বিদেশের খবর: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুক্তরাজ্য সফরের প্রতিবাদে লন্ডনের রাজপথে নেমে এসেছে হাজার হাজার মানুষ। লেবার পার্টি ও গ্রিন পার্টিসহ বিভিন্ন ব্যানারে তারা অংশ নিচ্ছেন বিক্ষোভে। ভিন্ন ভিন্ন বিষয়কে প্রতিবাদের উপজীব্য করেছে রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীরা। কেউ মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবাদী কিংবা পরিবেশবৈরী দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিবাদ করছেন, কেউ সরব হয়েছেন পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে। কেউবা আবার তার স্বাস্থ্যনীতি কিংবা গর্ভপাতবিরোধী মনোভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের আমন্ত্রণে গত বছরের শুরুর দিকেই রাষ্ট্রীয় সফরে লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল ট্রাম্পের। সম্ভাব্য সফরের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ লন্ডনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। বিক্ষোভের মুখে ট্রাম্প সেবার যুক্তরাজ্য সফর বাতিল করলেও এ বছর ৩ মে (সোমবার) তিনি স্ত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে লন্ডনে পৌঁছান। তবে ৩ দিনের এই রাষ্ট্রীয় সফর চলাকালেই সেখানে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মঙ্গলবার সেন্ট্রাল লন্ডনের ট্রাফাল্গার স্কয়ারে বিক্ষোভকারীরা উচ্চস্বরে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে। ড্রাম বাজিয়ে এবং প্ল্যাকার্ড নাড়িয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে তারা। আয়োজকদের একাংশ ওই বিক্ষোভকে ‘কার্নিভাল অব রেজিসটেন্স’ নাম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রধান বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিনও বিক্ষোভে যোগ দেন।
জরিপ বলছে, যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কাছে সবচেয়ে অপছন্দের বিদেশি নেতাদের অন্যতম ট্রাম্প। ইউগভের এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২১ শতাংশ ব্রিটিশ ট্রাম্প সম্পর্কে ইতিবাচক মত দিয়েছেন। নারীদের মধ্যে এই হার আরো কম, মাত্র ১৪ শতাংশ। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানায়, বিক্ষোভকারীরা বাসা থেকে বানিয়ে আনা প্ল্যাকার্ডকেই প্রতিবাদের হাতিয়ার করেছিলেন। ‘ট্রাম্প বাইরে থাকুন, নিজেদের রাজনীতি গুছিয়ে নিতে আমরা নিজেরাই যথেষ্ট সক্ষম’ ‘আমাদের স্বাস্থ্য নীতি থেকে তোমার দখল সরাও’, ‘মেলানিয়াকে মুক্তি করো’সহ বিভিন্ন প্রতিবাদী শ্লোগান ছিল সেইসব প্ল্যাকার্ডে।
একজন শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার ব্যক্তির হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিলো ‘আমার সামনে এসে কথা বলো।’ বিক্ষোভকারীদের একজন আনা ফেন্টোন বলেন, ‘ট্রাম্প একজন অজ্ঞ, ৭০ বছরের মানুষ যিনি সকল সুযোগ সুবিধার মধ্যে জীবন-যাপন করেছেন। আমি এই বিক্ষোভকে সমর্থন করছি কারণ ট্রাম্পের ভাষা এবং নীতি আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পবিরোধী জমায়েত এবারই প্রথম নয়। তবে এবার ত্রফালগার স্কয়ারের এই বিক্ষোভ কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নিয়ে হাজির হয়েছে। পশ্চিমের অংশটি জলবায়ু নিয়ে সোচ্চার। দক্ষিণের অংশে শান্তি ও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন চলছে। বাকিদের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের অংশ কিংবা নারীদের গর্ভপাত অধিকারের আন্দোলন। এছাড়াও ইহুদি ও ফিলিস্তিনিদের নিয়েও পৃথক ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধ চাই না শীর্ষক একটি অংশ এসে আরেকটি ব্লকে যোগ দেয় যার নাম ছিলো ‘ব্রেক্সিট ও ট্রাম্প সমান, দুজনের বিরুদ্ধেই আন্দোলন চলুক’। কানাডীয় হাই কমিশনের ছায়ায় ‘সেফ টু ইট ফাউল’ ব্লকেও জড়ো হয় বহু মানুষ।
ট্রাম্পের সফরের দ্বিতীয় দিনেই এই বিক্ষোভ শুরু হয়। ডাউনিং স্ট্রিটের খুবই কাছেই অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। মার্কিন শিক্ষার্থী অ্যাম্বার ম্যাকনিউ বলেন, এখানে এসে তিনি ও তার বন্ধু অ্যালেক্স জনগণের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার ক্ষেত্রে মানসিকভবে অনুপ্রাণিত বোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা যেমন আন্দোলন দেখি এটা তেমন নয়। এখানে বিভিন্ন গোষ্ঠী একধারায় মিলিত হয়েছে। কমিউনিস্টরা থেকে শুরু করে গর্ভপাত অধিকারকর্মীরা সবাই এক কাতারে মিলেছেন’।
গ্রিন ও লেবার পার্টির ব্যানারে প্রতিবাদে যোগ দেওয়া বিক্ষোভকারীদের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের অবয়বসম্বলিত টয়লেট পেপার বিক্রি করা হয়। একজন বিক্ষোভকারী ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বলছিলেন, ভাই ও বোনেরা, আমার ৫ টাকায় পাচ্ছেন ৩টি টয়লেট পেপার।