বিদেশের খবর: পশ্চিমবঙ্গে মমতা দাবি মানার পরেও ধর্মঘট চালাবেন ডাক্তাররা
বিদেশের খবর: ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী সে রাজ্যের ধর্মঘটী চিকিৎসকদের প্রায় সব দাবি মেনে নিলেও আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন।
মমতা ব্যানার্জী তার কঠোর অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা নমনীয় হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সংক্রান্ত দাবীগুলি মেনে নিয়ে কাজে যোগ দেয়ার আবেদন করেন।
তিনি এটাও ঘোষণা করেন যে ধর্মঘটে যোগ দেয়ার কারণে কারও বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
পাঁচ দিন ধরে চলতে থাকা ধর্মঘট এবার শেষ করে ডাক্তারদের কাজে ফেরার আবেদন জানান তিনি।
তবে চিকিৎসকরা তাদের দাবীতে অনড়, যে মুখ্যমন্ত্রীকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে ধর্মঘটী ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে মমতা ব্যানার্জী ঘোষণা করেন, “নিরাপত্তা সংক্রান্ত যা যা দাবী ছিল ডাক্তারদের, সবগুলোই মেনে নিচ্ছে সরকার। কলকাতার প্রতিটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একেকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারের নেতৃত্বে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ মজুত থাকবে। এছাড়াও যদি ওদের আরও কোনও দাবী থাকে, সেটাও মেনে নেব।”
“কিন্তু একটাই আবেদন, ৫-৬ দিন হয়ে গেছে, এবার কাজে ফিরুন আপনারা” – বলেন তিনি।
লক্ষ লক্ষ মানুষ সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা উল্লেখ করে তিনি জানান চিকিৎসা না পাওয়ায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে সরকারি হাসপাতালগুলিতে।
ক’দিন আগে এস.এস.কে.এম. হাসপাতালে গিয়ে ধর্মঘটী ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে যে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জী, সেখান থেকে শনিবার অনেকটাই নমনীয় হয়েছেন তিনি।
সেদিন ধর্মঘটী ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
তবে শনিবার মিজ ব্যানার্জী বলেন, “সরকারের হাতে জরুরি পরিষেবা চালু রাখার আইন রয়েছে, যা দিয়ে বেশ কয়েকটা রাজ্য আগে চিকিৎসক ধর্মঘট বা নার্সদের ধর্মঘট বানচাল করেছে। কয়েক ঘণ্টার প্রতীকী ধর্মঘট করলেও এই আইন ব্যবহার করেছে অনেক রাজ্য। ধর্মঘটের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখি। তাই ওসব কিছুই করব না। জুনিয়র ডাক্তারদের বয়স কম। আমি চাই না ওদের ক্যারিয়ারে কোনও কালো দাগ পড়ুক।”
মুখ্যমন্ত্রী শুক্র আর শনিবার ধর্মঘটী ডাক্তারদের আলোচনায় আসার বার্তা দিয়েছিলেন কর্মকর্তা এবং সিনিয়র চিকিৎসকদের মাধ্যমে।
কিন্তু দুপুরেই আন্দোলনরত জুনিয়ার ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন যে সচিবালয়ে গিয়ে কোনও বৈঠক তারা করবেন না। মুখ্যমন্ত্রীকেই হাসপাতালে এসে আলোচনায় বসতে হবে।
তারা ঘোষণা করেন যে রাজ্য সচিবালয় নবান্ন ভবনের বন্ধ ঘরে কয়েকজন মাত্র প্রতিনিধি গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করাটা কতটা নিরাপদ এবং নিরপেক্ষ হবে, তা নিয়ে তাদের সন্দেহ রয়েছে।
কিন্তু তারপরেও আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা ঘোষণা করেন – বেশ ক’জন জুনিয়ার ডাক্তার কাজে যোগ দিতে চাইছেন, এবং তাদের সবধরনের সুরক্ষা দেবে সরকার।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের একটা অংশ চাইছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ধর্মঘট শেষ করতে। সিনিয়র চিকিৎসকরাও চাইছিলেন যে এবার বোধহয় ধর্মঘট শেষ করাই উচিত।
কিন্তু বেশীরভাগ ধর্মঘটী ডাক্তারদের বেশীরভাগ চান নি নবান্ন ভবনে গিয়ে আলোচনায় বসতে।
দুপুরের ওই বৈঠকের আগে ধর্মঘটী চিকিৎসক, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন দেশের সব থেকে বড় চিকিৎসক সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. শান্তনু সেন।
তিনি ধর্মঘটী ডাক্তারদের সঙ্গে দেখা করে বোঝাবার চেষ্টা করেন যাতে তারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রাজী হয়ে যান।
সোমবার রাতে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যু এবং চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলে দুই জুনিয়র ডাক্তারকে মারধর করা হয়।
দুটি ছোট ট্রাকে করে মৃত রোগীর পাড়া-প্রতিবেশীরা লাঠি, ইট নিয়ে হাসপাতালে এসে তাণ্ডব চালায়।
তাদের ছোঁড়া ইঁটের ঘায়ে পরিবহ মুখার্জী নামের একজন ডাক্তারের মাথার খুলিতে চোট লাগে।
সেদিন রাত থেকেই ওই হাসপাতালে টানা কর্মবিরতি চলছে।
তবে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে রাজ্যের অন্য সব সরকারি হাসপাতালেই।
কয়েকদিন শুধু পশ্চিমবঙ্গে ধর্মঘট চলার পরে শুক্রবার থেকে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে গোটা দেশেই।
প্রথমদিন ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই চিকিৎসকরা নানা পন্থায় বিক্ষোভ, প্রতিবাদ দেখিয়েছেন। আর দুদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ধর্মঘট না মিটলে সোমবার সারা দেশে চিকিৎসক ধর্মঘট ডেকে রেখেছে ভারতের ডাক্তারদের সবথেকে বড় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন।