বিদেশের খবর: ভারতের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণে দায়ের করা মামলায় চার বাংলাদেশিসহ ১৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। ছয়জনের সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুই মহিলা এবং আসামের এক ছাত্রের ছয় বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল।
বাকিদের আট বছরের জেল দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক। যাদের একাধিক সাজা হয়েছে, তাদের সব সাজা একসঙ্গে চলবে। ইতোমধ্যে যারা জেল হেফাজতে কাটিয়েছেন, মূল সাজা থেকে সেই হেফাজতের মেয়াদ বাদ যাবে।
দোষীসাব্যস্ত ১৯ জনের মধ্যে চার বাংলাদেশিকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আদেশে, সাজা শেষে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে। ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা- এনআইএর তথ্য অনুযায়ী ওই চার বাংলাদেশি হলেন- শেখ রামতুল্লা ওরফে সাজিদ ওরফে বোরহান শেখ; সাদিক ওরফে সুমন ওরফে তরিকুল ইসলাম ওরফে রায়হান শেখ; লিয়াকত আলী প্রামাণিক ওরফে রফিক ওরফে মোহাম্মদ রুবেল এবং হাবিবুর রহমান ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাবিরুর ইসলাম ওরফে জাফর।
অভিযুক্তদের আইনজীবী ফজলে আহমেদ খান জানান, এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে হাইকোর্টে যাবেন কি-না, পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। অন্যদিকে এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছিলাম। তবে আদালত যা রায় দিয়েছে, তা মাথা পেতে নেয়া উচিত।
আনন্দবাজার জানায়, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর অষ্টমীর দিন বর্ধমানের খাগড়াগড়ে একটি বাড়িতে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শাকিল গাজি নামে এক ব্যক্তির। গুরুতর আহত হন করিম শেখ নামে আরও একজন। প্রথমে জেলা পুলিশ পরে সিআইডি এবং সবশেষে ঘটনার তদন্তভার নেয় এনআইএ।
ঘটনার পেছনে বাংলাদেশের জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নাম জড়ায়। বিস্ফোরণের পর ওই বাড়ি থেকেই গ্রেফতার হন গুলসানা বিবি ওরফে রাজিয়া এবং আলিমা বিবি নামে দুই মহিলা।
তদন্তে নেমে এনআইএ মোট ৩১ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ১৯ জন সম্প্রতি বিচারকের কাছে নিজেদের দোষ স্বীকার করেন। সেই ১৯ জনের এদিন সাজা ঘোষণা করে নগর ও দায়রা আদালত। মামলার চার্জ গঠন ও বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৫ সাল থেকে।
এনআইএ সূত্রে জানা যায়, মোট ৮০০ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পেছনে থাকা নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি-এর যে শীর্ষ নেতা কদর গাজি, কওসর ওরফে বোমা মিজান, ডালিম শেখ ও ইউসুফ শেখ এখনও দোষ স্বীকার করেননি। তাই ওই ১২ জনের বিচারপ্রক্রিয়া চলবে।
২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে জেএমবির তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। বোমা মিজান তাদেরই একজন। ওই ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। ওই বছর ২ অক্টোবর কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান জেলার খাগড়াগড় এলাকায় বিস্ফোরণের ওই ঘটনা ঘটে।
দোষীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহিতা, ইউএপিএ, অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়। এছাড়া বাংলাদেশি চারজনের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টেও মামলা রুজু করে এনআইএ। এসব ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্মনিম্ন পাঁচ বছর সাজার কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু দোষীরা সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চাওয়ার আবেদন জানায়। সেই বিষয়টি বিবেচনা করে সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রায় দেয়ার পর বিচারক সিদ্ধার্থ কাঞ্জিলাল বলেন, আপনারা দ্রুত সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসুন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, দোষী ১৯ জনই সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চান বলে জানিয়ে সর্বনিম্ন সাজার আবেদন করেন। তাদের বক্তব্য, সবারই পরিবার ও সন্তান রয়েছে। তাদের প্রতি দায়বদ্ধতা ও কর্তব্য রয়েছে। সেই কারণে তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরতে চান।
শুক্রবার ‘ইন ক্যামেরা’ অর্থাৎ রুদ্ধদ্বার শুনানি হয় আদালতে। দোষী ১৯ জন, সরকারি এবং অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী ছাড়া কাউকে ভেতরে থাকতে দেয়া হয়নি। তবে আদালত সূত্রে খবর, প্রত্যেকের সঙ্গেই বিচারক আলাদা করে কথা বলেন। তখন দোষীরা মূল স্রোতে ফেরা এবং সর্বনিম্ন সাজার আবেদন জানান বিচারকের কাছে।