নিস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে চলছে প্রকাশ্য জুয়ার আসর হাউজি। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার থেকে রোববার পর্যন্ত সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই জুয়া। প্রতিদিন চার শ’ থেকে পাঁচ শ’ জুয়াড়ি এতে অংশ নিচ্ছে। অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা বন্ধের কোনো উদ্যোগই নেয়া হচ্ছে না।
যদিও সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামালের নিকট এবষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্টেডিয়ামের হাউজি খেলার বিষয়ে অভিযোগ পেলে আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
সম্প্রতি শহরের প্রাণকেন্দ্র লাবনী মোড়ে ফ্রেন্ডস ড্রামাটিক ক্লাব থেকে দিন দুপুরে জুয়া খেলার সময় ২২ জুয়াড়িকে আটক করে র্যাব। তাদের প্রত্যেককে ১৫ দিন থেকে এক মাস করে কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডি থেকে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে পোস্টও দেয়া হয়। সেখানে বহু মানুষ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের হাউজি খেলা বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। অথচ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে চলমান জুয়া বন্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। দীর্ঘদিন ধরেই চলছে এই জুয়া। তারা এই জুয়া খেলার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
স্টেডিয়াম সংলগ্ন শহরের পলাশপোল এলাকার অধিবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জুয়াড়িদের কারণে এলাকার পরিবশে নষ্ট হচ্ছে। শহর এলাকায় জুয়াড়িদের বাড়িতে বাড়িতে চলছে অশান্তি। বিশেষ করে জুয়ার টাকা সংগ্রহ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে গোলমাল লেগেই আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা উপজেলার বাসিন্দা একজন জুয়াড়ি বলেন ‘আমি খেলা বন্ধ করতে চাই। আমার পরিবারের শান্তি শিঁকেয় উঠেছে। আমার স্ত্রী আমার ওপর খড়গহস্ত হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এমনই নেশা যে তা বন্ধ করতে পারছিনা। আপনারা লেখালেখি করে বন্ধ করতে পারলে আমি ও আমার পরিবার খুশী হবো’।
সাতক্ষীরা পলাশপোলের অধিবাসীরা অনেকেই এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, আমাদের এলাকার পুরো পরিবেশটাই নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে এই হাউজি নামক জুয়ার আসর চালিয়ে। স্টেডিয়াম প্রকৃত খেলাধূলার স্থান। সেখানে ফুটচবল-ক্রিকেট বা অন্যান্য মাঠে খেলার টুর্নামেন্ট বা লীগ আয়োজন না করে জুয়ার আসর বসলে আশেপাশের কিশোর-যুবকরা সহজেই বিপথগামী হবে, মাদকাসক্ত হবে। ”
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০, ৩০, ৫০, ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকায় হাউজির টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে। জুয়া খেলা নির্বিঘœ করার জন্য কয়েকজন কর্মচারি নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের নিয়মিত বেতনও দেওয়া হচ্ছে। রাতভর জুয়াড়িদের আপ্যায়ন ও দেখভাল করেন নিয়োগকৃত এসব কর্মচারি। অন্যদিকে, শহরের একটি অংশকে প্রভাবশালীদের সন্তুষ্ট রাখতে তাদের জন্য প্রতিদিন থাকে ফ্রি শিটে হাউজি খেলার ব্যবস্থা।
এদিকে, সাতক্ষীরা শহরে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগীদের ধারনা জুয়ার টাকা জোগাড় করতে এসব চুরি সংঘটিত হয়েছে। জুয়ার কারণে এলাকার শিশু কিশোরদের মনোযোগ লেখাপড়া থেকে বিচ্যুত হচ্ছে বলেও জানান গ্রামবাসী। বিভিন্ন পরিবারের গৃহবধূরা জানান তাদের স্বামী বাড়ির গয়নাও চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে । দোকানে বন্ধক দিচ্ছে। কিছুদিন পর বিক্রি করে দিচ্ছে। এভাবে পরিবারের সম্পদ তো যাচ্ছেই। জুয়াড়িরা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের প্রতি উদাসীন। সংসারে শান্তি বলে কিছুই থাকছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে প্রতিদিন জুয়া থেকে অর্জিত টাকা আয়োজকরা নিজেদের মতো গ্রহন করে অন্যদের ম্যানেজ করার মতো টাকা ছড়িয়ে দেয়। এতে প্রশাসন ও পুলিশের কিছু অসাধু লোকজন আইন শৃংখলা বাহিনীর কোনো না কোনো সদস্য, মিডিয়াকর্মী নগদ টাকায় লাভবান হচ্ছেন। ফলে তারা জুয়া বন্ধে এগিয়ে আসছেন না।
তবে এ বিষয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে নাগরিক আন্দোলন মঞ্চ, সাতক্ষীরার সভাপতি এড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, এভাবে প্রকাশ্যে আবাসিক এলাকার মধ্যে জুয়া খেলার কারণে সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। পারিবারিক শান্তি হারিয়ে যাচ্ছে। এলাকায় চুরি ছিনতাই বেড়ে যাচ্ছে। শিশু কিশোরদের লেখাপড়াও বিঘিœত হচ্ছে। অবিলম্বে এই অনৈতিক ও অসামাজিক কাজ বন্ধ হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।