে রেহাই পেতে পারে।